<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research হিন্দুধর্মে ঈশ্বর বা দেবী-মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়া হয় কেন? - Sri Yoga Center Ashram's Blog

হিন্দুধর্মে ঈশ্বর বা দেবী-মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়া হয় কেন?

Spread the love

Images (1) (4)

 

ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সংস্কৃতিতে দেবী বা ঈশ্বরের মূর্তিকে জলে বিসর্জন একটি বহু প্রাচীন এবং গভীর অর্থবাহী আচার। এটি কেবল একটি ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং এর মধ্যে নিহিত রয়েছে দর্শন, প্রকৃতি-সচেতনতা ও মানবজীবনের গভীর শিক্ষা। এই প্রবন্ধে বিসর্জনের কারণ, তাৎপর্য ও তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হল।

সৃষ্টি ও লয়ের চক্রের প্রতিফলন

হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয় যে এই জগৎ অনিত্য, অর্থাৎ এখানে যা সৃষ্টি হয়েছে তা একদিন ক্ষয় বা লয়ের মধ্যে মিলিয়ে যাবে। দেবীর মূর্তি সাধারণত নদীর মাটি, খড়, কাঠ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। পূজা-অর্চনা শেষে সেই মূর্তি জলে বিসর্জনের মাধ্যমে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরে যায়। এটি প্রকৃতির চক্র—সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে প্রতিফলিত করে এবং মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী।

ঈশ্বর সর্বব্যাপী — মূর্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নন

হিন্দু ভাবধারায় ঈশ্বর কেবল মূর্তির মধ্যে আবদ্ধ নন, বরং সর্বত্র বিরাজমান। পূজার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের এক বিশেষ রূপের কাছে প্রার্থনা করে, আর বিসর্জনের মাধ্যমে বোঝায় যে ঈশ্বর আবার আমাদের চারপাশে, প্রকৃতির প্রতিটি অংশে মিশে গেছেন। এটি মানুষের মন থেকে ‘মূর্তিপূজা’ কে ‘ভাবপূজা’-তে রূপান্তরিত করে।

বৈরাগ্য ও অনাসক্তির শিক্ষা

পূজা বা উৎসবের সময় মানুষের মনে গভীর আসক্তি ও আবেগের জন্ম হয়। বিসর্জনের মাধ্যমে সেই আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়। এ শিক্ষা হল জীবনের যেকোনো প্রিয় জিনিস বা মানুষকে সঠিক সময়ে ছেড়ে দিতে জানা এবং তাতেই জীবনের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার দিক

পুরনো নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিমা তৈরি হতো গঙ্গার মাটি, খড়, কাঠ ও প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে; যা নদীতে মিলিয়ে আবার প্রকৃতিকে কোনও ক্ষতি করত না। এর মাধ্যমে প্রকৃতির উপাদান আবার প্রকৃতির মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার এক পরিবেশবান্ধব প্রথা গড়ে উঠেছিল। যদিও এখন রাসায়নিক রঙ ও প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবুও প্রাচীন রীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা।

উৎসবের সমাপ্তি ও নতুন সূচনা

বিসর্জন উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নির্দেশ করে। এটি এক ধরণের মানসিক প্রস্তুতি, যেখানে মানুষ পূজার আনন্দ ও উদ্দীপনা শেষে আবার দৈনন্দিন জীবনে ফেরার প্রেরণা পায়। এই সমাপ্তির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আগামী বছরের নতুন পূজার আশা ও অপেক্ষা।

দেবী বা ঈশ্বরের মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়ার মধ্যে কেবল একটিমাত্র আচার নয়, বরং রয়েছে গভীর দার্শনিক শিক্ষা, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও মানব জীবনের এক মহৎ বার্তা। এটি শেখায়—সব সৃষ্টি একদিন লয়ে মিলে যায়, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরন্তন। তাই বিসর্জন আমাদের মনে করায়—ত্যাগেই আছে শান্তি, আর অনাসক্তির মধ্যেই আছে জীবনের আসল সৌন্দর্য।


Spread the love

Leave a Reply