<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Sri Yoga Center Ashram's Blog - The Bengal flavour of Health Science,art and culture. - Page 6

একাদশী পালনের অর্থ ও গুরুত্ব

Images (1) (6)
Spread the love

Images (1) (6)

 

হিন্দু ধর্মে একাদশী একটি অত্যন্ত পবিত্র ও মহৎ তিথি। প্রতি চন্দ্রমাসে দুটি করে একাদশী তিথি পড়ে—একটি শুক্ল পক্ষের, অপরটি কৃষ্ণ পক্ষের। এই দিনটি মূলত উপবাস, সাধনা, প্রার্থনা এবং আত্মশুদ্ধির প্রতীক। ‘একাদশী’ শব্দের অর্থ ‘একাদশ তিথি’ বা চন্দ্রপঞ্জিকার ১১তম দিন। হিন্দু ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, এই তিথিতে উপবাস করলে পাপ মোচন হয় ও ঈশ্বরের কৃপা লাভ করা যায়।

 

একাদশী পালনের ধর্মীয় অর্থ:

একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হল ঈশ্বর ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা। স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, ও ব্ৰহ্ম বৈবর্ত পুরাণে একাদশীর মাহাত্ম্য বহুবার বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বাস করা হয়, এই দিনে উপবাস ও পূজা করলে সব পাপ ধুয়ে যায় এবং মোক্ষ লাভ হয়।
একাদশী ব্রতের সাথে বিষ্ণু ভক্তি ও আত্মসংযমের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই দিনে ভক্তরা একমনে ভগবানের নাম জপ করেন, ভগবতগীতা পাঠ করেন এবং দান-ধ্যান করেন।

 

একাদশী পালনের আধ্যাত্মিক অর্থ:

একাদশী ব্রত আত্মসংযম ও ইন্দ্রিয়নিগ্রহের প্রতীক। “একাদশ” বলতে মানবদেহের ১১টি ইন্দ্রিয় বোঝানো হয়—পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পাঁচ কর্মেন্দ্রিয় এবং মন। এই দিনে এই ১১টি ইন্দ্রিয়কে সংযত রাখাই ‘একাদশী’ ব্রতের গূঢ় তাৎপর্য। তাই শুধু খাদ্য ত্যাগ নয়, বরং মন, বাক্য ও আচরণেও সংযম পালনই একাদশীর প্রকৃত অনুশীলন।

 

উপবাস ও খাদ্যাভ্যাস:

একাদশীতে সাধারণত শস্য জাতীয় খাদ্য যেমন চাল, গম, ডাল ইত্যাদি বর্জন করা হয়। অনেকেই নির্জলা উপবাস পালন করেন, আবার কেউ ফলাহার বা শুধু জল গ্রহণ করে ব্রত পালন করেন। এ নিয়মের পেছনে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধির দিক।

আধুনিক বিজ্ঞানও বলে, নিয়মিত বিরতিতে উপবাস পালন করলে শরীরের বিপাকক্রিয়া (metabolism) উন্নত হয় এবং মানসিক প্রশান্তি আসে।

 

একাদশীর প্রকারভেদ:

প্রতি মাসে দুটি করে একাদশী হয়, অর্থাৎ বছরে ২৪টি। অতিরিক্ত মাস (অধিকমাস) এলে বছরে ২৬টি বা ২৭টি একাদশী হয়। একাদশীগুলোর আলাদা আলাদা নাম ও মাহাত্ম্য রয়েছে, যেমন:

নির্জলা একাদশী (সবচেয়ে কঠিন ব্রত),

পাণ্ডব নির্ব্জলা একাদশী,

উত্তান একাদশী (দেবোঠান),

রাম একাদশী,

পুত্রদা একাদশী ইত্যাদি।

 

সামাজিক ও নৈতিক গুরুত্ব:

একাদশী ব্রত মানুষকে আত্মসংযম, ধৈর্য, ত্যাগ ও নিয়মিত আধ্যাত্মিক চর্চায় উৎসাহিত করে। এটি পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক সুস্থতার পথও প্রশস্ত করে। উপবাসের সঙ্গে সঙ্গে নীতিনিষ্ঠ জীবনযাপন ও সৎকর্ম অনুশীলন করলে সমাজে একতা ও সৌহার্দ্য বজায় থাকে।

 

একাদশী শুধু একটি উপবাসের দিন নয়, বরং এটি এক আত্মবিশুদ্ধির দিন। এটি শরীর, মন ও আত্মার সাধনার এক সমন্বিত প্রক্রিয়া। ব্রত পালনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহকে সংযত করি, পাপ থেকে মুক্তি পাই এবং ভগবানের কৃপা অর্জনের পথ খুঁজি। অতএব, একাদশী পালনের পেছনে রয়েছে এক গম্ভীর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তাৎপর্য, যা আমাদের জীবনকে আরও উজ্জ্বল ও পূর্ণ করে তোলে।

নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”।


Spread the love

আমরা বৃহস্পতিবার “লক্ষ্মীবার” হিসেবে পালন করি কেন?

Images (1)
Spread the love

Images (1)

 

হিন্দু ধর্মে প্রতিটি বার (দিন) একেকটি দেবতা বা দেবীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যেমন সোমবার শিবের দিন, মঙ্গলবার হনুমানের, আর বৃহস্পতিবার বা লক্ষ্মীবার হলো লক্ষ্মীদেবীর পুজোর জন্য বিশেষ দিন। এই দিনে বহু হিন্দু গৃহবধূ উপবাস পালন করেন, লক্ষ্মীদেবীর পূজা করেন এবং পরিবারে সুখ, শান্তি ও ধন-সম্পদের প্রার্থনা করেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, ঠিক কেন বৃহস্পতিবারকেই ‘লক্ষ্মীবার’ হিসেবে মানা হয়? চলুন, এর ঐতিহাসিক, শাস্ত্রীয় ও সামাজিক দিক থেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করি।

বৃহস্পতিবার – ‘লক্ষ্মীবার’ এর ধর্মীয় ভিত্তি

বৃহস্পতি গ্রহ ও লক্ষ্মীর সম্পর্ক :

বৃহস্পতিবারকে সংস্কৃত ভাষায় বলে “গুরুবার” বা “বৃহস্পতিবার”, যেটি বৃহস্পতি গ্রহ এবং দেবগুরু বৃহস্পতি-র সঙ্গে সম্পর্কিত। বৃহস্পতি গ্রহকে হিন্দু জ্যোতিষে ধন, ধর্ম, জ্ঞান, ভাগ্য এবং পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। লক্ষ্মীদেবী যেহেতু ধন ও সমৃদ্ধির দেবী, তাই এই দিনের সঙ্গে তাঁর এক প্রাকৃতিক মিল রয়েছে।

বৃহস্পতির আশীর্বাদ থাকলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি আসে, আর লক্ষ্মী পূজা সেই সৌভাগ্যকে আহ্বান করে। এই বিশ্বাস থেকেই বৃহস্পতি ও লক্ষ্মীর মধ্যে এক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

 

পুরাণ ও লোকবিশ্বাস অনুযায়ী ব্যাখ্যা

পুরাণ অনুসারে:

একাধিক পুরাণে (যেমন: স্কন্দ পুরাণ, পদ্ম পুরাণ) বলা হয়েছে যে লক্ষ্মীদেবী সেই গৃহে বাস করেন যেখানে শুচিতা, ধর্মাচরণ, ও নিয়মিত পূজা-পাঠ করা হয়। বৃহস্পতির দিন যেহেতু ধর্মীয় আচরণের জন্য শুভ, তাই এই দিনটি বিশেষভাবে লক্ষ্মীপূজার জন্য নির্বাচিত হয়েছে।

লোককথা:

একটি বিখ্যাত লোককথা অনুসারে, এক দরিদ্র পরিবারে এক গৃহবধূ প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মী পূজা ও উপবাস পালন করতেন। ধীরে ধীরে তার পরিবারে ধন-সম্পদের আগমন ঘটে এবং জীবনে পরিবর্তন আসে। প্রতিবেশীরা তা দেখে অনুসরণ করতে শুরু করে। এইভাবে বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীপূজার প্রচলন বাড়ে।

 

উপবাস ও ব্রতের আধ্যাত্মিক দিক

লক্ষ্মীবার ব্রত মূলত নারীরা পালন করেন। এই ব্রতের মাধ্যমে তারা তাঁদের গৃহে লক্ষ্মীর আগমন কামনা করেন। উপবাসের ফলে শরীর ও মন উভয়ই শুদ্ধ হয়। পূজার আগে গৃহপরিচ্ছন্নতা, ফুল, প্রদীপ, হলুদ ও চন্দনের ব্যবহার – এগুলো সবই শুদ্ধতার প্রতীক।

 

বৃহস্পতির প্রতিকূল প্রভাব দূর করার উপায়

হিন্দু জ্যোতিষে যাদের বৃহস্পতি গ্রহ দুর্বল, তাঁদের জীবনে আর্থিক অনিশ্চয়তা, ধর্মীয় সংকট ও পারিবারিক অশান্তি দেখা দিতে পারে। তাই বৃহস্পতির শুভ প্রভাব অর্জনের জন্য লক্ষ্মীপূজা সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

সামাজিক ও পারিবারিক প্রভাব

বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীবার পালন:

গৃহিণীদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশাসন ও ধৈর্য তৈরি করে

পরিবারে একটি ধর্মীয় পরিবেশ গড়ে তোলে

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে একটি নির্দিষ্ট দিনে আত্মসংযম ও শুচিতা পালনের সুযোগ দেয়

ছোটদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ গড়ে তোলে

 

লক্ষ্মীবার পালনের নিয়ম সংক্ষেপে

সকালে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে উপবাস শুরু

গৃহপরিচ্ছন্নতা ও পূজাস্থানের শোভা বৃদ্ধি

লক্ষ্মীদেবীর প্রতিমা বা ছবি স্থাপন করে পূজা

প্রদীপ জ্বালানো, হলুদ-সাদা ফুল নিবেদন, খির বা পায়েস প্রসাদ

‘লক্ষ্মীবার ব্রতের কথা’ পাঠ

সন্ধ্যায় উপবাস ভঙ্গ করে সাদাভোজ

 

বৃহস্পতিবারকে ‘লক্ষ্মীবার’ হিসেবে মানার পেছনে রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, শাস্ত্রীয় ভিত্তি, সামাজিক রীতিনীতি ও আধ্যাত্মিক অনুশীলনের সম্মিলন। এটি শুধুমাত্র একটি পূজা নয়, বরং গৃহস্থ জীবনের সৌভাগ্য, শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার এক পবিত্র চর্চা। লক্ষ্মীদেবীর কৃপা লাভের এই উপায় যুগ যুগ ধরে বিশ্বাস, অভিজ্ঞতা ও আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


Spread the love

হিন্দুধর্মে ঈশ্বর বা দেবী-মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়া হয় কেন?

Images (1) (4)
Spread the love

Images (1) (4)

 

ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সংস্কৃতিতে দেবী বা ঈশ্বরের মূর্তিকে জলে বিসর্জন একটি বহু প্রাচীন এবং গভীর অর্থবাহী আচার। এটি কেবল একটি ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং এর মধ্যে নিহিত রয়েছে দর্শন, প্রকৃতি-সচেতনতা ও মানবজীবনের গভীর শিক্ষা। এই প্রবন্ধে বিসর্জনের কারণ, তাৎপর্য ও তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হল।

সৃষ্টি ও লয়ের চক্রের প্রতিফলন

হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয় যে এই জগৎ অনিত্য, অর্থাৎ এখানে যা সৃষ্টি হয়েছে তা একদিন ক্ষয় বা লয়ের মধ্যে মিলিয়ে যাবে। দেবীর মূর্তি সাধারণত নদীর মাটি, খড়, কাঠ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। পূজা-অর্চনা শেষে সেই মূর্তি জলে বিসর্জনের মাধ্যমে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরে যায়। এটি প্রকৃতির চক্র—সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে প্রতিফলিত করে এবং মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী।

ঈশ্বর সর্বব্যাপী — মূর্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নন

হিন্দু ভাবধারায় ঈশ্বর কেবল মূর্তির মধ্যে আবদ্ধ নন, বরং সর্বত্র বিরাজমান। পূজার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের এক বিশেষ রূপের কাছে প্রার্থনা করে, আর বিসর্জনের মাধ্যমে বোঝায় যে ঈশ্বর আবার আমাদের চারপাশে, প্রকৃতির প্রতিটি অংশে মিশে গেছেন। এটি মানুষের মন থেকে ‘মূর্তিপূজা’ কে ‘ভাবপূজা’-তে রূপান্তরিত করে।

বৈরাগ্য ও অনাসক্তির শিক্ষা

পূজা বা উৎসবের সময় মানুষের মনে গভীর আসক্তি ও আবেগের জন্ম হয়। বিসর্জনের মাধ্যমে সেই আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়। এ শিক্ষা হল জীবনের যেকোনো প্রিয় জিনিস বা মানুষকে সঠিক সময়ে ছেড়ে দিতে জানা এবং তাতেই জীবনের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার দিক

পুরনো নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিমা তৈরি হতো গঙ্গার মাটি, খড়, কাঠ ও প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে; যা নদীতে মিলিয়ে আবার প্রকৃতিকে কোনও ক্ষতি করত না। এর মাধ্যমে প্রকৃতির উপাদান আবার প্রকৃতির মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার এক পরিবেশবান্ধব প্রথা গড়ে উঠেছিল। যদিও এখন রাসায়নিক রঙ ও প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবুও প্রাচীন রীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা।

উৎসবের সমাপ্তি ও নতুন সূচনা

বিসর্জন উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নির্দেশ করে। এটি এক ধরণের মানসিক প্রস্তুতি, যেখানে মানুষ পূজার আনন্দ ও উদ্দীপনা শেষে আবার দৈনন্দিন জীবনে ফেরার প্রেরণা পায়। এই সমাপ্তির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আগামী বছরের নতুন পূজার আশা ও অপেক্ষা।

দেবী বা ঈশ্বরের মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়ার মধ্যে কেবল একটিমাত্র আচার নয়, বরং রয়েছে গভীর দার্শনিক শিক্ষা, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও মানব জীবনের এক মহৎ বার্তা। এটি শেখায়—সব সৃষ্টি একদিন লয়ে মিলে যায়, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরন্তন। তাই বিসর্জন আমাদের মনে করায়—ত্যাগেই আছে শান্তি, আর অনাসক্তির মধ্যেই আছে জীবনের আসল সৌন্দর্য।


Spread the love