<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research হরিনাম কীর্তন কেন করা হয়? - Sri Yoga Center Ashram's Blog

হরিনাম কীর্তন কেন করা হয়?

Spread the love

Images

 

হরিনাম বলতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম (যেমন “হরে কৃষ্ণ, হরে রাম”) বোঝানো হয়। কীর্তন মানে হচ্ছে ভগবানের গুণ, লীলা, নাম, রূপ ইত্যাদির গানে বা উচ্চারণে প্রকাশ। হরিনামের কীর্তন হলো ভগবানের নামের সমবেত গাওয়া বা জপ করা। এখন চলুন ধাপে ধাপে বোঝা যাক কেন হরিনামের কীর্তন করা হয়:

১. আত্মশুদ্ধির জন্য

শাস্ত্র মতে (বিশেষত ভাগবত পুরাণ ও চৈতন্যচরিতামৃত অনুযায়ী), হরিনামের কীর্তনে হৃদয় শুদ্ধ হয়। আমাদের মনে প্রচুর কামনা, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি অশুদ্ধতা থাকে। ভগবানের নাম উচ্চারণ করলে সেই অশুদ্ধতা দূর হয় এবং মন ঈশ্বরের দিকে আকৃষ্ট হয়।

উদ্ধৃতি:
“চেতোদর্পণমার্জনং” — (চৈতন্যচরিতামৃত)
(অর্থ: ভগবানের নাম হৃদয়ের দর্পণকে পরিশুদ্ধ করে।)

২. কলিযুগের জন্য শ্রেষ্ঠ ধর্ম

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কলিযুগে অন্যান্য যোগ বা তপস্যা কঠিন হলেও, হরিনাম সংকীর্তন সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রদ। তাই বলা হয়:

শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ (১২.৩.৫২):
“কলোর দোষনিধে রাজন অস্থি এক মহৎ গুণঃ।
কীর্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তঃ সংঘঃ পরং ভজেত্।”
(অর্থ: হে রাজন, যদিও কলিযুগে অনেক দোষ আছে, তবে একটি বড় গুণ হলো—কেবল কৃষ্ণ নাম কীর্তন করলেই মুক্তি লাভ করা যায়।)

৩. ঈশ্বরের সরাসরি উপস্থিতি

শাস্ত্র অনুসারে ভগবান ও ভগবানের নাম অভিন্ন। যখন আমরা হরিনামের কীর্তন করি, তখন প্রকৃতপক্ষে আমরা ভগবানের সান্নিধ্যে থাকি।
“নামচিন্তামণি কৃষ্ণ চৈতন্য রসবিগ্রহঃ” — ভগবান নামের মধ্যে পূর্ণ চেতনা, আনন্দ ও স্বয়ং ভগবানের অস্তিত্ব বর্তমান।

৪. ভক্তি ও প্রেমের বৃদ্ধি

হরিনামের কীর্তন হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও প্রেম জাগায়। এই প্রেমই জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য (পরমার্থ)। চৈতন্য মহাপ্রভু শিক্ষা দিয়েছিলেন —
“হরিনাম কীর্তন করে প্রেম লাভ করা যায়।”

৫. দুঃখ ও সংকট দূর হয়

জীবনের দুঃখ, ক্লেশ, মানসিক অশান্তি ইত্যাদি হরিনামের কীর্তনের দ্বারা দূর হয়। মন প্রশান্ত হয় ও আনন্দে পূর্ণ হয়। এজন্য ভক্তরা বিপদের সময়ও কীর্তন করেন।

৬. বিশ্বশান্তির জন্য

কেবল ব্যক্তিগত মুক্তি নয়, বিশ্বশান্তির জন্যও হরিনাম কীর্তন গুরুত্বপূর্ণ। বহু সাধু-ভক্ত বিশ্বাস করেন, যদি বিশ্ববাসী সম্মিলিতভাবে হরিনাম করে, তবে বিশ্ব থেকে হিংসা, লোভ, যুদ্ধ ইত্যাদি কমে যাবে।

সংক্ষেপে:

হরিনামের কীর্তন করা হয়:

আত্মা শুদ্ধির জন্য।

কলিযুগের সহজ ধর্মপথ হিসেবে।

ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার জন্য।

ভক্তি ও প্রেমের বিকাশের জন্য।

দুঃখ ও কষ্ট মোচনের জন্য।

বিশ্বশান্তির জন্য।

মহামন্ত্র (সবচেয়ে প্রসিদ্ধ)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র:

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে

 

এই মহামন্ত্রের জপ বা কীর্তন জীবের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং ঈশ্বরপ্রেমের দ্বার খুলে দেয়। চৈতন্য মহাপ্রভু নিজে এই মন্ত্রের প্রচার করেছেন।

এই হরিনাম কীর্তনের কোনো বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ বা ব্যাখ্যা আছে কি?

১. ধ্বনি ও কম্পনের প্রভাব

যখন আমরা “হরে কৃষ্ণ” বা অন্য মন্ত্র উচ্চারণ করি, তখন নির্দিষ্ট কম্পন বা ফ্রিকোয়েন্সি সৃষ্টি হয়।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক শব্দ কম্পন (positive vibration) মস্তিষ্কে আনন্দ হরমোন (ডোপামিন, সেরোটোনিন) নিঃসরণ ঘটায়।

মন্ত্রের সুনির্দিষ্ট ছন্দ ও শব্দশক্তি মনকে প্রশান্ত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে।

২. সামূহিক কীর্তন ও “সিনক্রোনাইজেশন”

যখন একসাথে অনেক মানুষ এক সুরে কীর্তন করে, তখন সবার মস্তিষ্কের ব্রেনওয়েভ (EEG patterns) একরকম হয়ে যায়। একে বলে নিউরাল সিঙ্ক্রোনাইজেশন।

এর ফলে দলগতভাবে সুখানুভূতি, সংহতি (bonding) এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৩. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানো

মন্ত্রোচ্চারণ, বিশেষত সমবেত গানের মাধ্যমে, কর্টিসল (stress hormone) এর মাত্রা কমে যায়।

কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, নিয়মিত কীর্তন বা জপ মানসিক চাপ, উদ্বেগ (anxiety), বিষণ্নতা (depression) ইত্যাদি কমাতে সহায়ক।

৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ

কীর্তন বা মন্ত্র উচ্চারণ করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে এবং নিয়মিত হয়।

এটা “pranayama” (শ্বাসের যোগব্যায়াম) এর মতো কাজ করে, যা শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং স্নায়ুকে শান্ত করে।

৫. মস্তিষ্কের গামা-ওয়েভ বৃদ্ধি

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মন্ত্র বা হরিনাম জপ করার সময় মস্তিষ্কের গামা ওয়েভ (৪০ হার্টজ) বৃদ্ধি পায়।

গামা ওয়েভ যুক্ত হয় উচ্চতর সচেতনতা, আনন্দ ও তীব্র মনঃসংযোগের সাথে।

 

সংক্ষেপে:

হরিনাম কীর্তন —

মনের অশান্তি দূর করে।

মানসিক চাপ কমায়।

আত্মবিশ্বাস ও আনন্দ বাড়ায়।

মস্তিষ্ক ও শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভালোবাসা তৈরি করে।


Spread the love

Leave a Reply