<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Sri Yoga Center Ashram's Blog - The Bengal flavour of Health Science,art and culture. - Page 3

মা কালীর গায়ের কালো ও নীল রঙের পার্থক্য ও আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

Untitled design 20251018 123755 0000
Spread the love

Untitled design 20251018 123755 0000

 

মা কালীর শরীরকে কখনও সম্পূর্ণ কালো, আবার কখনও নীল-কালো রঙে তুলে ধরা হয়। এই দুই রঙের আলাদা আধ্যাত্মিক ও দার্শনিক মানে আছে। দেবীর রূপ শুধু ভয়ের নয়, বরং সৃষ্টিশক্তি, সময়, প্রলয়, এবং মহাশূন্যের প্রতীক।

 

কালো রঙের তাৎপর্য

১. অনন্ত অন্ধকার ও সৃষ্টির উৎস
কালো মানে এমন এক রঙ, যা সব আলো শোষণ করে। পুরাণ অনুসারে, সৃষ্টি হওয়ার আগে যা ছিল, তা হলো “অন্ধকার” বা “শূন্যত্ব”। সেই সীমাহীন অন্ধকারকেই দেবীর রূপ হিসেবে ধরা হয় — যেখান থেকে সৃষ্টি শুরু হয় এবং সবকিছু ফিরে যায়।

২. সময় ও প্রলয়ের প্রতীক
‘কাল’ মানে সময়। “কালীর” নামেই আছে ধ্বংস আর সময়ের শক্তি। তিনি সব রঙ, সব জীবন, সব সৃষ্টি গ্রাস করেন—তাই তাঁর বর্ণ প্রলয়ের অন্ধকার।

৩. অশুভ শক্তি শোষণকারী শক্তি
কালো রঙকে ভয় নয়, বরং সুরক্ষার প্রতীক বলা হয়। লোকবিশ্বাসে এই রঙ নেতিবাচক শক্তি, দৃষ্টি, অমঙ্গল, অপদেবতা শোষণ করে।

৪. নিরাকার রূপ
মা কালীকে অনেক সময় নিরাকার ও অসীম মহাশক্তি হিসেবে ধরা হয়। সেই অদৃশ্য, অজ্ঞেয় রূপ প্রকাশ করে কালো বর্ণ।

 

নীল রঙের তাৎপর্য

১. আকাশ ও মহাশূন্যের প্রতীক
নীল রঙ অসীমতা, বিশালতা ও গভীরতার চিহ্ন। দেবী যেন সমগ্র মহাকাশকে ধারণ করে আছেন।
যেমন ভগবান শিব, বিষ্ণু নীলবর্ণ — তাঁদের মতোই দেবীর নীল রূপ শক্তি ও প্রকৃতির মিলন।

২. ধ্বংসের পর শান্তির প্রতীক
নীল রঙ ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে পুনর্জন্ম ও স্থিতিশীলতারও চিহ্ন। অন্ধকারের ভেতরে আলো ধারণ করার ক্ষমতা আছে এই রঙের।

৩. ক্রোধ ও করুণার যুগল রূপ
তান্ত্রিক মতে, কালীর রক্তিম জিভ ও নীল/কালো দেহ দেখায়—তিনি ধ্বংস করেন আবার রক্ষা করেন। ভয় ও মমতার অনন্য রূপ।

৪. বিষধর শক্তি ধারণের প্রতীক
শিব যেমন গলায় হলাহল ধারণ করে নীলকণ্ঠ হন, তেমনি দেবীর নীল বর্ণ অশুভ শক্তি শোষণ করে তাকে শক্তিতে রূপান্তর করে।

 

নীল না কালো—দুটোই সঠিক কেন?

• গ্রামবাংলার মাটির মূর্তিতে কালো বেশি দেখা যায়
• শোলার কাজ বা আধুনিক প্রতিমায় নীলের ব্যবহারও জনপ্রিয়
• শাস্ত্র বলে — রূপ ভেদ হলে শক্তি একটাই
• নীল মানে আকাশ ও জল, কালো মানে অন্ধকার ও শক্তির উৎস

মা কালী শুধু ধ্বংসের প্রতীক নন — তিনি সৃষ্টি, শক্তি, অনন্ত মহাশূন্য, প্রলয়, সময়, মাতৃত্ব সবকিছুর সমন্বয়। তাঁর নীল ও কালো বর্ণ সেই অদৃশ্য মহাশক্তির ইঙ্গিত, যা ভয়, অন্ধকার ও অমঙ্গলের ঊর্ধ্বে।

নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”।


Spread the love

আলো, শক্তি ও মা কালী: ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

Img 20251013 205304
Spread the love

Img 20251013 205304

 

কালীপুজোর রাতে বাংলার ঘর, উঠোন, বারান্দা, পথঘাট থেকে শ্মশান পর্যন্ত প্রদীপের আলোয় ঝলমল করে ওঠে। অনেকেই এটাকে শুধু উৎসবের সাজ বা অমাবস্যার আলো বলে মনে করেন, কিন্তু এই প্রদীপজ্বালানোর রীতির জড় roots রয়েছে প্রাচীন শাক্তধর্ম, গ্রামীণ লোকবিশ্বাস, পূর্বপুরুষ আর তন্ত্রসাধনার সঙ্গে। এই আলো কেবল অন্ধকার ভাঙে না, বরং দেবীর আহ্বান, অশুভশক্তি নিবারণ, জীবনীশক্তি রক্ষা এবং শক্তির অভিষেকের প্রতীক।

 

উৎস: অন্ধকার থেকে শক্তির আহ্বান

কালীপুজো হয় কার্তিক অমাবস্যায়—যে রাতে আকাশে একফোঁটা চাঁদের আলোও থাকে না। প্রাচীন শাস্ত্রে বলা আছে, “অন্ধকারই শক্তির অগ্নিপথ”, তাই সেই রাতে আলো জ্বালিয়ে শক্তির আগমনকে স্বাগত জানানোর প্রচলন গড়ে ওঠে। গ্রামবাংলায় বিশ্বাস ছিল, কার্তিকের অমাবস্যায় অশরীরী শক্তি, ভূতপ্রেত আর দুর্ভাগ্যের ছায়া নেমে আসে। তাই বাড়ির চার কোণে, দরজার সামনে, তুলসীতলার পাশে কাঁচা প্রদীপ জ্বালিয়ে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখা হত।

 

তন্ত্র ও প্রদীপ: শক্তির আসন প্রস্তুতি

তান্ত্রিক পূজায় আগুনকে ধরা হয় জীবন্ত মাধ্যম—‘অগ্নি দেবীশক্তির মুখ’। তাই আগে ঘরে যে প্রদীপ জ্বলত, তা ছিল কালীকে ডাকার এক আধ্যাত্মিক ডাক। শাস্ত্রে বলা আছে, মা কালী থাকেন দিকদিগন্তের অন্ধকারে, তাই আলো দিয়ে তাঁর পথ তৈরি করা হয়। অনেক তান্ত্রিক সাধক প্রদীপের শিখায় ধ্যান করতেন, এবং শিখাকে দেবীর জিভ, কেশ, বা চক্ষুর প্রতীক মানতেন। প্রদীপ জ্বালানো মানে পূজার মঞ্চে শক্তির আগমন ঘটানো।

 

সরষের তেলের প্রদীপ ও গ্রামীণ ঐতিহ্য

বাংলায় ঘরে প্রদীপ জ্বালানোর সঙ্গে সরষের তেলের যোগ সবচেয়ে গভীর। বিশ্বাস ছিল, সরষে তেল অশুভ শক্তিকে পুড়িয়ে দেয়। গ্রামে গৃহবধূরা সন্ধ্যায় উঠোনে, গোয়ালের পাশে, বারান্দায় এবং বট বা নিমগাছের নিচে প্রদীপ জ্বালাতেন, যাতে মা কালী অশুভ শক্তিকে বিনাশ করেন। অনেক পরিবার আজও অঘোরী তেলের প্রদীপ জ্বালিয়ে কালীকে সন্তুষ্ট করার রীতি বজায় রেখেছে।

 

পূর্বপুরুষের আত্মা ও ভূতচতুর্দশীর সংযোগ

কালীপুজোর আগের দিন ভূতচতুর্দশী। এই রাতে ১৪টি প্রদীপ জ্বালিয়ে পূর্বপুরুষের আত্মাকে শান্ত ও সন্তুষ্ট করার এক আদি প্রথা প্রচলিত। ধারণা ছিল, অমাবস্যার অন্ধকারে পিতৃপুরুষেরা ভাসতে থাকেন এবং আলো দেখে তারা পথ খুঁজে পান। তাই বারান্দা, সিঁড়ি, চাতাল, উঠোনে প্রদীপ রেখে পূর্বপুরুষকে আহ্বান ও আশীর্বাদ চাওয়া হত। এই বিশ্বাস থেকেই পরের দিনে কালী আরাধনার প্রদীপের সংস্কৃতি আরও গভীর হয়।

 

দরজা, জানালা ও ছাদে আলো: দেবীর পথপ্রদর্শন

গ্রামবাংলার বহু অঞ্চলে বিশ্বাস ছিল, দেবী কালরাত্রিতে আকাশপথে চলেন। তাই ছাদে, গাছের মাথায় বা বাঁশের উপর প্রদীপ বেঁধে আলো তুলে ধরা হত। একে বলা হত “আকাশবাতি” বা “দীপালোক”। আবার বাড়ির দিকনির্দেশে প্রদীপ রাখাকে ধরা হত কালী ও লক্ষ্মী দুই দেবীর পথপ্রদর্শন হিসেবে। কারণ এই রাতেই কিছু অঞ্চলে দুয়োকেই একসঙ্গে আহ্বান করা হয়।

 

অশরীরী শক্তি প্রতিরোধে প্রদীপের ভূমিকা

লোকবিশ্বাস ছিল, অমাবস্যায় ‘দুষ্ট আত্মা, শাকচুন্নি, ডাইনিবেগুনির’ আসর বেশি থাকে। প্রদীপের আগুনে আগুনদেবতা অশুভ শক্তিকে পুড়িয়ে নষ্ট করেন—এই ধারণা থেকেই ঘরের চারকোণে, পুকুরঘাটে ও উঠোনে প্রদীপ রাখা হত। আগুন মানে জীবন, আলোক, রক্ষা ও শক্তির উপস্থিতি।

 

কালীপুজোর প্রদীপজ্বালানো কোনো সাজসজ্জার অংশ নয়—এটি প্রাচীন আচার, তান্ত্রিক আহ্বান, পূর্বপুরুষ স্মৃতি, অশুভনাশ ও দেবীর শক্তির আলোক প্রতিষ্ঠা। ঘরে ঘরে প্রদীপ মানে একদিকে দেবীকে স্বাগত, অন্যদিকে নিজস্ব ভয়, অন্ধকার, মৃত্যুচিন্তা ও দুর্ভাগ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
আজ আলোর ঝলকানিতে অনেকেই এর মূল তাৎপর্য ভুলে গেছেন, কিন্তু বাংলার প্রদীপসন্ধ্যা এখনো বহন করে এক গভীর আত্মিক ইতিহাস—যেখানে প্রতিটি শিখা হল শক্তির চোখ, রক্ষার বলয় এবং আলোকের শপথ।

নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”।


Spread the love

শ্মশানে কালীপূজা: উৎপত্তি, আচার ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য

1666408151 befunky 2022 9 6 8 38 48 750x438
Spread the love

1666408151 befunky 2022 9 6 8 38 48 750x438

 

কালীপূজা বাংলার সবচেয়ে রহস্যময় ও আধ্যাত্মিক উৎসবগুলোর মধ্যে একটি। সাধারণভাবে আমরা কালীপূজা প্যান্ডাল বা মন্দিরে দেখি, কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে কিছু অঞ্চলে শ্মশানকেন্দ্রিক পূজা পালিত হয়ে আসছে। শ্মশান কেবল মৃত্যু ও অস্থায়ীত্বের প্রতীক নয়, বরং আধ্যাত্মিক শক্তি, রূপান্তর এবং ভয়শূন্যতার শিক্ষা দানের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা শ্মশান কালীপূজার উৎপত্তি, আচার ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব।

শ্মশানে কালীপূজার উৎপত্তি
গবেষণায় পাওয়া যায়, শ্মশান কালীপূজা প্রায় ১৮–১৯ শতকে গ্রামীণ তান্ত্রিক সম্প্রদায়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। প্রাচীন তান্ত্রিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে, শ্মশান বা মরা স্থান শক্তিশালী আধ্যাত্মিক শক্তি ধারণ করে, যা মন্ত্রপাঠ ও তপস্যার মাধ্যমে ভক্তের চেতনা শক্তিশালী করে। শ্মশান কালীপূজার মূল উদ্দেশ্য ছিল—মৃত্যু ও অশুভ শক্তির ভয় দূর করে, জীবনে নতুন শক্তি এবং মানসিক স্থিতি অর্জন করা।

আচার ও রীতি
শ্মশান কালীপূজায় সাধারণত রাতের নির্দিষ্ট সময়ে পূজা হয়। ঢাকের তাল, ধুনুচি বা প্রদীপ ব্যবহার, কিছু অঞ্চলে পশুবলি বা প্রতীকী রক্ত ব্যবহার করা হয়। মন্ত্রপাঠে মা কালীকে শক্তিশালী ও ভয়শূন্য রূপে আরাধনা করা হয়। যদিও আধুনিক শহরে পশুবলি খুবই কম হয়, গ্রামীণ অঞ্চলে প্রতীকী বা প্রথাগত আচার এখনও দেখা যায়।

আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
শ্মশান কালীপূজা মৃত্যুর অস্থায়ীত্ব, রূপান্তর ও পুনর্জন্মের প্রতীক। শাস্ত্র অনুযায়ী, শ্মশান হল এমন স্থান যেখানে মানুষ জীবনের প্রকৃত অর্থ এবং নৈতিকতা উপলব্ধি করতে পারে। মা কালী এখানে মৃত্যুর ভয় দূর করার, আত্মার শক্তি জাগানোর এবং অশুভ শক্তি প্রতিহত করার প্রতীক। এই পূজা ভক্তকে ভয়শূন্য করে এবং মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব
শ্মশান কালীপূজা শুধু আধ্যাত্মিক নয়, সামাজিকভাবে ও গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে এটি একটি ঐক্যের অনুষ্ঠান—পুরুষ, নারী ও শিশু সকলেই অংশগ্রহণ করে। পূজার মাধ্যমে মানুষ মৃত্যুর সাথে সম্পর্কিত ভয়, দুঃখ ও সংবেদনাকে সামাজিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ পায়। এটি ভক্তদের মধ্যে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার পাশাপাশি সমাজের ঐক্যও গড়ে তোলে।

শ্মশান কালীপূজা প্রাচীন তান্ত্রিক, আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রকাশ। এর উৎপত্তি শ্মশানের শক্তিশালী পরিবেশ ও তান্ত্রিক রীতিতে, আচার হল মৃত্যু ও অশুভ শক্তি দূর করার প্রতীক। এটি কেবল মা কালীকে আরাধনার মাধ্যম নয়, বরং মানুষের আত্মিক শক্তি, নৈতিকতা এবং ভয়শূন্যতার শিক্ষা প্রদান করে। শ্মশান কালীপূজা আমাদের শেখায়—জীবনের অস্থায়ীত্ব, মৃত্যু এবং অশুভ শক্তির সঙ্গে সম্পর্ককে ভয় না করে, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক শিক্ষা গ্রহণের মূল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”।


Spread the love