https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4007259/
Those who are diabetics and worried about their kidneys ,those who have raised creatinine with or without CKD , please read this promising article.
https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4007259/
Those who are diabetics and worried about their kidneys ,those who have raised creatinine with or without CKD , please read this promising article.
নরেন্দ্রনাথকে দেখে ঠাকুরের খুশী ধরে না। এদিনও ঠাকুর তাঁকে গান শোনাতে বললেন।
নরেন্দ্রনাথ এদিন ঠাকুরকে দুটি গান শুনিয়েছিলেন।
প্রথম গানটি নরেন্দ্রনাথ গাইলেন —
“মন চল নিজ নিকেতনে।
সংসার বিদেশে, বিদেশীর বেশে, ভ্রম কেন অকারণে॥
….. মন চলো নিজ নিকেতনে।”
‘কই, আর একখানা গা’ — বললেন ঠাকুর।
নরেন্দ্রনাথ আবার গান ধরলো, গানটি বেচারাম চট্টোপাধ্যায় রচিত —
“যাবে কি হে দিন আমার বিফলে চলিয়ে।
আছি নাথ দিবানিশি আশাপথ নিরখিয়ে॥
তুমি ত্রিভুবন নাথ, আমি ভিখারি অনাথ।
কেমনে বলিব তোমায় এস হে মম হৃদয়ে॥
হৃদয়-কুটীর-দ্বার, খুলে রাখি আনিবার।
কৃপা করি একবার এসে কি জুড়াবে হিয়ে॥”
গান শুনে ভাবে বিভোর ঠাকুর, হঠাৎ চমকিয়ে উঠে নরেন্দ্রনাথের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন উত্তরের বারান্দার ঘরে। বন্ধ হলো বাইরের দরজা। মুখোমুখি বসলেন দুজনে।
ঠাকুরের চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে, কেঁদে কেঁদে বলছেন, “তোর কি মায়া দয়া নেই ? কোথায় ছিলি এতদিন ? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চেয়ে আছি তোর পথ পানে। কি করে আমায় ভুলে ছিলি ?”
“সেদিন মাঝরাতে তুই এলি আমার ঘরে, আমায় ঘুম থেকে টেনে তুললি। বললি, আমি এলাম….”
ঠাকুরের কথা শুনে চমকে উঠলো নরেন্দ্রনাথ।
এই সাক্ষাত নরেন্দ্রনাথের জীবনে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “তাহাকে [রামকৃষ্ণ] একজন সাধারণ লোকের মতো বোধ হইল, কিছু অসাধারণত্ব দেখিলাম না। অতি সরল ভাষায় তিনি কথা কহিতেছিলেন, আমি ভাবিলাম, এ ব্যক্তি কি একজন বড় ধর্মাচার্য হইতে পারেন ? আমি সারা জীবন অপরকে যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছি, তাহার নিকটে গিয়া তাহাকেও সেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম,
‘মহাশয়, আপনি কি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন ?’
তিনি উত্তর দিলেন — ‘হাঁ।’
‘মহাশয়, আপনি কি তাহার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারেন ?’
‘হাঁ’।
‘কি প্রমাণ ?’
‘আমি তোমাকে যেমন আমার সম্মুখে দেখিতেছি, তাহাকেও ঠিক সেইরূপ দেখি, বরং আরও স্পষ্টতর, আরও উজ্জ্বলতররূপে দেখি।’
আমি একেবারে মুগ্ধ হইলাম।”
.
জয় ঠাকুর
.
(সংগৃহীত)
আজ থেকে ১৩৫ বছর আগের ব্রিটিশ কোলকাতা, ১লা জানুয়ারী ১৮৮৬, ১৮ই পৌষ ১২৯২, কৃষ্ণা একাদশী, শুক্রবার, ইংরেজি নববর্ষ, ছুটির দিন।
ঠাকুর তখন কাশীপুর উদ্যানবাটিতে। সকাল থেকেই ঠাকুর সুস্থ রয়েছেন আর বেলা যত বাড়ছে ততই কাশীপুর উদ্যানবাটির বাগানে ঠাকুরের ভক্তরা এসে মিলিত হচ্ছেন। ভক্তরা জমা হয়েছে যদি একফাঁকে ঠাকুরকে একটু দেখা যায়। ছুটি তাই অনেকক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে। ইংরেজি বছরের প্রথম দিন, সবারই ইচ্ছে ঠাকুরকে দর্শন করে।
ঠাকুর তখন ওপরে ছিলেন। দুপুর তিনটে নাগাদ হঠাৎ তিনি রামলালকে বলেন ‘আজকে একটু ভালো বোধ করছি, আজকে একটু বাগানে বেড়াবো’।
‘ওরে ওরা আমার জন্য সব বসে আছে’। ঠাকুর হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে উঠলেন : ‘আমাকে জামা-কাপড় দাও, আমি পরব, সাজব, যাব আমি বাগানে বেড়াতে।’ একি অসম্ভব কথা ! শয্যাশায়ী রোগী কিভাবে নীচে যাবে। এদিকে তিনি বলে চলেছেন, ‘মনোহর বেশ পরব। তেলধুতি নয়, ধোয়া ধুতি। নিয়ে এস আমার বনাতের জামা। আমার কানঢাকা টুপি। আমার ফুলকাটা মোজা।’
ঠাকুর লালপেড়ে ধুতি পরলেন। গায়ে দিলেন সবুজ বনাতের জামা। মোজা পায়ে চটিজুতো পরলেন। পায়ের জুতোটি লতাপাতা আঁকা। মাথায় আঁটলেন কাপড়ের কানঢাকা সবুজ টুপি। রোগশীর্ণ মুখখানি সূর্যের দীপ্তিতে ঝলমলে, করুণার রসে লাবণ্যপূর্ণ। চক্ষে আজ তাঁর বিশ্বরূপ দর্শন দানের ইঙ্গিত। রামলাল ওঁকে সাজিয়ে দিলেন। সাজগোজ শেষ করে নিজে হেঁটে নেমে চললেন সিঁড়ি বেয়ে।
সবাই দেখলেন ঠাকুর সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন। নরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং অনান্য সন্ন্যাসীরা ভাবলেন, আগের দিন রাতে তাঁরা তপস্যা করেছিলেন বলেই বোধহয় ঠাকুর নীচে নেমে এলেন। ওঁরা তখন সবাই নীচে একটা ঘরে বিশ্রাম করছিলেন। ওদিকে সারদানন্দজি (শরৎ মহারাজ) আর অদ্ভুতানন্দজি অনেকদিন পর ঠাকুর রোগশয্যা ত্যাগ করে নীচে নেমেছিলেন বলে সেই অবসরে ঠাকুরের ব্যবহৃত বিছানা রোদে দিতে ব্যস্ত ছিলেন। ভক্তদের উল্লাস তাঁদের কানে গেলেও তাঁরা নেমে আসার কোনও উৎসাহ দেখাননি।
ঠাকুর একেবারে সোজা এসে উপস্থিত হলেন সামনের মাঠে যেখানে গৃহীভক্তরা জমায়েত হয়েছে। চলে এলেন সেই গৃহীদের আহ্বানে যারা পাপী, তাপী, দুর্গত, নানা বেদনায় জর্জর, সংশয়ে, অবিশ্বাসে পীড়িত, আকাঙ্ক্ষা, অহংকারে অভিভূত।
প্রায় ত্রিশজন গৃহী ভক্ত এসেছেন। এসেছেন গিরিশ ঘোষ, অতুল ঘোষ, রামচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় সেন, হারান দাস, কিশোরী রায়, বৈকুন্ঠ সান্যাল, নবগোপাল ঘোষ, হরমোহন মজুমদার, মাস্টারমশাই মহেন্দ্র গুপ্ত, হরিশ মুস্তাফি, চুনীলাল বসু, উপেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সকলে ভাবলেন, একি সত্যি না দিবাস্বপ্ন ? একসাথে এতগুলি লোকের দৃষ্টিভ্রম কিভাবে হয় ?
তুমি নিজে থেকে এলে আজ আমাদের মধ্যে। তোমার দুয়ারে কত রক্ষী, কত পাহারাওয়ালা, কত নিয়মকানুন। সমস্ত নস্যাৎ করে তুমি এলে। কিভাবে বুঝলে আমাদের দুঃখ, আমাদের অসামর্থ্যের, অসাফল্যের বেদনা ?
গিরিশকে সামনে দেখে ঠাকুরের জিজ্ঞাসা, ‘গিরিশ, তুমি আমার সম্বন্ধে কী বলছ এখানে-সেখানে ? আমার মধ্যে তুমি কি দেখলে ?’
গিরিশ তৎক্ষণাৎ নতজানু হয়ে ঊর্ধ্বমুখে ঠাকুরকে বললেন, — ‘ব্যাস-বাল্মীকি যাঁর ইয়ত্তা করতে পারেনি, আমি তাঁর বিষয়ে কি বলব ?’ এই বলে পদপ্রান্তে করজোড়ে ঠাকুরের মুখপানে তাকিয়ে রইলেন। চারিদিকে জয়-জয় পড়ে গেল।
গিরিশ চন্দ্রের অনাবিল ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে ঠাকুর গিরিশের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে সমবেত ভক্তদের বললেন, ‘তোমাদের আর কী বলব, আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হোক।’
হঠাৎ করে ঠাকুরের আশীর্বাদে বা দিব্যস্পর্শে উপস্থিত ভক্তদের ভাবান্তর ঘটল। তখন কেউ কাঁদতে লাগল, কেউ হাসতে লাগল, কেউ দুহাত ওপরে তুলে নাচতে লাগল, কেউ বা ধ্যানে মগ্ন হল আবার কেউ চিৎকার করে অন্যদের ডাকতে লাগল ঠাকুরের কৃপা লাভের জন্য।
ঠাকুরও গিরিশের কথায় ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। সকলে তখন ‘জয় রামকৃষ্ণ’ বলে চিৎকার করতে লাগল আর স্পর্শ করা নিষেধ সত্ত্বেও তাঁর পদধূলি গ্রহণ করতে লাগল। চারদিকে চৈতন্যের ঢেউ পড়ে গেল। প্রনামের প্রেমপুষ্পাঞ্জলী পড়তে লাগলো পায়ের উপরে। যারা প্রতিজ্ঞা করেছিল ঠাকুর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ছোঁবেন না, সবাই সব ভুলে গেল।
রামচন্দ্র দত্ত অঞ্জলিভরে ফুল দিতে লাগল পায়ে। ঠাকুর তাকে স্পর্শ করলেন। দুটি জহুরী চাঁপা নিয়ে এল অক্ষয় সেন। ফুলদুটি পায়ে দিতেই ঠাকুর বক্ষ ছুঁয়ে দিলেন। কৃপার কল্পতরু হয়েছেন ঠাকুর। আত্মপ্রকাশ করেছেন। করেছেন অভয়প্রকাশ।
‘ওরে কোথায় কে আছিস এইবেলা চলে আয়। মুঠো মুঠো অভয় কুড়িয়ে নে। আশ্বাস কুড়িয়ে নে।’ আনন্দে চিৎকার করে ওঠে অক্ষয়। ‘চৈতন্যের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কুড়িয়ে নে ভারে ভারে। জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য যার যা খুশি। ঠাকুর কল্পতরু হয়ছেন। এমন দিন আর পাবিনা রে। কৃপার পাত্র উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন প্রভু। আয় নিয়ে যা দেখে যা।’
বেলেঘাটার হারাণ চন্দ্র দাস এ সময় ঠাকুরকে প্রণাম করা মাত্র ঠাকুর তার মাথায় পা ঠেকালেন, ঠিক নারায়ণ যেমন গয়াসুরের মাথায় পা দিয়ে তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
রামচন্দ্র দত্ত নবগোপাল ঘোষকে বলেন, ‘মশায়, আপনি কি করছেন ? ঠাকুর যে আজ কল্পতরু হয়েছেন। যান, যান, শীঘ্র যান। যদি কিছু চাইবার থাকে তো এই বেলা চেয়ে নিন।’ শুনে নবগোপাল দ্রুত ঠাকুরের কাছে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে বললেন, ‘প্রভু আমার কি হবে ?’ ঠাকুর একটু নীরব থেকে বললেন, ‘একটু ধ্যান-জপ করতে পারবে ?’ নবগোপাল বললেন – ‘আমি ছা-পোষা গেরস্ত লোক; সংসারের অনেকের প্রতিপালনের জন্য আমায় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, আমার সে অবসর কোথায় ?’ ঠাকুর বললেন – ‘তা একটু জপ করতে পারবে না ?’ নবগোপাল বললেন – ‘তারই বা অবসর কোথায় ? তখন ঠাকুর বললেন‚ ‘আমার নাম একটু একটু করতে পারবে তো ?’ নবকুমার বললেন – ‘তা খুব পারব।’ তখন ঠাকুর বললেন — ‘তা হলেই হবে — তোমাকে আর কিছু করতে হবে না।’
এ সময় ঠাকুরের পিছনে দাঁড়ানো রামলাল ভাবছিল — সকলেরই তো হল, আমার কি গাড়ু-গামছা বওয়া সার হল ? হঠাৎ ঠাকুর পিছন ফিরে তাকে বললেন — ‘কী রে রামলাল‚ অত ভাবছিস কেন ?’ এবারে তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের গা থেকে চাদর খুলে ফেলে বললেন — ‘দেখ দিকিনি এবার।’ রামলাল বললেন — ‘আহা, সে যে কী রূপ, কী আলো, কী জ্যোতি ! সে আর কী বলব ?’
উপেন্দ্র মুখোপাধ্যায় অর্থ প্রার্থনা করায় তাকে ঠাকুর বললেন ‘তোর অর্থ হবে’। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার একজন নামকরা ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন।
বৈকুণ্ঠ সান্যাল তাঁর কৃপা প্রার্থনা করলে ঠাকুর তাকে বললেন — ‘তোমার তো সব হয়ে গেছে।’ তখন বৈকুন্ঠ বললেন — ‘তা যাতে অল্পবিস্তর বুঝতে পারি তা করে দিন।’ ঠাকুর তখন তার বক্ষস্থল স্পর্শ করা মাত্র তার ভাবান্তর ঘটল। সে তখন চারদিকে শুধু ঠাকুরকে দেখতে লাগল। চিৎকার করে বলতে লাগল — ‘তোরা কে কোথায় আছিস — এই বেলা চলে আয়।’
গৃহী ভক্ত অতুল ও কিশোরী রায়কেও কৃপা করলেন। শেষে কে কোথায় বাদ পড়ে গেল খোঁজ করতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র, রাঁধুনি গাঙ্গুলিকে রান্নাঘর থেকে ধরে আনলেন। ঠাকুর তাকেও কৃপা করলেন।
উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে কেবল দুজনকে ঠাকুর ‘এখন নয়’ বলে কৃপা করলেন না বা স্পর্শ করলেন না। তারা খুবই দুঃখিত হয়েছিল। এঁদেরই একজন হরমোহন মিত্র। পরে ঠাকুর তাঁকে কৃপা করলে তাঁর যে অনুভূতি হয়েছিল তাতে তিনি ভ্রূ-যুগলের মধ্যে অনেক দেবদেবীর দর্শন পেয়েছিলেন। আর একজন প্রতাপ চন্দ্র হাজরা। ঠাকুর অবশ্য তাঁকে মৃত্যুকালে সশিষ্য দর্শন দিয়ে ধন্য করেছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের অকাতরে আশীর্বাদ দানের এই ঘটনাকে রামচন্দ্র দত্ত প্রমুখ গৃহী ভক্তেরা ‘কল্পতরু’ নামে চিহ্নিত করেন।
ঠাকুরের ত্যাগী সন্তানদের মতে ঠাকুর ছিলেন ‘নিত্য কল্পতরু’। তাঁর কাছে যা চাওয়া যায় তাই লাভ করা যায়। বৈরাগ্যবান যুবকদের অন্তর পূর্ণ করে রেখেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তাঁদের বৈরাগ্যদীপ্ত অন্তরে আর কোনও কিছু চাওয়ার ছিল না, এমনকি আধ্যাত্মিক অনুভূতিও না। পিতার ধন লাভ করবেন তাঁরা, তাঁরা যে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবমন্দিরের অন্তরঙ্গ। শ্রীরামকৃষ্ণ দেহরূপ, তাই তাঁদের কাছে এই বিশেষ ঘটনা ছিল ‘আত্মপ্রকাশ পূর্বক অভয়দান’।
দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তদের উদ্দেশে বলতেন, ‘যাওয়ার সময় হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে যাব।’ অর্থাৎ নিজ স্বরূপকে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে দিয়ে যাব।
শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তদের মধ্যে রামচন্দ্র দত্ত আর গিরিশ ঘোষ শ্রীরামকৃষ্ণকে ‘অবতার’ বলে প্রচার করতেন। শ্রীরাম আর শ্রীকৃষ্ণের পর দুয়ের সম্মিলিত রূপ ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’।
এইদিনে গিরিশ ঘোষ যখন বললেন কৃষ্ণ জীবনীকার ব্যাসদেব আর রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকির কথা, তখন শ্রীরামকৃষ্ণ নিজ স্বরূপকে তাঁদের কাছে স্বীকার করে নিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করলেন এক মহান আশীর্বাদ। ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’।
চৈতন্যস্বরূপ মানব সত্তা আজ আর নিজ বৈশিষ্ট্য মনুষ্যত্ব থেকে দূরে চলে গিয়েছে। পশুর সঙ্গে তাদের যে পার্থক্য আছে তাই তারা ভুলেছে। মানুষের ‘মান’ সম্বন্ধে ‘হুঁশ’ আনার জন্য এই আশীর্বাদ। আধ্যাত্মিকতা, ঈশ্বর, সন্ন্যাস–সব পরের কথা। আগে মানুষ, আর তার সঙ্গে সেই মনুষ্যেত্বর চেতনা।
এই চৈতন্যের বাণীকে রূপায়িত করতে হবে নিজের জীবনে। চৈতন্যলাভের পথই প্রকৃত ধর্ম পালনের পথ, এই পথের কোনও নাম নেই, বিভেদ নেই, দ্বন্ধ নেই। ধর্মকে গোষ্ঠী থেকে বের করে ব্যক্তির উপরে স্থাপিত করলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।
সেই নতুন চৈতন্যের পথই আমাদের লক্ষ্য হয়ে উঠুক, লাভ করুক বিশ্বজনীন এক রূপ। এই হল নতুন আন্দোলন, এই আন্দোলন বলে চলার কথা, মানুষ থেকে ভগবান হওয়ার যাত্রা, চেতনা লাভ করে চৈতন্য হওয়ার পথ। যে পথের সম্মুখে থাকবেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। নর হয়েও যিনি নরোত্তম।
.
ॐ স্থাপকায় চ ধর্মস্য সর্বধর্মস্বরূপিণে
অবতার বরিষ্ঠায় রামকৃষ্ণায় তে নমঃ॥
ধর্মের সংস্থাপক সর্বধর্মস্বরূপ, অবতারশ্রেষ্ঠ হে রামকৃষ্ণ, তোমাকে নমস্কার॥
.
(সংগৃহীত)
Today is the Birthday of SARAT MAHARAJ of RAMKRISHNA Order. I have collected some nice posts about Him from WhatsApp. I am presenting them. Thanks to all writers and those who posted these in Whatsapp today.
1.
১৮৬৫ খ্রীস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর শনিবার ( ৯পৌষ,১২৭২ সাল, শুক্লা ষষ্ঠীতিথি) স্বামী সারদানন্দ জন্মগ্রহণ করেন ৷
সারদানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী ৷
তেরো বৎসর বয়সে উপনয়নের পর তিনি অতি আগ্রহসহকারে নিয়মিত পূজাপাঠ ও জপধ্যানে মগ্ন হলেন ৷
তিনি এসময় ব্রহ্মসমাজে যাতায়াত করতেন ৷
১৮৮২ খ্রীস্টাব্দে তিনি হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন ৷
এই সময় তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করেন এবং প্রায় তিন বছর তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন ৷ ঠাকুরের দিব্যজীবনের বহু ঘটনার তিনি সাক্ষী ৷
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অন্তর্ধানের পর শরৎচন্দ্র বরানগর মঠে স্বাধ্যায় ও সাধনায় মগ্ন হন ৷
এই সময় সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় স্বামী সারদানন্দ ৷
তন্ত্রের সাধন-রহস্য জানবার জন্য তিনি পিতৃব্য ঈশ্বরচন্দ্রের কাছে ১৯০০ সালের ২৫ নভেম্বর তন্ত্রসাধনায় অভিষিক্ত হন ৷ তিনি শ্রীমা ও স্বামী ব্রহ্মানন্দের অনুমতি নেন ৷
ঠাকুর ও শ্রীমায়ের কৃপায় তিনি সাধনপথে দ্রুত অগ্রসর হন ৷ নারীমাত্রে মাতৃজ্ঞান তন্ত্রসাধনার প্রথম সোপান ৷
দেবীর প্রত্যক্ষদর্শন তার চরম সিদ্ধি ৷
১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত সারদানন্দ ভারতের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে ও হিমালয়ে তপস্যা করেন ৷
তারপর ১৮৯৬ সালে স্বামীজীর আহ্বানে তিনি পাশ্চাত্যে প্রচারের জন্য যান ৷
পাশ্চাত্যে ২বছর থেকে সারদানন্দ আবার স্বামীজীর নির্দেশে ভারতে ফিরে আসেন ৷
১৮৯৭ সালে স্বামীজী রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরে ১৯০১ সালে সারদানন্দকে সঙ্ঘের সেক্রেটারি করেন ৷
১৮৯৮ সালে স্বামীজী উদ্বোধনে পত্রিকা শুরু করেন এবং স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ সম্পাদক হন ৷
১৯০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ত্রিগুণাতীত বেদান্ত প্রচারের জন্য আমেরিকায় যান এবং সারদানন্দের ওপর পত্রিকার ভার পড়ে ৷
স্বামীজীর বই বিক্রি করে তাঁর কাছে জমা২৭০০ টাকা দিয়ে গৃহনির্মাণের কাজ শুরু করেন ৷
১৯০৯ সালে তিনি উদ্বোধন পত্রিকা ও শ্রীশ্রীমার বাসস্থানের জন্য বাড়ি তৈরির কজ সম্পূর্ণ হয় ৷
এর জন্য তিনি ১১০০০ অর্থ ধার করেন ৷
ধার পরিশোধের জন্য তিনি ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ’ লিখতে শুরু করেন ৷
প্রত্যহ অনেকক্ষণ ধ্যানজপ করবার পর তিনি লিখতে বসতেন ৷
তিনি যোগি-পুরুষ ছিলেন ৷ না হলে উদ্বোধনের ঐ হৈ চৈ পরিবেশের মধ্যে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ঐরূপ সুগভীর মহাগ্রন্থ রচনা সম্ভবপর ছিল না ৷
শ্রীমা বলতেনঃ ‘শরৎ হচ্ছে আমার ভারী ৷’
বলতেন ঃ ‘আমার ভার নেওয়া কি সহজ ? শরৎ ছাড়া কেউ ভার নিতে পারে এমন তো দেখিনি ৷ সে আমার বাসুকি, সহস্রফণা ধরে কত কাজ করেছে, যেখানে জল পড়ে সেখানেই ছাতা ধরে ৷’
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ একদিন পায়চারি করতে করতে সহসা যুবক শরতের ক্রোড়ে উপবিষ্ট হন ৷
কয়েক মুহূর্ত ঐভাবে থাকার পর তিনি উঠে যান ৷
উপস্থিত ভক্তদের ঐ সম্পর্কে কৌতূহল দেখে তিনি বলেছিলেন ঃ “দেখলাম, ও কতটা ভার সইতে পারবে ৷”
স্বামীজী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তাঁর উপর এবং তিনি সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসর কাল সঙ্ঘরূপী শ্রীরামকৃষ্ণ-শরীরের গুরুভার অসাধারণ নিষ্ঠার সাথে বহন করেছিলেন ৷
শ্রীমা সারদানন্দকে নিজের ‘ভারী’ বলে চিহ্নিত করে আনন্দ পেতেন কিন্তু তিনি মায়ের ‘দ্বারী’ বলে পরিচয় দিতে গৌরববোধ করতেন ৷
জয়রামবাটী থেকে শ্রীমাকে নিয়ে সেবক সারদানন্দ উদ্বোধন কার্যালয়ের নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেন ১৯০৯ খ্রীস্টাব্দের ২৩ মে ৷
বস্তুত, ঐদিন থেকে উদ্বোধন কার্যালয়ের ভবনটি রামকৃষ্ণ-ভক্ত-মণ্ডলে ‘মায়ের বাড়ি’ বলে পরিচিত হয় ৷
অদ্যাবধি এই ‘মায়ের বাড়ি’ একাধারে শক্তিপীঠরূপে পরমতীর্থ এবং স্বামী সারদানন্দের অপূর্ব মাতৃসাধনার মহতী স্মৃতিসৌধ ৷.
2.
🙏আজ শ্রীমৎ স্বামী সারদানন্দ জী মহারাজের পুণ্য আবির্ভাব তিথি 🙏
দীর্ঘ কয়েক বছর ঠাকুর ও স্বামীজীর জন্মতিথিতে মঠে গান গাওয়া ছিল স্বামী সারদানন্দজী মহারাজের একটি অবশ্যকর্তব্য। ওই দিনে দিনে তিনি সাধারণত নির্দিষ্ট কয়েকটি গান গাইতেন, যেমন ঠাকুরের জন্মতিথিতে তিনি অবশ্যই গাইতেন – গিরিশচন্দ্র রচিত ‘দুঃখিনী ব্রাহ্মণী কোলে কে শুয়েছ আলো করে’। তেমনি স্বামীজীর তিথিতে ‘একরূপ অরূপ- নাম -বরণ’। 1912 খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বামীজীর ঘরের বারান্দায় বসে প্রথম গেয়েছিলেন তানপুরা সহযোগে-‘ এক রূপ অরূপ নাম বরণ’। তারপর গেয়েছিলেন,’ মুঝে বারি বনোয়ারী’, ‘তাথৈয়া তাথৈয়া নাচে ভোলা’ এবং ‘নাচে বাহু তুলে’। স্বামী সারদানন্দের সুর শিল্পের সাধনা শুধু গাওয়াতে সীমিত ছিল না, তিনি একাধারে গায়ক-বাদক, গীত রচয়িতা এবং গীতশিক্ষক। অপরে গান গাইলে তিনি তবলা, পাখোয়াজ বাজাতেন।তাঁর রচিত সংগীতের মধ্যে বিশেষ সমাদৃত স্বামীজীর মহাসমাধির পর একটি গান — ‘স্তিমিত চিত সিন্ধু ভেদি উঠিল কি জ্যোতির্ঘন ‘-গানটিতে তিনি নিজেই সুর দিয়েছিলেন। সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভগবত প্রেমিক শিল্পী ছিলেন সত্য সুন্দরের সন্ধানী, তাঁর সাহিত্য, সঙ্গীত সবকিছুই ছিল তাঁর অধ্যাত্ম জীবনের অলংকার।
সারদানন্দ চরিত
স্বামী প্রভানন্দ
পৃষ্ঠা 306
3.
পূজনীয় শরৎ মহারাজ সাধারণত স্বল্পভাষী ছিলেন। ধর্ম বিষয়ে অতি জটিল সমস্যাও তিনি দুই এক কথায় অতি সরলভাবে বুঝাইয়া দিতেন, বোধ হয় তিনি নিজেও শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট ঐরূপ শিক্ষা পাইয়াছিলেন। তিনি একদিন আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, “একদিন ঠাকুর আমাকে বলিলেন, অত শাস্ত্রাদি পড়িয়া কি হইবে ‘নাথ, তুমি সর্বস্ব আমার’ এই গানটির অর্থ বুঝিলেই সমস্ত হইয়া যাইবে। ঠাকুর তাল দিয়া নিজেই আমাকে এই গানটি শিখাইয়াছিলেন।”
নাথ! তুমি সর্বস্ব আমার। প্রাণাধার সারাৎসার
নাহি তোমা বিনে কেহ ত্রিভুবনে বলিবার আপনার॥
তুমি সুখ শান্তি তুমি সহায় সম্বল সম্পদ ঐশ্বর্য জ্ঞান বুদ্ধিবল
তুমি বাসগৃহ আরামের স্থল আত্মীয় বন্ধু পরিবার॥
তুমি ইহকাল তুমি পরিত্রাণ তুমি পরকাল তুমি স্বর্গধাম
তুমি শাস্ত্রবিধি গুরু কল্পতরু অনন্ত সুখের আধার॥
তুমি হে উপায় তুমি হে উদ্দেশ্য তুমি স্রষ্টা পাতা তুমি হে উপাস্য
দণ্ডদাতা পিতা স্নেহময়ী মাতা ভবার্ণবে কর্ণধার॥