কেন মালা জপ করা হয়?

Images (1)
Spread the love

Images (1)

মালা জপ করা একটি প্রচলিত আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা ধর্মীয় ও ধ্যানমূলক কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়। এটি শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেও মানুষের মন, শরীর ও আচরণের উপর প্রভাব ফেলে। নিচে মালা জপের আধ্যাত্মিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পূর্ণভাবে তুলে ধরা হলো:

আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

1. চিন্তাভাবনা কেন্দ্রীভূত করা (Focus):
মালা জপ করলে মন একটি নির্দিষ্ট শব্দ বা মন্ত্রের প্রতি কেন্দ্রীভূত থাকে। এতে মন ছুটোছুটি না করে শান্ত থাকে।

2. ভক্তি ও আত্মসমর্পণ প্রকাশ:
মালার মাধ্যমে ঈশ্বরের নাম বা গুণগান করা হয় বারংবার, যা ভক্তির প্রকাশ এবং আত্মসমর্পণের প্রতীক।

3. কার্মিক বন্ধন হ্রাস:
হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয় যে, জপের মাধ্যমে পূর্বজন্মের কুকর্মের প্রতিক্রিয়া হ্রাস পায়।

4. মন ও আত্মার শুদ্ধতা:
নিরবিচারে একমনে জপ করলে অন্তর শুদ্ধ হয়, অহং কমে এবং আত্মার সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে ওঠে।

5. সতত স্মরণ (Constant Remembrance):
‘নামস্মরণ’ একধরনের সাধনা যা মনে ঈশ্বরচিন্তা ধরে রাখে।

 

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা

1. মনের প্রশান্তি (Mental Calmness):
মালা জপ ধ্যানের মতোই মস্তিষ্কে আলফা তরঙ্গ উৎপন্ন করে, যা মানসিক চাপ হ্রাস করে এবং প্রশান্তি এনে দেয়।

2. Heart Rate ও Respiration-এর নিয়ন্ত্রণ:
ধীরে ধীরে মন্ত্র জপ করার সময় শ্বাসপ্রশ্বাস ও হার্টবিট নিয়মিত হয়ে যায়, ফলে স্নায়ুব্যবস্থা শান্ত হয়।

3. Neuroplasticity ও Habit Loop:
নিয়মিত জপ মস্তিষ্কের নিউরনগুলোকে একটি নির্দিষ্ট রুটিনে অভ্যস্ত করে তোলে। এতে অভ্যাসগত ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে।

4. Mantra-এর শব্দতরঙ্গ:
বহু গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু নির্দিষ্ট মন্ত্র (যেমন “ওঁ”) উচ্চারণ করলে মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির কম্পন হয়, যা শরীরকে নিরাময় প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে।

5. Cognitive Benefits:
নিয়মিত মালা জপ মনোযোগ বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি উন্নত করে এবং একাগ্রতা বৃদ্ধি করে। এটি ADHD বা মনোযোগ ঘাটতি সমস্যায়ও উপকারী।

নিচে বিভিন্ন ধর্মে মালার ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আপনি দেখতে পাবেন, ধর্ম ভিন্ন হলেও মালার মূল উদ্দেশ্য — মনকে একাগ্র করা, ঈশ্বর/আত্মা স্মরণ, এবং আত্ম-উন্নতির পথ প্রশস্ত করা — এক রকম।

১. হিন্দু ধর্ম

মালা: সাধারণত ১০৮টি দানা থাকে (যাকে জপমালা বলা হয়)। তুলসী, রুদ্রাক্ষ, চন্দনের দানা প্রথিত।

ব্যবহার: “ওঁ নমঃ শিবায়”, “হরে কৃষ্ণ”, “গায়ত্রী মন্ত্র” ইত্যাদি জপে ব্যবহৃত।

উদ্দেশ্য: একাগ্রতা, আত্মশুদ্ধি, পুণ্য অর্জন এবং ঈশ্বরের স্মরণ।

 

২. বৌদ্ধ ধর্ম

মালা: সাধারণত ১০৮টি দানা থাকে, মাঝে মাঝে 27 বা 54 দানাও ব্যবহার হয়। কাঠ, হাড় বা রুদ্রাক্ষ থেকে তৈরি।

ব্যবহার: বৌদ্ধ মন্ত্র যেমন “ওঁ মণিপদ্মে হুং” জপের জন্য।

উদ্দেশ্য: কুসংস্কার মুক্তি, করুণা ও প্রজ্ঞা চর্চা, পুনর্জন্ম থেকে মুক্তি (নির্বাণ)।

 

৩. খ্রিস্টান ধর্ম

মালা: ক্যাথলিক ধর্মে একে Rosary বলা হয়, সাধারণত ৫টি সেটে বিভক্ত থাকে, প্রতিটি সেটে ১০টি দানা (decade)।

ব্যবহার: প্রার্থনা বা Hail Mary, Our Father, Glory Be প্রার্থনা জপের জন্য।

উদ্দেশ্য: যীশুখ্রিস্ট ও ভার্জিন মেরির জীবনের ঘটনাবলি স্মরণ, আত্মশুদ্ধি ও ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া।

 

৪. ইসলাম ধর্ম

মালা: একে বলা হয় তসবিহ বা সুবহানী মালা, সাধারণত ৩৩, ৯৯ বা ১০০ দানা হয়।

ব্যবহার: আল্লাহর ৯৯টি নাম জপ করা বা “সুবহানাল্লাহ”, “আলহামদুলিল্লাহ”, “আল্লাহু আকবর” বলার জন্য।

উদ্দেশ্য: ধ্যান, আল্লাহর প্রশংসা, আত্মশুদ্ধি ও নফস (অহং) দমন।

 

৫. শিখ ধর্ম

মালা: কম ব্যবহৃত হলেও, কেউ কেউ সিমরণ বা ঈশ্বরস্মরণ করার জন্য মালা ব্যবহার করেন।

ব্যবহার: “ওঁকার”, “সতনাম”, “ওয়াহেগুরু” — এসব শব্দের জপ।

উদ্দেশ্য: ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন, আত্মদর্শন এবং অহং থেকে মুক্তি।

মালা জপ শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার নয় বরং এটি একটি মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধিকারী প্রক্রিয়া। এটির মাধ্যমে ব্যক্তি ধীরে ধীরে নিজের ভিতরের দিকে যাত্রা করে এবং আত্ম উপলব্ধির পথে অগ্রসর হয়। যদিও বিভিন্ন ধর্মে মন্ত্র, শব্দ, ও মালার রূপ ভিন্ন, তবুও এর মূল লক্ষ্য এক — মনকে নিয়ন্ত্রণ করা, আত্মিক উন্নতি সাধন, এবং ঈশ্বর বা চূড়ান্ত সত্যের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন।

অতিরিক্ত তথ্য: কেন সংখ্যাটি ১০৮ হয় (হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মে)?

১০৮ একটি পবিত্র সংখ্যা বলে ধরা হয়। বিভিন্ন ব্যাখ্যা আছে:

১ = ঈশ্বর, ০ = শূন্যতা, ৮ = অনন্ত (∞)

সংস্কৃত বর্ণমালায় ৫৪টি ধ্বনি, প্রতিটির স্ত্রী ও পুং রূপ = ৫৪×২ = ১০৮

জ্যোতিষশাস্ত্রে, সূর্য ও চন্দ্রের পৃথিবী থেকে গড় দূরত্ব তাদের ব্যাসের প্রায় ১০৮ গুণ।


Spread the love

তিলক ধারণের বিধি কি?

16f7dc67de6ac98e39c93fcd5be9c4e4
Spread the love

16f7dc67de6ac98e39c93fcd5be9c4e4

 

তিলক পড়া হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার বা ধর্মীয় চিহ্ন। এটি সাধারণত কপালের মাঝখানে দেওয়া হয় এবং এটি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, শুদ্ধতা ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে তিলক পড়ার সম্পূর্ণ নিয়ম ব্যাখ্যা সহ দেওয়া হলো।

তিলক পড়ার অর্থ ও গুরুত্ব:

আধ্যাত্মিকতা: কপালের মাঝখানে ‘অজ্ঞান চক্র’ বা ‘আজ্ঞা চক্র’ রয়েছে, যেটি আত্মিক জ্ঞান ও ধ্যানের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে তিলক দিলে একাগ্রতা বাড়ে।

ধর্মীয় পরিচয়: বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন রকম তিলক পড়ে, যা তাদের ইষ্টদেবতা ও দর্শনের পরিচয় বহন করে।

রক্ষা কবচ: বিশ্বাস করা হয় যে তিলক নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করে।

 

তিলক পড়ার নিয়ম:

১. সময় ও প্রস্তুতি:

স্নান করার পরে তিলক পড়া উচিত, কারণ এটি শুদ্ধতার প্রতীক।

পবিত্রতা বজায় রেখে, ধ্যান বা প্রার্থনার আগে তিলক পড়া উত্তম।

২. উপকরণ:

গোপীচন্দন (বিশেষত বিষ্ণু ভক্তরা)

ভস্ম (ভিভূতি) – শৈব সম্প্রদায়ের জন্য

কুমকুম – সাধারণত গৃহিণীরা বা শক্তি উপাসকরা ব্যবহার করেন

সন্দল (চন্দন) – শীতলতা ও পবিত্রতার প্রতীক

৩. তিলক পড়ার প্রক্রিয়া:

ডান হাতের তর্জনী বা অঙ্গুলি ব্যবহার করে তিলকের দ্রব্য নিয়ে তিলক দিন।

2. তিলকের আকৃতি ও স্থান:

বিশ্ণু ভক্ত: দুইটি উলম্ব রেখা, মাঝে তুলসী পাতা বা গোপীচন্দনের বিন্দু (উর্ধ্বপুন্ড্র)

শিব ভক্ত: তিনটি ভস্মের রেখা (ত্রিপুণ্ড্র)

শক্তি ভক্ত: লাল কুমকুম বা চন্দনের বিন্দু

 

3. তিলক দেওয়ার সময় মনে মনে ইষ্টদেবতার নাম জপ করুন বা মন্ত্র পাঠ করুন।

১. শ্রী বিষ্ণু বা নারায়ণ (উর্ধ্বপুণ্ড্র তিলক):

তিলক: দুইটি সাদা উলম্ব রেখা, মাঝে তুলসী পাতা বা গোপীচন্দনের বিন্দু।

মন্ত্র:

ऊर्ध्वपुण्ड्रं धराम्यद्य नारायणप्रीत्यर्थम्।
বাংলা উচ্চারণ: ঊর্ধ্বপুন্ড্রং ধরাম্যদ্য নারায়ণ প্রীত্যর্থম্।
অর্থ: আমি আজ নারায়ণের প্রীতির জন্য এই তিলক ধারণ করছি।

২. শ্রী কৃষ্ণ (গোপীচন্দনের তিলক):

মন্ত্র:

गोपिचन्दनं धारयामि श्रीकृष्णप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: গোপীচন্দনং ধারযামি শ্রীকৃষ্ণ প্রীত্যর্থম্।

অর্থ: আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির জন্য গোপীচন্দনের তিলক ধারন করছি।

৩. শ্রী রামচন্দ্র (রামভক্তদের তিলক):

মন্ত্র:

रामचन्द्राय नमः।
বাংলা: রামচন্দ্রায় নমঃ।

(তিলক দেবার সময় অন্তরে এই নামজপ করা হয়।)

৪. শিব (ত্রিপুণ্ড্র তিলক – তিনটি ভস্মের রেখা):

তিলক: তিনটি ভস্মের আড়াআড়ি দাগ

মন্ত্র:

विभूतिं धारयामि शिवप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: বিভূতিং ধারযামি শিব প্রীত্যর্থম্।

অথবা সহজে শুধু:

ॐ नमः शिवाय।
(ওঁ নমঃ শিবায়)

৫. দেবী দূর্গা / পার্বতী (লাল কুমকুম তিলক):

মন্ত্র:

कुंकुमं धारयामि मातृदेवीप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: কুঙ্কুমং ধারযামি মাতৃদেবী প্রীত্যর্থম্।

অথবা:

ॐ दुर्गायै नमः।
(ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ)

৬. হনুমানজী (লাল বা কমলা চন্দনের তিলক):

মন্ত্র:

ॐ श्री हनुमते नमः।
(ওঁ শ্রী হনুমতে নমঃ)

৭. সূর্যদেব (রক্ত চন্দন তিলক):

মন্ত্র:

ॐ सूर्याय नमः।
(ওঁ সূর্যায় নমঃ)

৮. গণেশ (লাল কুমকুম বা সিন্দুর):

মন্ত্র:

ॐ गं गणपतये नमः।
(ওঁ গম্ গণপতয়ে নমঃ)

৯. কালী মা (লাল কুমকুম / সিঁদুর / রক্তচন্দন)

মন্ত্র :

ॐ कालीकायै नमः।
বাংলা উচ্চারণ: ওঁ কালীকায়ৈ নমঃ।
অর্থ: কালী মাকে আমি প্রণাম জানাই।

তিলক পড়া শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। প্রতিদিন স্নান করার পর, শুদ্ধ চিত্তে তিলক ধারণ করলে তা মনকে শান্ত করে, আত্মশক্তি বাড়ায় এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিকে দৃঢ় করে।

তিলকের রূপ, উপকরণ ও মন্ত্র উপাস্য দেবতার উপর নির্ভরশীল—শিব, বিষ্ণু, কালী, দুর্গা, রাম, কৃষ্ণ—যার উপাসনা করা হয়, তার অনুযায়ী তিলক ধারন করতে হয়।

তিলক পড়ার সময় দেবতার নাম বা মন্ত্র জপ করলে তা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং অন্তরের সাধনাও হয়ে ওঠে।

সারকথা:
তিলক হলো ভক্তির চিহ্ন, আত্মপরিচয়ের প্রতীক, এবং একাগ্রতার কেন্দ্র। সঠিক নিয়ম, শুদ্ধ উপকরণ ও আন্তরিকতার সঙ্গে তিলক পড়লে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগ্রত করে।

“This content is subject to copyright.” April 21,  2025


Spread the love

আমরা কেন তিলক ধারণ করি?

Spread the love

 

Images

 

তিলক ধারণ করার প্রথা মূলত হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু একটি আচার নয়, এর পেছনে রয়েছে ধার্মিক ও বৈজ্ঞানিক উভয় ব্যাখ্যা। নিচে তা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

ধার্মিক ব্যাখ্যা:

1. ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশ:
তিলক ধারণ করা হয় ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে। বিভিন্ন সম্প্রদায় বা দেবতার ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের তিলক পরিধান করেন, যেমন বিষ্ণুভক্তরা “উ” বা “ত্রিপুণ্ড্র” আকৃতির তিলক নেন।

2. আত্মপরিচয় প্রকাশ:
তিলক কার কোন সম্প্রদায় বা পথের অনুসারী তা প্রকাশ করে। যেমন বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত—প্রত্যেকের তিলকের ধরন আলাদা।

3. আধ্যাত্মিক উন্নতি ও পবিত্রতা:
তিলক ধারণ করা হয় মস্তিষ্কের ‘আজ্ঞাচক্র’ বা ‘তৃতীয় নয়ন’ এর স্থানে, যা ধ্যান, আত্মচিন্তা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক।

4. ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পূজার পূর্ব প্রস্তুতি:
পূজা বা যেকোনো ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়ার পূর্বে তিলক ধারণ করে আত্মশুদ্ধি ও মনঃসংযমের প্রকাশ ঘটে।

 

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

1. মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ চাপ পয়েন্টে চাপ প্রয়োগ:
তিলক সাধারণত কপালের মাঝে, দুই ভ্রুর ঠিক উপরের জায়গায় লাগানো হয়—এই স্থানটি ‘আজ্ঞাচক্র’ বা pineal gland-এর কাছাকাছি, যা মনঃসংযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং আত্মউপলব্ধির সাথে জড়িত।

2. মানসিক প্রশান্তি ও ঠান্ডা ভাব বজায় রাখা:
চন্দনের তিলক ঠান্ডা প্রকৃতির, এটি কপালে লাগালে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয় এবং মানসিক চাপ কমে।

3. রক্তসঞ্চালনের ভারসাম্য:
তিলক লাগানোর সময় যে সামান্য চাপ প্রয়োগ হয় তা রক্তসঞ্চালন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

4. ইন্দ্রিয় ও চিন্তাশক্তির কেন্দ্র সক্রিয় করা:
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, কপালের এই অংশে নিয়মিত সংবেদন সৃষ্টি করলে চিন্তাশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

হিন্দু ধর্মে প্রধানত তিনটি মূল সম্প্রদায় দেখা যায়—বৈষ্ণব, শৈব, ও শাক্ত। এদের প্রত্যেকের তিলক আলাদা, এবং প্রতিটির একটি নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক ও দর্শনীয় তাৎপর্য আছে।

বৈষ্ণব তিলক (ভগবান বিষ্ণুর ভক্তরা)

তিলকের রূপ:
দুইটি সাদা উলটো ‘U’ আকারের রেখা, মাঝে সাধারণত একটি লাল বা হলুদ রেখা থাকে।

ব্যবহৃত পদার্থ:
গোপীচন্দন, কুমকুম, হলুদ

অর্থ ও তাৎপর্য:

‘U’ আকৃতির তিলক বিষ্ণুর পদচিহ্নের প্রতীক।

মাঝে লাল রেখাটি লক্ষ্মীর প্রতীক।

এটি ভক্তকে সর্বদা ঈশ্বরস্মরণে রাখে এবং অহংকার কমাতে সহায়ক।

বিশেষ বৈষ্ণব উপপ্রধান ধারা:

মাধ্ব, নিম্বার্ক, গৌড়ীয়, ও রামানুজ সম্প্রদায়ের তিলকের ছোট ভিন্নতা থাকে।

 

শৈব তিলক (ভগবান শিবের ভক্তরা)

তিলকের রূপ:
কপালের ওপর তিনটি অনুভূমিক সাদা রেখা (ত্রিপুণ্ড্র), মাঝে লাল বিন্দু বা রেখা থাকতে পারে।

ব্যবহৃত পদার্থ:
ভস্ম (ভস্মধারিণী), কুমকুম

অর্থ ও তাৎপর্য:

তিনটি রেখা প্রতীক: তামস, রজস ও সত্ত্ব গুণ, বা জন্ম, মৃত্যু ও পুনর্জন্ম।

এটি আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষলাভের প্রতীক।

ভস্ম মানে ‘সব কিছু ধ্বংসযোগ্য’—এটি মোহভঙ্গ ও বৈরাগ্যের প্রতীক।

 

শাক্ত তিলক (দেবী দুর্গা বা শক্তির ভক্তরা)

তিলকের রূপ:
সাধারণত কপালের মাঝখানে একটি লাল বিন্দু (বিন্দি বা কুমকুম)।

ব্যবহৃত পদার্থ:
কুমকুম (সিঁদুর)

অর্থ ও তাৎপর্য:

এটি অগ্নিচক্র বা শক্তিচক্রের প্রতীক।

নারীর শক্তি, মাতৃত্ব, ও পবিত্রতার প্রতীক।

বিবাহিত নারীরা এটি সধবা বা শুভ লক্ষণ হিসেবে ধারণ করেন।

 

৪. স্মার্ত সম্প্রদায় (যাঁরা শিব, বিষ্ণু, দেবী, গণেশ, সূর্য সবাইকে পূজা করেন)

তিলকের রূপ:
কখনও ত্রিপুণ্ড্র, কখনও উর্ধ্ব রেখা বা বিন্দু—ব্যক্তি বা সময় অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

অর্থ ও তাৎপর্য:
এই সম্প্রদায় সর্বদেবতার প্রতি সমান শ্রদ্ধা রাখে, তাই তিলকের রীতিতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়।

 

সারাংশ:
তিলক শুধু একটি ধর্মীয় প্রতীক নয়, এটি আত্মিক উন্নতি, ভক্তি প্রকাশ, ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে—এটি ধার্মিক বিশ্বাস এবং আধুনিক বিজ্ঞানের মিলিত ব্যাখ্যায় স্পষ্ট হয়।


Spread the love