<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research গ্রহ-নক্ষত্র কি সত্যিই মানুষের সঙ্গে জড়িত?—বৈদিক বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক ধারণা ও আধুনিক ব্যাখ্যা - Sri Yoga Center Ashram's Blog

গ্রহ-নক্ষত্র কি সত্যিই মানুষের সঙ্গে জড়িত?—বৈদিক বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক ধারণা ও আধুনিক ব্যাখ্যা

Spread the love

Planet

 

মানুষের জন্ম-মৃত্যু, ভাগ্য, স্বভাব—এসব কি সত্যিই আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের সঙ্গে যুক্ত? হাজার বছর ধরে এক প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষে বিশ্বাস করা হয়, জন্মের মুহূর্তে আকাশের অবস্থান মানুষের জীবনের উপর সূক্ষ্মভাবে প্রভাব ফেলে। আবার আধুনিক বিজ্ঞান বলছে—গ্রহের মহাকর্ষ মানুষের শরীরে কোনো পরিমাপযোগ্য প্রভাব ফেলে না। তবুও মানুষ নিজের অভিজ্ঞতা, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক চর্চায় আজও অনুভব করে—কিছু একটা সংযোগ রয়েই গেছে।
এই প্রবন্ধে সেই দুই দিকই তুলে ধরা হলো।

 

• বৈদিক মতে গ্রহ-নক্ষত্র ও মানুষের অন্তর্লীন সম্পর্ক

বৈদিক জ্যোতিষ বিশ্বাস করে, জন্মের সময় গ্রহের অবস্থান মানুষের মানসিক গঠন, প্রবৃত্তি ও জীবনের দিকনির্দেশকে প্রভাবিত করে।
এ ধারণা অনুযায়ী—

মহাকাশের শক্তি (কসমিক এনার্জি) মানুষের শরীরের প্রাণশক্তির সঙ্গে যুক্ত।

নক্ষত্রমণ্ডলকে ২৭টি ‘নক্ষত্র’ হিসেবে ভাগ করা হয়েছে, যেগুলো প্রত্যেকটি আলাদা স্বভাব ও শক্তির প্রতীক।

চন্দ্র মানবমনের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে বলা হয়। জন্মের সময় চন্দ্র কোন নক্ষত্রে রয়েছে, সেটি মানুষের মানসিকতা নির্ধারণ করে।

শনি, মঙ্গল, রাহু-কেতু ইত্যাদি গ্রহ জীবনের পরীক্ষা, সাফল্য বা বাধা নির্দেশ করে—এটাই বিশ্বাস।

 

• তান্ত্রিক ও আধ্যাত্মিক ধারায় গ্রহের ‘শক্তি’ ধারণা

তন্ত্র মতে, গ্রহ আসলে শক্তির উৎস—যা সরাসরি মানুষের আভা (অরা), চক্র ও মানসিক অবস্থাকে প্রভাব করে।
এই ধারায় বলা হয়—

গ্রহ আসলে প্রতীকী শক্তি, যা মানুষের মনের ভেতরকার প্রবণতাকে জাগিয়ে তোলে।

চন্দ্র মানসিকতা, শনি ধৈর্য ও কর্মফল, মঙ্গল সাহস, শুক্র প্রেম ও সৌন্দর্যের শক্তিকে জাগ্রত করে।

গ্রহের গতি অনুযায়ী মনোভাব, আকর্ষণ বা আচরণে সূক্ষ্ম পরিবর্তন আসে।

 

• আধুনিক দৃষ্টিকোণ: সত্যিই কি গ্রহের প্রভাব আছে?

বিজ্ঞান বলে—

গ্রহের মহাকর্ষ মানুষের শরীরে তেমন প্রভাব ফেলে না—দূরত্ব অনেক বেশি।

তারকা-আলো মানুষের শরীরে কোনো মাপযোগ্য পরিবর্তন আনে না।

তবে মানবমস্তিষ্ক প্যাটার্ন খুঁজতে পছন্দ করে; তাই জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণী অনেককে মানসিকভাবে গাইড করে।

কিন্তু বিজ্ঞানের আরেক দিক আছে—

চাঁদের টানে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা হয়, আর মানুষের শরীরও জলের অংশে ভরা—এ কারণে চন্দ্রের সামান্য প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।

মানুষের স্লিপ সাইকেল, হরমোন, মুড—চাঁদের পর্যায়ে অল্প হলেও পরিবর্তন দেখা যায়—এই নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণা হচ্ছে।

সূর্যের ফ্লেয়ার (Solar activity) মানুষের মস্তিষ্ক ও ইলেকট্রনিক সিগনালের উপর প্রভাব ফেলে।

অর্থাৎ—সরাসরি প্রভাব প্রমাণিত না হলেও পরোক্ষ বা সূক্ষ্ম প্রভাব অস্বীকার করা যায় না।

 

• লোকবিশ্বাস ও সামাজিক বাস্তবতা

মনে রাখা জরুরি—

বহু পরিবারে গ্রহদোষ, শুভ-অশুভ সময়, রত্ন, পূজা—এসব মানসিক ভরসা দেয়।

মানুষ বিশ্বাস পেলে সিদ্ধান্তে আত্মবিশ্বাসী হয়—এটি সত্যি বৈজ্ঞানিক।

জ্যোতিষকে সম্পূর্ণ বাতিল করলে মানুষের হাজার বছরের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতাকে অস্বীকার করা হয়।

 

গ্রহ-নক্ষত্রের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের মূল কারণ—মানুষ সবসময়ই নিজের জীবনকে অর্থপূর্ণভাবে বোঝার চেষ্টা করেছে। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতিষ বলছে—গ্রহ আমাদের জন্মের মতোই জীবনের মানচিত্রে এক অদৃশ্য ছাপ রেখে যায়। বিজ্ঞান বলছে—সরাসরি প্রমাণ নেই, তবে মনোজগত, ঘুম, হরমোন বা প্রকৃতির কিছু দিক চন্দ্র-সূর্যের সঙ্গে সংযুক্ত।
অর্থাৎ সত্যিটা মাঝামাঝি—
গ্রহ-নক্ষত্র হয়তো আমাদের ভাগ্য লেখে না, কিন্তু আমাদের মন, সময়, ছন্দ ও আচরণে সূক্ষ্মভাবে প্রভাব ফেলেই থাকে, যার ব্যাখ্যা আজও পুরোপুরি উন্মোচন হয়নি।

 

নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”। 


Spread the love

Leave a Reply