<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research sridoctor - Sri Yoga Center Ashram's Blog - Page 7

বিজয়ায় সিঁদুর কেন খেলা হয়?

Images

Images

বাংলা হিন্দু সংস্কৃতিতে দুর্গাপূজা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি আবেগ, ঐতিহ্য ও আনন্দের এক বিশাল উৎসব। এই পূজার শেষ দিনে, অর্থাৎ বিজয়া দশমীতে, সম্পন্ন হয় একটি বিশেষ রীতি — সিঁদুর খেলা। এই রীতি মূলত বিবাহিত হিন্দু নারীদের মধ্যে পালন করা হয়, যা একদিকে যেমন ধর্মীয় বিশ্বাসে গভীরভাবে জড়িত, অন্যদিকে তেমনি সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবেও পরিগণিত।

 

সিঁদুর খেলার মূল অর্থ ও তাৎপর্য:

সিঁদুর হিন্দু বিবাহিত নারীর জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অলংকার। মঙ্গলসূত্র বা শাঁখা-পলার মতো, সিঁদুরও বিবাহিত জীবনের এক শক্তিশালী প্রতীক। তাই সিঁদুর খেলা শুধুমাত্র একটি রঙিন উৎসব নয়, বরং এটি মেয়েদের পারস্পরিক শুভকামনার এক সুন্দর বহিঃপ্রকাশ। দুর্গাপূজা নিজেই নারীশক্তির জাগরণ। আর বিজয়ার দিনে, মা দুর্গা বিদায় নিলেও নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে মূলত সেই ‘নারীশক্তি’-কেই নিজেদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। যেন শক্তি মা চলে গেলেও, তার কিছুটা আমরা নিজেদের মধ্যেই ধারণ করে রাখি।

বিজয়া দশমীর প্রেক্ষাপটে সিঁদুর খেলা:

বিজয়া দশমী হলো সেই দিন, যেদিন মা দুর্গা তার কৈলাসে ফিরে যান — এই বিদায়ের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আবেগ, ভালোবাসা এবং এক বিষাদের সুর। এই সময় নারীরা মাকে সিঁদুর দিয়ে, মিষ্টি খাইয়ে ও প্রণাম করে বিদায় জানান। এরপর তারা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন এবং মঙ্গল কামনা করেন।

 

সিঁদুর খেলার উদ্দেশ্য ও বিশ্বাস:

১. স্বামীর দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের কামনা:
বিবাহিত নারীরা বিশ্বাস করেন, এই দিনে সিঁদুর পরিধান ও বিনিময়ের মাধ্যমে তারা স্বামীর দীর্ঘ জীবন ও পরিবারের কল্যাণ কামনা করেন।

2. দাম্পত্য জীবনের স্থায়িত্বের প্রতীক:
সিঁদুর একদিকে যেমন নারীকে ‘সাধ্বী’ হিসেবে চিহ্নিত করে, তেমনি এটি দাম্পত্য জীবনের শক্ত বন্ধনেরও প্রতীক।

3. নারীদের পারস্পরিক সৌহার্দ্য:
একে অপরকে সিঁদুর লাগিয়ে নারীরা সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করেন, যা নারীর প্রতি নারীর সম্মান ও ভালোবাসার প্রকাশ।

4. উৎসবের আনন্দ:
সিঁদুর খেলার মাধ্যমে পূজার শেষ দিনে এক বিষাদের মধ্যেও আনন্দের রঙ ছড়িয়ে পড়ে। এই রঙিন পরিপূর্ণতা সবার মনকে আনন্দিত করে তোলে।

 

সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মূল্যায়ন:

আজকের দিনে, সিঁদুর খেলা শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিধিতে সীমাবদ্ধ নেই। এটি হয়ে উঠেছে এক সামাজিক মিলনক্ষেত্র। বহু পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, এমনকি অজানা মানুষও এই উৎসবে একত্রিত হন। ছবি তোলা, হেসে-খেলে রঙে মাখামাখি হওয়া — সব মিলিয়ে এটি এক হৃদ্যতাপূর্ণ মিলনমেলা।

 

সিঁদুর খেলা কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়; এটি নারীর প্রতি নারীর ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও একতা প্রকাশের এক অসাধারণ প্রতীক। এটি বিজয়া দশমীর বিষাদের আবহেও এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করে। যুগ বদলেছে, সময়ের সাথে অনেক কিছু পাল্টেছে, কিন্তু সিঁদুর খেলার ঐতিহ্য আজও তার আবেদন হারায়নি। বরং এটি নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলা সংস্কৃতির এক গর্বিত পরিচয় হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আর এখন শুধু দুর্গাপূজা নয় বিশেষ করে সব পুজোতেই সিঁদুর খেলার রীতি প্রচলিত হয়েছে।

অঞ্জলি দেওয়া – শুধু ফুল নয়, আত্মসমর্পণের প্রতীক।

Images (1) (1)

Images (1) (1)

 

দুর্গাপূজো হোক বা অন্য যেকোনো পূজা – দেবীর চরণে অঞ্জলি দেওয়া আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। অনেকেই ভাবেন, অঞ্জলি মানে হাতে ফুল নিয়ে প্রণাম করা বা মন্ত্রপাঠের অংশ। কিন্তু অঞ্জলি আসলে শুধুমাত্র একমুঠো ফুল নয়; এটি আমাদের মনের ভক্তি, বিনয় আর সর্বোচ্চ আত্মসমর্পণের প্রকাশ। এই রীতি যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনি এর গভীরে লুকিয়ে আছে আত্মিক ও দার্শনিক তাৎপর্য।

 

🌸 অঞ্জলি শব্দের অর্থ

‘অঞ্জলি’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “অঞ্জ্” ধাতু থেকে, যার অর্থ হল “লেপন” বা “আবরণ”। পরে এর অর্থ দাঁড়ায় – দু’হাত জোড় করে তৈরি হওয়া এক ধরনের পাত্র বা “হস্তপুট”, যেখানে আমরা কিছু অ捧ি করে নিবেদন করি। তাই অঞ্জলি আসলে শুধু হাতের মুঠোয় রাখা ফুল নয়, সেই হাতের আকারে তৈরি পবিত্র পাত্রে নিজের মন, প্রাণ ও চেতনা নিবেদন করা।

 

🪷 শুধু ফুল নয়, আত্মসমর্পণ

অঞ্জলি দেবতাকে দেওয়া হয়, কিন্তু দেবতার জন্য দেবতাকে কিছু দেওয়ার আসলে প্রয়োজন নেই। আসল অর্থ হল – আমরা নিজের অহংকার, লোভ, ক্রোধ, হিংসা, দ্বন্দ্ব এইসব ত্যাগ করে ঈশ্বরের চরণে আত্মসমর্পণ করছি। ফুল এখানে প্রতীক মাত্র; আসল উপহার হল অন্তরের পবিত্রতা আর মনোসংযম।

ত্রিবার অঞ্জলি: এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

দুর্গাপূজোর অঞ্জলি তিনবার উচ্চারিত মন্ত্রে দেওয়া হয়। এই তিনবার অঞ্জলি দেবীর কাছে শরীর, মন ও বাক্যের দ্বারা সমস্ত পাপক্ষয় ও শুদ্ধতার প্রার্থনা – যাতে আমরা শুধু বাহ্যিক নয়, অন্তরেরও শুদ্ধি অর্জন করতে পারি।

– প্রথম অঞ্জলি: শরীরের অপবিত্রতা ত্যাগের সংকল্প
– দ্বিতীয় অঞ্জলি: মনের অশুদ্ধতা দূর করার প্রার্থনা
– তৃতীয় অঞ্জলি: বাক্যের দোষ ও কুকথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনা

সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক

অঞ্জলি সাধারণত একসাথে অনেক মানুষ মিলে দেওয়া হয়। এতে তৈরি হয় এক ধরনের সমষ্টিগত ভক্তি আর মানসিক সংযোগ। সেই সময় মানুষ একে অপরকে পাশে পায়, সমাজে একাত্মতার অনুভূতি জন্মায়। অঞ্জলি দিতে গিয়ে মাথা নত করা মানে নিজের ইগো বা অহংকার ত্যাগ করার শিক্ষা।

 

অঞ্জলি কেবল ফুল নয়, আত্মসমর্পণের মাধ্যম। দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে আমরা যেন বলি: “মা, যা কিছু ত্রুটি আমার মধ্যে আছে, তা তোমার হাতে সঁপে দিলাম। আমাকে সত্যিকারের ভালো মানুষ হতে শেখাও।” এই অঞ্জলিই আমাদের শিখিয়ে দেয় – ঈশ্বরের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার আমাদের পবিত্র মন ও নিঃস্বার্থ আত্মা।

কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত?

Sleep

Sleep

 

ঘুম আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু শুধু ঘুমানোই যথেষ্ট নয়; সঠিক দিক বা অবস্থানও আমাদের শরীর ও মনে সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, মাথা কোন দিকে রেখে ঘুমানো উচিত – এ বিষয়ে প্রাচীন বাস্তুশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ এবং আধুনিক বিজ্ঞান তিনটিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে।

 

বাস্তুশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাস অনুযায়ী

প্রাচীন ভারতে বাস্তুশাস্ত্র ও যোগশাস্ত্রে বলা হয়েছে, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে আমাদের শরীরের নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্রের মিল রাখা উচিত। এজন্য মাথা রাখার দিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়:

দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

বাস্তুশাস্ত্র মতে এটি সবচেয়ে শুভ।

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।

এটি হৃদযন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, ঘুমের গুণমানও উন্নত হয়।

পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

এটি বিশেষ করে শিক্ষার্থী, গবেষক ও মানসিক কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ভালো।

বলা হয়, পূর্বদিকে মাথা রেখে ঘুমালে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্থিরতা আসে।

পূর্বদিক হলো সূর্যের উদয়ের দিক, যা জীবনীশক্তির প্রতীক।

উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত নয়

বাস্তুশাস্ত্র মতে এটি অশুভ।

শরীরের চৌম্বক ক্ষেত্র এবং পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বিপরীতমুখী হয়ে যায়।

ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, মাথাব্যথা ও দুশ্চিন্তা হতে পারে, এমনকি ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটতে পারে।

পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

এটি ততটা অশুভ নয়, তবে খুব ভালোও নয়।

কিছু মতে, এটি অলসতা ও মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

 

আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী

বিজ্ঞানীরা যদিও মাথা কোন দিকে থাকবে তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করেননি, তবু কিছু পর্যবেক্ষণ আছে:

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব আমাদের দেহের উপর সামান্য হলেও পড়তে পারে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরদিকে মাথা রেখে ঘুমালে রক্তচাপ বা হৃৎস্পন্দনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমানো (Left lateral position):

এটি পেটের জন্য ভালো, হজম শক্তি বাড়ায়।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমায়।

হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমায়।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও এই অবস্থান উপকারী।

 

সংক্ষেপে: কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত?

দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো।

পূর্বদিকে মাথা রেখে ঘুমানোও ভালো, বিশেষ করে পড়াশোনা বা মানসিক কাজে।

উত্তর দিকে মাথা রাখা উচিত নয়।

শরীর বাঁ দিকে কাত হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যকর।

 

শুধু পর্যাপ্ত ঘুম নয়, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি ও দিকও আমাদের জীবনের মান উন্নত করে। প্রাচীন জ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয় আমাদের শেখায়:
দক্ষিণ বা পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমানোই সবচেয়ে নিরাপদ ও উপকারী।
এতে শুধু আমাদের শরীর নয়, মনও প্রশান্তি ও শক্তি পায়।