দূর্গাপূজোর সবচেয়ে চোখে পড়া ও প্রাণবন্ত আচারগুলোর মধ্যে ধুনুচি নাচ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করে। ঢাকের তালে তালে ধুনুচি ঘোরানো, আগুনের লাবণ্যে অনন্য এক দৃশ্য সৃষ্টি করে, যা কেবল দর্শকদের আনন্দ দেয় না, বরং দেবীকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যও বহন করে। বহু গবেষক এবং সাংস্কৃতিক বিশ্লেষকের মতে, ধুনুচি নাচের উৎপত্তি শুধু বিনোদন নয়, বরং এটি এক ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়ার অংশ।
ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ
ধুনুচি নাচের ইতিহাস প্রায় কয়েক শতকের পুরনো। এটি মূলত বাঙালি হিন্দু সমাজের নবরাত্রি আচারগুলোর সঙ্গে যুক্ত। প্রাচীন লিপি ও পাণ্ডুলিপিতে দেখা যায়, মহালয়ার পর থেকে দেবীর আগমনের জন্য গৃহ ও প্যান্ডালে প্রদীপ, ধুনুচি ও ঢাকের মাধ্যমে বিভিন্ন রিচুয়াল পালন করা হতো। বিশেষ করে গ্রামের মন্দির এবং প্যান্ডালে নারী ও পুরুষ উভয়ই এই নাচে অংশগ্রহণ করতেন, যা কেবল উৎসবমুখরতা নয়, এক ধরনের সামাজিক সংহতির প্রতীকও ছিল।
সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
ধুনুচি নাচ কেবল নৃত্য বা বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি দেবীর প্রতি আস্থা ও ভক্তির প্রকাশ। ঢাকের তাল মিলিয়ে ধুনুচি ঘোরানো একটি মন্ত্রমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে, যা বিশ্বাস করা হয় দেবীর উপস্থিতি আনে। গবেষকরা বলেন, এটি মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভক্তদের মধ্যে এক ধরনের একাগ্রতা এবং ধ্যান সৃষ্টি করে, যা পুজোকে আরও অর্থপূর্ণ করে তোলে।
ধুনুচি নাচের আধ্যাত্মিক দিক
ধুনুচির আগুন মূলত অগ্নি উপাসনার প্রতীক। নাচের সময় যে ধুনুচি হাতে থাকে, সেটি শুধু আলোর উৎস নয়, বরং অশুভ শক্তি দূর করার প্রতীক। কিছু গবেষক দাবি করেন, ধুনুচি নাচের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নান্দনিকতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আধ্যাত্মিক একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়, যা দূর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য—শক্তি ও শুভ শক্তির প্রাপ্তি—কে শক্তিশালী করে।
ধুনুচি নাচের সামাজিক প্রভাব
শুধু ধর্মীয় নয়, ধুনুচি নাচের মাধ্যমে সামাজিক সংহতি ও ঐক্যেরও প্রতিফলন ঘটে। গ্রামের পুজোতে সবাই একত্রিত হয়ে নাচে অংশ নেয়, নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্য শেখায়, এবং শিল্পী বা নৃত্যশিল্পীদের জন্য এটি এক ধরনের পরিচিতি ও সামাজিক স্বীকৃতির মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। আজকাল শহরেও প্যান্ডালে ধুনুচি নাচের মাধ্যমে একই রকম সামাজিক মিলন লক্ষ্য করা যায়।
ধুনুচি নাচ কেবল চোখে আনন্দ আনতে বা বিনোদনের জন্য করা হয় না। এটি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক এবং সামাজিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত, এটি বাংলার সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অঙ্গ হয়ে আছে। ঢাকের তাল, আগুনের জ্বলন এবং নাচের তাল মিলিয়ে তৈরি দৃশ্যটি শুধুই নৃত্য নয়, বরং দেবীর প্রতি ভক্তি ও সমাজের ঐক্যের এক অনন্য প্রকাশ। ফলে ধুনুচি নাচকে শুধুই বিনোদন হিসেবে দেখা ভুল, বরং এটি একটি জীবন্ত ঐতিহ্য, যা বাংলার দুর্গাপূজাকে এক বিশেষ মাত্রা প্রদান করে।
নিজের সংস্কৃতি নিজের ঘর।
চোখ রাখুন ব্লগে “শ্রীডক্টর”।
Our Website:
https://www.sridoctor.com/about.php
Sri Yoga Centre Ashram Google:
https://share.google/b9sVmwJEpISflZsrL
Bengal Spirit Blog:
https://share.google/sKQyOtfeAIxKWHOrY
Ashram and Maths blog:
https://share.google/ZEwwsNBmuL2GwUmwQ
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Group:
https://www.facebook.com/share/g/1Z6QftRsFj/
Sri Yoga Centre Ashram Facebook Page:
https://www.facebook.com/share/1CyybonM5p/
Sri Yoga Centre Ashram Youtube Channel:
https://youtube.com/@sriyoga_center?si=08LpHh8o1u2MrngM
Indology Blog:
https://indologyblog.blogspot.com/?m=1