স্বামী বিবেকানন্দ ও স্বামী ব্রহ্মানন্দ

Spread the love

Whattapper একটি post থেকে নেওয়া।

স্বামীজীর পায়ের তলার সম্মুখটা আর পিছনটা মাটিতে ঠেকিয়া থাকিত, মাঝখানটা মাটিতে ঠেকিত না ইহাকে “ঘোড়া পা” বা খড়ম পা” বলে। ব্রহ্মানন্দের পা ছিল চ্যাপটা, থেবড়া,সমস্ত পায়ের তলাটি মাটিতে পড়িয়া থাকিত। ইহাকে “হাতি পা” বলে। স্বামীজীর পা ছিল পাতলা, সরু, অপেক্ষাকৃত লম্বা।স্বামীজীর ডান পায়ের তলাতে চারিটি শুভ চিন্হ ছিল।গনৎকার ইহাকে যব,ধান ইত্যাদি কি কি চিন্হ বলিয়াছিল। ব্রহ্মানন্দের পা ছিল মোটা ও অপেক্ষাকৃত খর্ব।পায়ের তলায় দুটি শুভ চিন্হ ছিল শোনা যায় ,সে বিষয় বিশেষ দেখা হয় নাই।
স্বামীজীর হাতের আঙ্গুল সরু, লম্বা এবং অগ্রভাগটা ছুঁচাল – যাহাকে ইংরাজীতে pointed finger বলে।হাতের নখ ছিল মুক্তার মত উজ্জ্বল, কিঞ্চিৎ রক্তাভ এবং বড়। ব্রহ্মানন্দের হাতের আঙ্গুল ছিল মোটা ঈষৎ খর্ব ও অগ্রভাগ থেবড়া। স্বামীজীর মুখ ছিল গোল, পুরুষ্ট – যাহাকে বলে” শৈব মুখ”। ব্রহ্মানন্দের মুখ ছিল গোল এবং চ্যাপটা – যাহাকে বলে – ” শাক্ত মুখ”। স্বামীজীর ঠোঁট ছিল পাতলা এবং উহা ইচ্ছামত দৃঢ় করিতে পারিত।স্বামীজীর চোখ ছিল বড়, লম্বা এবং টানা।স্বামীজী ইচ্ছা করিলে চোখের ভিতর হইতে অগ্নিশিখার ন্যায় জ্যোতি বাহির করিতে পারিত। নাসিকা ছিল ঈষৎ উন্নত -‘ সিঙ্গি নাক; ইচ্ছা করিলে নাসিকা কুঞ্চিত করিয়া ঊর্ধ্বদিকে তুলিতে পারিত।ব্রহ্মানন্দের ঠোঁট ছিল পুরু, চোখ ছিল গোল অপেক্ষাকৃত ছোট, শান্ত-ধীর চাউনি।স্বামীজীর হাত ছিল সুডৌল, লম্বা, ব্রহ্মানন্দের হাত ছিল স্থূল, অনেক পরিমাণে থলথলে।স্বামীজীর মস্তকের পিছন দিকটা চ্যাপটা ছিল।যাহাদের এই স্থানটি উচ্চ বা স্ফীত হয়, তাহাদের হিংসা ও দ্বেষ ভাব প্রবল হয়।যাহাদের পিছন দিকটা চ্যাপটা তাহাদের ভিতর প্রতিহিংসার ভাব অল্প হয় বা মোটেই থাকে না। স্বামীজী ও ব্রহ্মানন্দের উভয়েরই মস্তকের মাঝখানটা বা ব্রহ্মতালু উচ্চ ছিল।ইহা হইল দার্শনিক ও ধ্যানী পুরুষের লক্ষণ।যেমনটি ছিল গৌতম বুদ্ধের। প্রসঙ্গক্রমে আমি বলেছিলাম রাখালকে,”তোমার মাথা যে ,”Papal head”(পোপের মত মাথা) হয়ে গেছে।পোপদের (রোমান ক্যাথলিক খ্রীষ্টিয়ানদিগের সর্বপ্রধান ধর্ম গুরু) মাথার ব্রহ্মতালু মুন্ডন করে চতুর্দিকে বর্তুলাকার চুল রাখে। ব্রহ্মানন্দ হাসিয়া বলিল,” কি জানি ,মাথার মাঝখানের চুল উঠে যাচ্ছে।” যাহারা মনকে জপ-ধ্যানের মাধ্যমে ‘সহস্রারে’ আনিতে পারেন, তাহাদিগের ব্রহ্মতালু সব সময় উষ্ণ থাকায় সে স্থানের চুল উঠিয়া যায়।

স্বামীজীর মনের ভাব ছিল – মরিয়া ভাব, অজ্ঞাত স্থান বা অন্ধকারের ভিতর ঝাঁপাইয়া পড়া, মরণ-বাঁচনের কোন চিন্তা না করা; ইংরাজীতে যাহাকে বলে – Dashing spirit বা Plunging into unknown. স্বামীজীর ভাব যেন সে সৈন্যদিগকে আজ্ঞা দিতেছে – ” নির্ভীক হইয়া অগ্রসর হও, শত্রু ধ্বংস কর,না হয় মৃত্যুকে বরণ কর।ফিরিয়া চাহিও না, ভয় করিও না – বিজয় একমাত্র আকাঙ্ক্ষিত বস্তু।” ব্রহ্মানন্দের ভাব – ” ধীরে ধীরে পদবিক্ষেপ করিয়া অগ্রসর হও, যাহাতে পরাজয় না হয়।একজন হইল সৈন্য দলের অগ্রগামী নায়ক, আর একজন হইল পৃষ্ঠ-রক্ষক যেন তাঁবু রসদ ইত্যাদি লইয়া ধীরে ধীরে পশ্চাতে চলিতেছে।দুইজনের বাল্যকাল এইভাবে দেখিয়াছি যাহা শেষ পর্যন্তও এই সম্বন্ধ দুইজনের মধ্যে ছিল। স্বামীজীর ন্যায় অগ্রগামী সেনানায়ক ও আজ্ঞাদাতা না হইলে কাজ চলিত না, আবার ব্রহ্মানন্দের ন্যায় সুযোগ্য ও বিশ্বস্ত আজ্ঞা বাহী পৃষ্ঠ-রক্ষক না হইলেও কাজ হইত না।
স্বামীজীর পিতা ও খুল্লতাত উকিল ছিলেন।এইজন্য তাঁর ভিতর ওকালতির ভাবটা সর্ববিষয়ে সুস্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হইত; স্বামীজী এক পক্ষকে সমর্থন করিয়া উৎকর্য দেখাইতে পারিত।স্বামীজী কথাবার্তায় প্রগলভ ছিল। ব্রহ্মানন্দ জমিদার বংশের ছেলে হওয়ায় জমিদারী ভাবটা প্রবল ছিল।তিনি ছিলেন অল্পভাষী,ধীরে ধীরে উত্তর দিতেন, কোন জটিল সমস্যা উপস্থিত হইলে তিন-চার দিন বিবেচনা করিয়া সমাধান করিত এবং অতি সুন্দর ও অভ্রান্ত হইত। স্বামীজীর উদ্ভাবনী শক্তি প্রখর ছিল, ব্রহ্মানন্দের সে সকলকে কার্যে পরিণত করিবার ক্ষমতা ছিল।স্বামীজী অনেক সঙ্কল্প করিয়া গিয়াছিল ,আর ব্রহ্মানন্দ ধীরে ধীরে সেই সঙ্কল্পগুলিকে কার্যে পরিণত করিয়াছেন।স্বামীজী হইল দার্শনিক, ব্রহ্মানন্দ হইল কর্মী।

স্বামীজী ও ব্রহ্মানন্দ উভয় কেই প্রথম অবস্থাতেই একমাত্র পরমহংস মশাই বুঝিতে পারিয়াছিলেন। শক্তিমান, তেজস্বী ও নানাবিধ প্রতিভা সম্পন্ন যুবক নরেন্দ্রনাথকে তো প্রথম দর্শনেই বুঝিয়া গিয়েছিলেন তাহার ভবিষৎ এবং তাঁহার কার্যের উপযুক্ত ভাবিয়া অতীব আদর যত্ন করিতেন। কিন্তু আপাত নিরীহ, নিস্তেজ, ভ্যাদভেদে রাখালকে দেখিয়া বুঝিতে পারিয়াছিলেন কি অসম্ভব শক্তি এই যুবকের মধ্যে সুযুপ্তভাবে বিদ্যমান আছে। তিঁনি বলিয়াছিলেন,”রাখাল চুপ করে বসে থাকে, বেশি কথাবার্তা কয় না, কিন্তু তার ঠোঁট অনবরত নড়ছে।” রাখালকে সকলেই নিস্তেজ ও অল্পবুদ্ধি বিবেচনা করিলেও তিঁনি দেখিতে পাইয়াছিলেন যে অদ্ভুত শক্তিবীজ তার মধ্যে নিহিত আছে, কালে বিশাল মহীরুহ হবেই।

পরিশেষে এই দুই মহামানবের জীবনী থেকে যে শিক্ষা পাইয়া থাকি তাহা হইল পরস্পর পরস্পরের প্রতি সন্মান প্রদর্শন।একজনের অন্য জনের প্রতি এমন শ্রদ্ধা ছিল যাহা বিরল বলিলেও কম বলা হইবে। স্বামীজী বলিয়াছিলেন , “রাখাল আমার শরীর ভাল নয়।আমি শীগগির দেহত্যাগ করবো,তুই আমার মা’র ও বাড়ির বন্দোবস্ত করে দিস।তাঁকে তীর্থ দর্শন করাস।তোর ওপর এইটি ভার রইল।” ব্রহ্মানন্দ অনবরত হাইকোর্টে যাইয়া ও কঠোর পরিশ্রম করিয়া আমাদের জ্ঞাতিদিগের সহিত বিবাদ-বিসম্বাদ মিটাইয়া দিল।গৌর মোহন মুখার্জি স্ট্রিটে মা’র বাসভূমি স্থাপন করিয়া- “ভুবনেশ্বরী দেবীর বাসভবন” এই ফলকটি বাড়ির বাহির দ্বারে স্থাপনা করিয়াছিলেন এবং নিজে মা’কে পুরীধামের দর্শন করাইয়াছিল।

…..মহাযোগী শ্রী মহেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামীজীর ভাই)

স্বামী ব্রহ্মানন্দ

Spread the love