।।বেদে দ্বৈত স্বত্বা।।

বেদে দ্বৈত স্বত্বা।

বৈদিক যুগে কিছু ঋষি নারীতে পরিণত হয়েছিলেন।
( ঋক বেদ: অষ্টম মন্ডল, 33 সূক্ত।
ইন্দ্র দেবতা, কাণ্ব গোত্রের প্রিয়মেধা ঋষি, গায়ত্রী এবং অনুস্তুভ ছন্দ। স্তোত্র: 17,18 19।)
“ইন্দ্রের চিদ ঘা….ব্রহ্ম বভুবিথা”।
( পবিত্র ও ঐশ্বরিক ঋষি প্রিয়মেধা নিজের সাথে কথা বলছেন।)
“তোমার আত্মচেতনা ভগবান ইন্দ্র। তোমার মন একটি মহিলার মত। খুব চঞ্চল, হালকা এবং গল্পপ্রিয়। তোমার নাক জোড়া যমজ অশ্বিনী। এটি আপনাকে এবং আপনার রথ বা শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এইভাবে প্রাণায়ামের মাধ্যমে আপনি উপরের স্তরে উন্নীত হতে পারেন এবং ইন্দ্রকে খুঁজে পেতে পারেন। হে ভদ্রমহিলা (স্বয়ং) লাজুক মহিলাদের মত নিচের দিকে তাকান। সরাসরি উপরে তাকাবেন না। মূলাধারে মনোনিবেশ করুন। মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন। ধীরে ধীরে উপরের দিকে সাঁতার কাটুন। অন্যথায় আপনি ব্রহ্ম অনুভব করতে পারবেন না।”
বৈদিক যুগে একজন পুরুষের নারীর মতো আচরণ করা সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল।
ঐশ্বরিক জগতে, আমাদের ভগবান শিবের একটি রূপ আছে। অর্ধনারীশ্বর। আদি শঙ্করের একটি সুন্দর স্তোত্র আছে। “অর্ধনারীশ্বর স্তোত্রম”। ভারতবর্ষে, “শ্রী” ব্যবস্থা, বৈষ্ণবদের মধ্যে, বাউলদের মধ্যে, সর্বোচ্চ তান্ত্রিক পদ্ধতিতে, বৌদ্ধধর্মে, সর্বত্রই নিজেকে উন্মোচনের, আত্মার বিপরীত সত্ত্বাকে আবিষ্কার করার এই যাত্রা বিদ্যমান। এটি একটি উচ্চতর সিদ্ধি। এতে নিজের মধ্যে তৃপ্তি আসে। প্রকৃতির দ্বৈততার প্রকৃত অর্থ দেয়।
কিন্তু আমরা পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শনে পুষ্ট।
কিছু দিন আগেও, আমাদের শিশুরোগের চিকিৎসা সম্বন্ধীত পাঠে এটি একটি ব্যাধি হিসাবে শেখানো হয়েছিল। একে জিআইডি বা জেন্ডার আইডেন্টিটি ডিসর্ডার বলা হয়। এর ফলে ছেলে ওমেয়েদের মধ্যে Transvestism, Transexualism এবং Tom Boy প্রকৃতি দেখা যায়। এটি সমকামিতারও দিকে পরিচালিত করতে পারে।
আজকাল, এটি একটি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। তারা নিজেদের LGBTQ বলে।

আল্পনা তে কিভাবে এলো শ্রীশ্রীলক্ষীমাতার পায়ের ছাপ?


লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে আলপনা জড়িয়ে গেছে প্রবলভাবে। সেই কোন আদ্যিকাল থেকে গ্রামবাংলার ঘর, দাওয়া সেজে উঠত নানা অলংকরণে। যুগ বদলেছে; কিন্তু সেই রীতি বদলায়নি আজও। অবশ্য লক্ষ্মী  তো কেবল একটি দিনের অতিথি নন। প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁর আরাধনা চলে বাংলার ঘরে। সবার কাছে এটা একটা ব্রত। আর কিছু থাকুক আর না থাকুক, একটা লক্ষ্মীর পাঁচালি আর ঘট না থাকলে ঠাকুরের আসনটা কেমন খালি খালি লাগে। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যেই ঢুকে গেছে এমন পরম্পরা…..

লক্ষ্মীপুজোর আলপনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল লক্ষ্মীর পা। এই পা কিন্তু একদিনে আসেনি। আলপনার সঙ্গেই বিবর্তিত হতে হতে আজ তার এই অবস্থান। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের দিকে যদি তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে শিকার করতে যাওয়ার সময় পায়ের ছাপ দেখেই মানুষ বুঝে যেত কোন জন্তু এসেছিল। ফলে তাদের চিহ্নিতও করা যেত সহজে। এইভাবেই চিহ্নের মাধ্যমে মানুষ বুঝতে শিখেছিল সেই সময়কে। গুহাচিত্রের নমুনাও আমাদের সামনেই আছে। যত সময় এগোতে লাগল, তত এই চিহ্নের বিবর্তন হতে লাগল। এবং সেই পথ ধরেই লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবেই তাঁর পায়ের ছাপের আগমন। কারণ আগেকার দিনে লক্ষ্মীর মূর্তি হত না। আলপনা দিয়ে নানা অনুসঙ্গ এঁকেই পুরোটা করা হত। সেক্ষেত্রে লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ সেই দেবীত্বের আগমনকেই বলে দেয়। আর চাষের ফসল, শিকার করে নিয়ে আসা খাবার ইত্যাদি সমস্তই তো সম্পদ। আর লক্ষ্মী তো সেই সম্পদেরই দেবী। এইভাবেই লক্ষ্মীর পায়ের প্রচলন আলপনায় চলে আসে।।

(সংগৃহিত)

মহাদেবের “ত্রিশূল”


বস্তুত শিবের পরিচয় ত্রিশূলেই বিজ্ঞাপিত। “ত্রিশূল” – এর তাৎপর্য কি? শাস্ত্র বলে ত্রিশূল হলো কুঞ্চিকা বা চাবি। মানুষ সিন্দুকে ধনরত্ন রেখে প্রয়োজনে চাবি দিয়ে তা উন্মুক্ত করে ধনরত্ন বের করে । শিবের ঐশ্বর্য-ভাণ্ডার তত্ত্বময়। সে তত্ত্বগুণময় ও গুণাতীত। ত্রিশূলের ৩টি ফলক-সত্ত্ব,রজ,তমোগুণের প্রতীক। কিন্তু ঐ তিনটি ফলক একটি মাত্র সোজা দণ্ড দ্বারা গ্রথিত। সোজা দণ্ডটিই গুণাতীত তত্ত্বের প্রকাশক। ৩ টি ফলক সৃষ্টি,স্থিতি ও লয়ের প্রতীক এবং সত্ত্ব গুণময় ফলকে আছেন বিষ্ণু, রজগুণময় ফলকে আছেন ব্রহ্মা এবং তমোগুণময় ফলকে আছেন সংহার দেবতা রুদ্র। শিবের ত্রিশূল এই ত্রিশক্তির আধার স্বরুপ। এক শিব তত্ত্বেই ত্রয়ী তত্ত্বের সমাহার। ত্রিশূলের সঙ্গেই থাকে শিবের নিত্যসাথী ডমরু। এই ডমরুর তাৎপর্য্য কি ? ডমরু হল শব্দের বিভিন্ন নাদ এর প্রতিক, সংস্কৃত ব্যাকরণ-প্রণেতা মহামুনি পানিনি ছি্লেন শিবভক্ত, তিনি মহাদেবের আরাধনা করতেন ৪৫ বার ডমরু ধ্বনি করে, এক একবার এক এক রকম নাদ সৃষ্টি হয়, পরে ঐ নাদগুলো্কে তিনি সুত্রাকারে আবির্ভূত করেন, সুত্রগুলো এই রকম – অইউণ। ঋলৃকৃ। কপয়। হল। পাণিনি সুত্রগুলির নাম রাখেন শিবসুত্র। এই শব্দরাজিই হচ্ছে সমস্ত সংস্কৃত স্বর ও ব্যাঞ্জনবর্নের সমষ্টি রূপ। তারপর সেগুলি সঙ্গতি সহকারে বিন্যস্ত করে তিনি রচনা করলেন তার মৌলিক গ্রন্থ “অষ্টাধ্যায়ী”। কথিত আছে বিষ্ণুর অনুরোধে তিনি পঞ্চমুখীশিব রূপ ধারণ করেন এই পঞ্চমুখ হল পঞ্চভূতের প্রতিক।।

(সংগৃহীত)