<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Sri Yoga Center Ashram's Blog - The Bengal flavour of Health Science,art and culture. - Page 47

ভগবান শিবের শতনাম

Spread the love

শিবের ১০৮টি নাম ও তার অর্থ —
১) শিব- কল্যাণ স্বরূপ
২) মহেশ্বর- মায়ার অধীশ্বর
৩) শম্ভু- আনন্দ স্বরূপ যাঁর
৪) পিনাকী- পিনাক অর্থাৎ ধনুক ধারণ করেছেন যিনি
৫) শশীশেখর- মস্তকে চাঁদকে ধারণ করেছেন যিনি
৬) বামদেব- অত্যন্ত সুন্দর স্বরূপ যাঁর
৭) বিরূপাক্ষ- বিচিত্র চোখ যাঁর (শিব ত্রিনেত্রের অধিকারী)
৮) কপর্দী- জটাধারণ করেছেন যিনি
৯) নীললোহিত- নীল ও লাল বর্ণ যাঁর
১০) শংকর- সবার কল্যাণ করেন যিনি
১১) শূলপাণি- হাতে ত্রিশূল যাঁর
১২) খটবাঙ্গি- খাটিয়ায় একটি পা রাখেন যিনি
১৩) বিষ্ণুবল্লভ- বিষ্ণুর অতিপ্রিয়
১৪) শিপিবিষ্ট- সিতুহায়ে প্রবেশ করেন যিনি
১৫) অম্বিকানাথ- দেবী দূর্গার স্বামী
১৬) শ্রীকণ্ঠ- সুন্দর কণ্ঠ যাঁর
১৭) ভক্তবৎসল- ভক্তদের অত্যন্ত স্নেহ করেন যিনি
১৮) ভব- সংসার রূপে প্রকট হন যিনি
১৯) শর্ব- কষ্ট নষ্ট করেন যিনি
২০) ত্রিলোকেশ- তিন লোকের যিনি প্রভু
২১) শিতিকণ্ঠ- সাদা কণ্ঠ যাঁর
২২) শিবাপ্রিয়- পার্বতীর প্রিয়
২৩) উগ্র- অত্যন্ত উগ্র রূপ যাঁর
২৪) কপালী- কপাল ধারণ করেন যিনি
২৫) কামারী- কামদেবের শত্রু, অন্ধকারকে পরাজিত করেছেন যিনি
২৬) সুরসুদন- দৈত্য অন্ধককে যিনি বধ করেছেন
২৭) গঙ্গাধর- যিনি গঙ্গাকে ধারণ করেছেন
২৮) ললাটাক্ষ- ললাটে চোখ যাঁর
২৯) মহাকাল- কালেরও কাল যিনি
৩০) কৃপানিধি- করুণার সাগর
৩১) ভীম- ভয়ঙ্কর রূপ যাঁর
৩২) পরশুহস্ত- হাতে পরশু ধারণ করেছেন যিনি
৩৩) মৃগপাণি- হাতে যিনি হরিণ ধারণ করেছেন
৩৪) জটাধর- জটা রেখেছেন যিনি
৩৫) কৈলাসবাসী- কৈলাসের নিবাসী
৩৬) কবচী- কবচ ধারণ করেছেন যিনি
৩৭) কঠোর- অত্যন্ত মজবুত দেহ যাঁর
৩৮) ত্রিপুরান্তক- ত্রিপুরাসুরকে বধ করেছেন যিনি
৩৯) বৃষাঙ্ক- বৃষ চিহ্নের ধ্বজা রয়েছে যাঁর
৪০) বৃষভারূঢ়- বৃষের উপরে সওয়ার যিনি
৪১) ভস্মোদ্ধুলিতবিগ্রহ- সারা শরীরে ভস্ম লাগান যিনি
৪২) সামপ্রিয়- সামগানের প্রেমী
৪৩) স্বরময়ী- সাতটি স্বরে যাঁর নিবাস
৪৪) ত্রয়ীমূর্তি- বেদরূপী বিগ্রহ করেন যিনি
৪৫) অনীশ্বর- যিনি স্বয়ং সকলের প্রভু
৪৬) সর্বজ্ঞ- যিনি সব কিছু জানেন
৪৭) পরমাত্মা- সব আত্মায় সর্বোচ্চ
৪৮) সোমসূর্যাগ্নিলোচন- চন্দ্র, সূর্য ও অগ্নিরূপী চোখ যাঁর
৪৯) হবি- আহূতি রূপী দ্রব্যের মতো
৫০) যজ্ঞময়- যজ্ঞস্বরূপ যিনি
৫১) সোম- উমা-সহ রূপ যাঁর
৫২) পঞ্চবক্ত্র- পঞ্চ মুখ যাঁর
৫৩) সদাশিব- নিত্য কল্যাণ রূপী
৫৪) বিশ্বেশ্বর- সমগ্র বিশ্বের ঈশ্বর
৫৫) বীরভদ্র- বীর হওয়া সত্ত্বেও শান্ত স্বরূপ যাঁর
৫৬) গণনাথ- গণদের স্বামী
৫৭) প্রজাপতি- প্রজার পালনকর্তা
৫৮) হিরণ্যরেতা- স্বর্ণ তেজ যাঁর
৫৯) দুর্ধর্ষ- কারও চাপের কাছে নত হন না যিনি
৬০) গিরীশ- পর্বতের স্বামী
৬১) গিরীশ্বর- কৈলাস পর্বতে শয়ন করেন যিনি
৬২) অনঘ- পাপরহিত
৬৩) ভুজঙ্গভূষণ- সাপের আভুষণ ধারণ করেন যিনি
৬৪) ভর্গ- পাপনাশক
৬৫) গিরিধন্বা- মেরু পর্বতকে যিনি ধনুক বানিয়েছেন
৬৬) গিরিপ্রিয়- পর্বত প্রেমী
৬৭) কৃত্তিবাসা- গজচর্ম পরিধান করেছেন যিনি
৬৮) পুরারাতি- পুরদের বিনাশ করেছেন যিনি
৬৯) ভগবান- সর্বসমর্থ ঐশ্বর্য সম্পন্ন
৭০) প্রমথাধিপ- প্রমথগণের অধিপতি
৭১) মৃত্যুঞ্জয়- মৃত্যুকে জয় করেছেন যিনি
৭২) সূক্ষ্মতনু- সূক্ষ্ম শরীর যাঁর
৭৩) জগদ্ব্যাপী- জগতে ব্যাপ্ত বাস যাঁর
৭৪) জগদ্গুরু- জগতের গুরু
৭৫) ব্যোমকেশ- আকাশের মতো চুল যাঁর
৭৬) মহাসেনজনক- কার্তিকেয়র পিতা
৭৭) চারুবিক্রম- সুন্দর পরাক্রম যাঁর
৭৮) রুদ্র- ভয়ানক
৭৯ ভূতপতি- ভূতপ্রেত বা পঞ্চভূতের অধিপতি
৮০) স্থাণু- স্পন্দন বিহিন কূটস্থ রূপ যাঁর
৮১) অহির্বুধ্ন্য- কুণ্ডলিনী ধারণ করেছেন যিনি
৮২) দিগম্বর- নগ্ন, আকাশরূপী বস্ত্র ধারণকারী
৮৩) অষ্টমূর্তি- আটটি রূপ আছে যাঁর
৮৪) অনেকাত্মা- অনেক রূপ ধারণ করতে পারেন যিনি
৮৫) সাত্বিক- সত্ব গুণ যাঁর
৮৬) শুদ্ধবিগ্রহ- শুদ্ধমূর্তি যাঁর
৮৭) শাশ্বত- নিত্য থাকেন যিনি
৮৮) খণ্ডপরশু- ভাঙা পরশু ধারণ করেছেন যিনি
৮৯) অজ- জন্ম রহিত
৯০) পাশবিমোচন- বন্ধন থেকে মুক্ত করেন যিনি
৯১) মৃড- সুখস্বরূপ যাঁর
৯২) পশুপতি- পশুদের অধিপতি
৯৩) দেব- স্বয়ং প্রকাশরূপ যিনি
৯৪) মহাদেব- দেবতাদেরও দেবতা
৯৫) অব্যয়- খরচ হওয়া সত্ত্বেও ঘাটতি হয় না যাঁর
৯৬) হরি- বিষ্ণুস্বরূপ
৯৭) পূষদন্তভিৎ- পূষার দন্ত যিনি উপড়ে ফেলেছিলেন
৯৮) অব্যগ্র- কখনও ব্যথিত হন না যিনি
৯৯) দক্ষাধ্বরহর- দক্ষের যজ্ঞ নষ্ট করেছিলেন যিনি
১০০) হর- পাপ ও তাপ হরণ করেন যিনি
১০১) ভগনেত্রভিদ্- ভগ দেবতার চোখ নষ্ট করেছিলেন যিনি
১০২) অব্যক্ত- ইন্দ্রিয়ের সামনে প্রকট হন না যিনি
১০৩) সহস্রাক্ষ- হাজারটি চোখ যাঁর
১০৪) সহস্রপাদ- হাজার পদ বিশিষ্ট
১০৫) অপবর্গপ্রদ- কৈবল্য মোক্ষ দান করেন যিনি
১০৬) অনন্ত- দেশকালবস্তু রূপী পরিছেদ রহিত
১০৭) তারক- সবার তারণ করেন যিনি
১০৮) পরমেশ্বর- সর্বাধিক পরম ঈশ্বর
শ্রাবণ মাস, শ্রাবণ সোমবার, প্রদোষ, শিবরাত্রি অথবা অন্যান্য সাধারণ সোমবারে এই নাম স্মরণ করলে সহজেই শিবের আশীর্বাদ লাভ করা যায়।
ভোলেনাথকে প্রসন্ন করার জন্য, এটি একটি সহজ-সরল উপায়।
.
ॐ নমঃ শিবায়
.
(সংগৃহীত)

Spread the love

কাল ভৈরব

Spread the love

আজ কালভৈরব দেবাবির্ভাব অষ্টমী। কৃষ্ণপক্ষের এই অষ্টমী তিথি কালভৈরব অষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়। এইদিনে মহাদেব কালভৈরব রূপ ধারন করেন। কালভৈরব দেবতা শিবের একটি হিংস্র প্রকাশ বা রুদ্র অবতার, যা মৃত্যু এবং বিনাশের সাথে সম্পর্কিত।
শিব পুরাণে শিবের এই রূপের বিষয়ে বর্ণণা করা হয়েছে। পুরাণ মতে, কালভৈরব কাল বা সময়ের শাসক। প্রতিটি মন্দিরেই কালভৈরবের মূর্তি থাকে। তিনি সেই মন্দিরের রক্ষক হিসেবে বিবেচিত হন। শিব মন্দিরে কালভৈরব এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ওই মন্দিরের চাবির রক্ষক বলে গণ্য হন।
দেবাদিদেব মহাদেবের অনেক রুদ্র অবতার আছে। দৈত্য দানব ও অশুভশক্তির বিনাশ হেতু ভগবান জটাধর বিভিন্ন রুদ্ররূপের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছেন। ভগবান মহাদেবের রুদ্রাবতার অতীব ভয়ঙ্কর এবং মহাবিনাশক। ভগবান শিবশঙ্কর যখনই রুদ্ররূপ ধারণ করেছেন ত্রিলোক কোনও না কোনও দ্বিধায় পড়েছে, কিন্তু পরবর্তীকালে ধরিত্রী পেয়েছে নবপরিচয়। যা একমাত্র মহাকালের লীলাতেই সম্ভব ছিল। ঠিক যেমন অনলে দগ্ধ হয়ে স্বর্ণ হয় শুদ্ধ, ঠিক তেমনই মহারুদ্রের ক্রোধাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে ধরিত্রী হয়েছে শিবভস্ম যা থেকে পরবর্তীতে অঙ্কুরিত হয়েছে শুদ্ধ পবিত্র জ্ঞানবৃক্ষ।
মহাদেব শিবের যতরকম রুদ্র অবতার আছে তন্মধ্যে অন্যতম একটি অবতার হলো কালভৈরব। কাল শব্দের অর্থ ‘মৃত্যু’ আর ভৈরব শব্দের অর্থ ‘ছন্দ’ অর্থাৎ কালভৈরব শব্দের অর্থ মৃত্যুরদেবতা বা কালবিনাশক।
কথিত আছে ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক যা সমূহপাপে আক্রান্ত সেই পাপ ও মস্তক বিনাশ হেতু মহাদেবের নীলতেজ হতে কালভৈরবের আবির্ভাব।
তন্ত্রশাস্ত্র মতে, বৈদিক দেব-দেবীদের প্রভাব কলিযুগে অস্তমিত হবে। প্রধান দেবতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন ভৈরবরা।
মহাজগতের বিশেষ স্থানগুলি ভৈরব রক্ষা করেন। ভৈরবের মোট সংখ্য ৬৪। তাদের ৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। প্রতিটি শ্রেণির আবার একজন করে প্রধান ভৈরব রয়েছেন। প্রধান ৮ ভৈরবকে ‘অষ্টাঙ্গ ভৈরব’ বলা হয়। অষ্টাঙ্গ ভৈরবের নামগুলি এই প্রকার- অসিতাঙ্গ ভৈরব, রুরু ভৈরব, চণ্ড ভৈরব, ক্রোধ ভৈরব, উন্মত্ত ভৈরব, কপাল ভৈরব, ভীষণ ভৈরব ও সংহার ভৈরব। এই আটজন মহাবিশ্বের আটটি দিকের অধিপতি। এই আট জন আবার নিয়ন্ত্রিত হন মহাস্বর্ণকালভৈরবের দ্বারা। তিনিই সাধারণভাবে কালভৈরব নামে পরিচিত।
ভৈরবদের মহিমা অনেকটাই গুপ্ত। প্রত্যেক ভৈরবের একজন করে ভৈরবী থাকেন। ৬৪ ভৈরব ও তাদের সঙ্গিনী ৬৪ যোগিনী তন্ত্রমতে বিবিধ শক্তির আধার। ভৈরবরা সুপ্ত এবং দূরবর্তী। ভৈরবীরা সক্রিয়। বিভিন্ন পূজা, উপচার ইত্যাদির মাধ্যমে ভৈরবীশক্তিকে তুষ্ট করে ভৈরবের প্রসাদ লাভ করতে হয়। এই সাধনধারা দীর্ঘ দীর্ঘ কাল ধরে চলে আসছে।
কালী পূজার সময় কালভৈরব রূপে মহাকাল রূপী শিবের পূজা করা হয়। তন্ত্রসাধক মহাকাল কে সাধনায় সন্তুষ্ট করে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়।
মহাকাল ভৈরবের প্রণাম মন্ত্র —
ॐ মহাকালং যজেদব্যং দক্ষিণে ধূমবর্ণকম।
বিভ্রতং দন্ড খটাঙ্গৌ দংস্ট্রাভীমমূখম্ শিশুম্॥
ব্যাঘ্রচর্মাবৃতকটীং তূন্দীলং রক্তবাসসম্।
ত্রিনেত্রমূর্ধং কেশঞ্চ মুণ্ডমালা বিভূষিতম্।
জটাভার লসচ্চচন্দ্র খন্ডমুগ্রং জলন্নিভম্॥
.
হর হর মহাদেব
.
(সংগৃহীত)


Spread the love

টালা ওয়াটার ট্যাঙ্ক

Spread the love

শুধু ভারতবর্ষ নয়, পৃথিবীর বৃহত্তম ওভারহেড রিজার্ভার হলো কলকাতার ‘টালা ট্যাঙ্ক’। ঐতিহাসিক ‘টাইটানিক’ জাহাজ যে লোহা দিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘টালা ট্যাঙ্ক’ তৈরি হতেও সেই রকম লোহা ব্যবহৃত হয়েছিল। তথ্য বলছে, টালা ট্যাঙ্ক নির্মাণের জন্য প্রায় ৮৫০০ টন লোহা লেগেছিল। যা ইংল্যান্ডের সুদূর ম্যাঞ্চেস্টার থেকে জাহাজে করে আনা হয়েছিল। মাটি থেকে ১১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত ওই ট্যাঙ্ক আক্ষরিক অর্থেই এক বিস্ময়! সল্টলেক স্টেডিয়ামের মাপ হল ২৮০ ফুট বাই ২৮০ ফুট। সেখানে টালা ট্যাঙ্কের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপ ৩২১ ফুট বাই ৩২১ ফুট! অর্থাৎ, ফুটবল মাঠের থেকেও আয়তনে বড় ওই জলাধার! ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে দাঁড়ানো ট্যাঙ্কটির উচ্চতা ২০ ফুট।
১৭১৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মোঘল সম্রাট ফারুকশিয়ার-এর কাছ থেকে ৩৮টি গ্রাম অধিগ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে ৩টি ছিল বর্তমান কলকাতায়। আস্তে আস্তে কলকাতা যখন শহরে পরিবর্তিত হতে থাকলো এবং উন্নত থেকে উন্নততর হতে থাকলো তখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রথম এবং প্রাথমিক কাজ হয়ে উঠলো নাগরিকদের সুস্থ পানীয় জল সরবরাহ করা। কারণ যেকোনো সুস্থ বসতি এবং জনজীবন গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে জলের গুরুত্ব সবার আগে। সেইসময় হেদুয়া, ভবানীপুর এবং ওয়েলিংটন এ পুকুর কেটে জল সরবরাহ শুরু করা হয়। এরপর শহর বড় হতে লাগলো, বড় হতে লাগলো জনজীবন, জনবসতি, তাই নাগরিকদের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থকর জল সরবরাহ করার জন্য তত্‍কালীন পুর ইঞ্জিনিয়র মিস্টার ডেভেরাল একটি ট্যাঙ্ক ( রিজার্ভার) তৈরির প্রস্তাব দেন । প্রস্তাবটি তৈরি করেছিলেন তাঁর সহকারি মিস্টার পিয়ার্স । প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত হয় বেঙ্গল গভর্নমেন্টও । ১৯০১ সালের প্রস্তাব কর্পোরেশন গ্রহণ করে ১৯০২ সালে । এর ঠিক এক বছর পর এই প্রস্তাবে সামান্য অদলবদল আনেন পৌরসভার নয়া নিযুক্ত ইঞ্জিনিয়র ডব্লু বি ম্যাকক্যাবে । তাতে প্রস্তাবিত অঙ্কের পরিমাণ বেড়ে হয় ৬৯ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৭৪ টাকা । তবে আরও উন্নত জল পরিষেবা সম্ভব বলে তাতে সম্মতি দেয় পৌরসভা ।
এখন সমস্যা হলো এত বড় ট্যাঙ্ক তৈরি হবে কোথায়? আজ যেখানে ‘টালা ট্যাঙ্ক’ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে এক কালে প্রচুর পুকুর ছিল, এই পুকুর ভরাট করে তৈরি করা হয়েছিল এই ট্যাঙ্কটি। এই ট্যাঙ্কের জায়গা অর্থাৎ ৪৮২ একর জমি দান করেছিলেন বাবু খেলাদ ঘোষ নামক এক ব্যক্তি। তাঁরই জমিতে তৈরি হয়েছিল প্রায় ১০ তলা বাড়ির সমান এই ট্যাঙ্ক। ১৯০৯ সালে তৎকালীন গভর্নর স্যার এডওয়ার্ড বেকার এই ট্যাঙ্কের শিলান্যাস করেন এবং ১৯১১ সালে নাগরিকদের জল সরবরাহ করার জন্য খুলে দেওয়া হয় এই ট্যাঙ্কটি।
আশ্চর্য্য বিষয় হলো পুরোপুরি কাঠের পাটাতন-এর উপর কোনো স্ক্রু ছাড়ার ৩২১ ফুট×৩২১ ফুট বর্গাকার এই বিশালাকার টাঙ্কটি এখনোও গর্বের সাথে মাথা উঁচু করে মানুষকে জল সরবরাহ করে যাচ্ছে। প্রথমে ‘টালা ট্যাঙ্ক’-এর ছাদটি ছিল চুনসুরকির। পরে ছাদে ১৪ ইঞ্চি পুরু কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে তৈরি করা হয়। ‘টালা ট্যাঙ্ক’-এর ফাউন্ডেশন-এর কাজ করেছিল টি সি মুখার্জি এন্ড কোম্পানি এবং কংক্রিট ফাউন্ডেসন-এর কাজ করেছিল রাজেন্দ্রনাথ মুখার্জির মার্টিন এন্ড কোম্পানি, স্টিলের কাজ করেছিল ইংল্যান্ডের ক্লিটেনসন এন্ড কোম্পানি। পরে ছাদটি যখন কংক্রিটের তৈরি হয়েছিল তখন কাজ করেছিলেন আরাকন এন্ড কোম্পানি এবং বাবু কালীশঙ্কর মিত্তির। ১ লক্ষ ৩ হাজার ৪১ স্কোয়ারফিটের ৪ টি কম্পার্টমেন্ট যুক্ত এই বিশালাকার টাঙ্কটি খুবই বিচক্ষণতার সাথে এবং বুদ্ধি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যাতে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গেলে কোনো ভাবে যেন জল সরবরাহ ব্যাহত না হয়। ৯০ লক্ষ গ্যালন জল ধরার ক্ষমতা রাখে এই বিশাল আকারের টাঙ্কটি। এর উচ্চতা ১৮ ফুট, কিন্তু জল থাকে ১৬ ফুট পর্যন্ত। উত্তরের দমদম থেকে দক্ষিনের ভবানীপুর পর্যন্ত এই জল আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপের মাধ্যমে পৌঁছে যায় প্রতিটি কলকাতাবাসীর ঘরে। পলতায় গঙ্গা থেকে পরিশোধিত জল প্রায় ২২ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে ৬টি পাইপের মাধ্যমে টালায় পৌঁছায়। তা জমা হয় নীচের জলাধারে। সেখান থেকে ৬০ ইঞ্চি পাইপে সেই জল ওঠে মাটি থেকে প্রায় ১১০ ফুট উপরের ওই ট্যাঙ্কে। পৃথিবীর বৃহত্তম এই জলাধার এক সময়ে সারা কলকাতায় জল সরবরাহ করত। পরে গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প হওয়ায় টালার উপরে চাপ কিছুটা কমেছে।
এটাতো গেল ট্যাঙ্কের আকার নিয়ে বর্ণনা, কিন্তু তার সাথে এই ট্যাঙ্কটি এতটাই মজবুত যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান যখন বোমা ফেলেছিলো তখনও ধ্বংস হয়নি। শুধু মাত্র ৯ টা ছিদ্র হয়েছিল। প্রচুর বড় বড় ভূমিকম্প এসেছে কিন্তু কোনো ক্ষতিই হয়নি ‘টালা ট্যাঙ্ক’-এর। এই বিশালাকার ট্যাঙ্ককে ক্ষতি করতে পারলে কলকাতাকে কব্জা করা যাবে এই চিন্তা নিয়ে ১৯৬২, ১৯৭১-এর যুদ্ধে চীন ও পাকিস্তানের কাছে সব থেকে বড় টার্গেট পয়েন্ট ছিলো ‘টালা ট্যাঙ্ক’। কারণ পানীয় জল ব্যতীত মানুষের জীবন অচল। কিন্তু এই সমস্ত বাধা এবং প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে আজও আমাদের বাঙালির তথা বিশ্ব-এর গর্ব হয়ে রয়ে গেছে এই ‘টালা ট্যাঙ্ক’।
অতি সম্প্রতি প্রায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে আসা আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো শতাব্দী প্রাচীন টালা ট্যাঙ্ক। এই ভয় কাজ করেছিল পুর আধিকারিকদের মনে। কারণ, মেরামতির কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। বিগত ১০০ বছরে এত বড় রকমের ঝড়ের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই কারোর। দুপুরের পর থেকে আবহাওয়ার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখে শুধুমাত্র মেয়রকে জানিয়েই টালা ট্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক দ্রুত একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। আর সেই সিদ্ধান্তেই কেল্লা ফতে হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এমনিতে হাইড্রোলিক সিস্টেম এ টালা ট্যাঙ্ক থেকে অবিরাম পদ্ধতিতে অনবরত জল ওঠানামা করে। কখনোই ট্যাঙ্কে জল দাঁড়িয়ে থাকে না। কিন্তু দুপুরের পর পরিস্থিতি দেখে আধিকারিকরা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, বিকেল পাঁচটা থেকে রাত্রি পর্যন্ত কোন জল নামতে দেওয়া যাবে না। দ্রুত চাবি বন্ধ করে জল নামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। টালার ট্যাঙ্কে জল ধরার ক্ষমতা ৯০ লক্ষ গ্যালন। ৮০ লক্ষ গ্যালন জল দ্রুত পূর্ণ করে ফেলা হয় ট্যাঙ্কের চারটি প্রকোষ্ঠে। জল-সহ গোটা ট্যাঙ্কের ওজন দাঁড়ায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। যাকে এক চুলও নড়ানো ক্ষমতা আমফানের ছিলো না বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু একটা পরীক্ষা হয়ে গেল এর মধ্যে দিয়ে। আগামী আরও ১০০ বছরের জন্য সুরক্ষিত টালা ট্যাঙ্ক। আমফানই যেন সিলমোহর দিয়ে গেল!
আজও একভাবে জলের মাধ্যমে জীবন দান করে চলেছে কলকাতার প্রায় প্রতিটি ঘরে।
সংকলন ও লিখন – #রূপকথা_রায়
পুনঃপ্রকাশ
সংগৃহীত

Spread the love