বাঙালি ঘরে বরাবরই একটি কথা শোনা যায়—“রাতে নখ কাটিস না, অমঙ্গল হবে।”
অনেকেই এটিকে কুসংস্কার মনে করে ভুলে যান, আবার কেউ এখনও মানেন। কিন্তু এর উৎস, আয়ুর্বেদিক ব্যাখ্যা এবং প্রাচীন যুগের বাস্তব কারণগুলি আশ্চর্যজনকভাবে যুক্তিসম্মত।
• প্রাচীন যুগে আলোর সীমা ও নিরাপত্তা
বিদ্যুৎ প্রাচীন সময়ে ছিল না। কেবল প্রদীপ, কুপির আলোতে নখ কাটলে আঙুল কেটে যেত, রক্তপাত বা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ত। সেই নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা থেকেই রাতে নখ না কাটার বিধি পরিবারে পরিবারে প্রচলিত হয়।
• আয়ুর্বেদ মতে নখের সঙ্গে শরীরের ‘বর্জ্য দোষ’-এর সম্পর্ক
আয়ুর্বেদে নখকে শরীরের “মলজাত দেহাংশ” বলা হয়। রাতে কাটা বর্জ্য নখ পরিষ্কার না করলে ঘর পরিবেশ দূষিত করে, যা সংক্রমণের কারণ হতে পারে। তাই আয়ুর্বেদিক শুদ্ধির নিয়ম অনুসারে দিনে নখ কাটাকে উত্তম বলা হয়েছে।
• রাত্রি হলো ‘শরীর বিশ্রাম’ ও ‘পাচনক্রিয়া’-র সময়
আয়ুর্বেদে রাত হলো শরীরের ধাতু–মেদ–রস গঠনের সময়। তখন অঙ্গ ছাঁটাই বা অপ্রয়োজনীয় শারীরিক প্রয়াস শরীরের প্রাকৃতিক চক্রকে ব্যাহত করতে পারে। তাই রাতে নখ বা চুল কাটা নিরুৎসাহিত।
• হিন্দু ঘরোয়া বিশ্বাস ও অমঙ্গল ধারণা
প্রাচীন হিন্দু ধারণা অনুযায়ী, নখে থাকে নেতিবাচক শক্তি ও বর্জ্য চিহ্ন, যা রাতে কাটা হলে অশুভ শক্তির প্রভাব বাড়ে এবং গৃহদেবতার শুদ্ধি নষ্ট হয় বলে মনে করা হত। তাই নখ কাটা হত সকালের সূর্যালোকের পর, শুদ্ধ পরিবেশে।
• অর্থনৈতিক সতর্কতাও ছিল একটি কারণ
পুরনো যুগে মেঝে ছিল মাটির, নখ মেঝেতে পড়লে তা দেখা যেত না। কেউ নখের উপর পা দিলে কেটে সংক্রমণ হতে পারত, এবং চিকিৎসা ব্যয় অসহ্য ছিল। তাই এটি ছিল অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যরক্ষার নিয়ম।
• বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি
রাতে নখ না কাটার বৈজ্ঞানিক কারণ মূলত আলো ও স্বাস্থ্য–নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত। কম আলোতে নখ কাটলে আঙুল কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে, আর রাতে শরীরের রোগ–প্রতিরোধ ক্ষমতা রিপেয়ার মোডে থাকায় ছোট আঘাতেও সহজে সংক্রমণ ধরা পড়তে পারে। নখের কণাগুলো চারদিকে ছড়িয়ে বিছানা বা খাবারের মধ্যে মিশে গেলে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস শরীরে প্রবেশ করে নানা ইনফেকশন তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, রাতে অতিরিক্ত স্নায়বিক কাজ (যেমন নখ কাটা, পরিষ্কার করা) শরীরের ঘুমের জৈব-চক্রকে ব্যাহত করে। তাই স্বাস্থ্যবিজ্ঞানও বলে—নখ কাটার সেরা সময় হলো দিনের আলো।
রাত্রে নখ কাটতে নিষেধ—এটি শুধু কুসংস্কার নয়; এর পেছনে আছে আয়ুর্বেদ, পরিবেশ–স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবারের নিরাপত্তা সম্বন্ধে সচেতনতা। বিদ্যুতের যুগে ঝুঁকি কমলেও, নখ ও দেহ–শুদ্ধির যে নিয়ম পূর্বপুরুষ রেখে গেছেন, তা শুধুই অন্ধ বিশ্বাস নয়, বরং এক প্রাচীন স্বাস্থ্যবিজ্ঞান। তাই এটি না মেনে চলার কোন কারন নেই। আপনাদের মত কি; অবশ্যই কমেন্ট করে জানান।
নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”।



