<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research আমরা কেন তিলক ধারণ করি? - Sri Yoga Center Ashram's Blog

আমরা কেন তিলক ধারণ করি?

Spread the love

 

Images

 

তিলক ধারণ করার প্রথা মূলত হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু একটি আচার নয়, এর পেছনে রয়েছে ধার্মিক ও বৈজ্ঞানিক উভয় ব্যাখ্যা। নিচে তা দুইভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

ধার্মিক ব্যাখ্যা:

1. ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি প্রকাশ:
তিলক ধারণ করা হয় ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে। বিভিন্ন সম্প্রদায় বা দেবতার ভক্তরা বিভিন্ন ধরনের তিলক পরিধান করেন, যেমন বিষ্ণুভক্তরা “উ” বা “ত্রিপুণ্ড্র” আকৃতির তিলক নেন।

2. আত্মপরিচয় প্রকাশ:
তিলক কার কোন সম্প্রদায় বা পথের অনুসারী তা প্রকাশ করে। যেমন বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত—প্রত্যেকের তিলকের ধরন আলাদা।

3. আধ্যাত্মিক উন্নতি ও পবিত্রতা:
তিলক ধারণ করা হয় মস্তিষ্কের ‘আজ্ঞাচক্র’ বা ‘তৃতীয় নয়ন’ এর স্থানে, যা ধ্যান, আত্মচিন্তা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক।

4. ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পূজার পূর্ব প্রস্তুতি:
পূজা বা যেকোনো ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপে অংশ নেওয়ার পূর্বে তিলক ধারণ করে আত্মশুদ্ধি ও মনঃসংযমের প্রকাশ ঘটে।

 

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

1. মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ চাপ পয়েন্টে চাপ প্রয়োগ:
তিলক সাধারণত কপালের মাঝে, দুই ভ্রুর ঠিক উপরের জায়গায় লাগানো হয়—এই স্থানটি ‘আজ্ঞাচক্র’ বা pineal gland-এর কাছাকাছি, যা মনঃসংযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং আত্মউপলব্ধির সাথে জড়িত।

2. মানসিক প্রশান্তি ও ঠান্ডা ভাব বজায় রাখা:
চন্দনের তিলক ঠান্ডা প্রকৃতির, এটি কপালে লাগালে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয় এবং মানসিক চাপ কমে।

3. রক্তসঞ্চালনের ভারসাম্য:
তিলক লাগানোর সময় যে সামান্য চাপ প্রয়োগ হয় তা রক্তসঞ্চালন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।

4. ইন্দ্রিয় ও চিন্তাশক্তির কেন্দ্র সক্রিয় করা:
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, কপালের এই অংশে নিয়মিত সংবেদন সৃষ্টি করলে চিন্তাশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি পায়।

হিন্দু ধর্মে প্রধানত তিনটি মূল সম্প্রদায় দেখা যায়—বৈষ্ণব, শৈব, ও শাক্ত। এদের প্রত্যেকের তিলক আলাদা, এবং প্রতিটির একটি নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক ও দর্শনীয় তাৎপর্য আছে।

বৈষ্ণব তিলক (ভগবান বিষ্ণুর ভক্তরা)

তিলকের রূপ:
দুইটি সাদা উলটো ‘U’ আকারের রেখা, মাঝে সাধারণত একটি লাল বা হলুদ রেখা থাকে।

ব্যবহৃত পদার্থ:
গোপীচন্দন, কুমকুম, হলুদ

অর্থ ও তাৎপর্য:

‘U’ আকৃতির তিলক বিষ্ণুর পদচিহ্নের প্রতীক।

মাঝে লাল রেখাটি লক্ষ্মীর প্রতীক।

এটি ভক্তকে সর্বদা ঈশ্বরস্মরণে রাখে এবং অহংকার কমাতে সহায়ক।

বিশেষ বৈষ্ণব উপপ্রধান ধারা:

মাধ্ব, নিম্বার্ক, গৌড়ীয়, ও রামানুজ সম্প্রদায়ের তিলকের ছোট ভিন্নতা থাকে।

 

শৈব তিলক (ভগবান শিবের ভক্তরা)

তিলকের রূপ:
কপালের ওপর তিনটি অনুভূমিক সাদা রেখা (ত্রিপুণ্ড্র), মাঝে লাল বিন্দু বা রেখা থাকতে পারে।

ব্যবহৃত পদার্থ:
ভস্ম (ভস্মধারিণী), কুমকুম

অর্থ ও তাৎপর্য:

তিনটি রেখা প্রতীক: তামস, রজস ও সত্ত্ব গুণ, বা জন্ম, মৃত্যু ও পুনর্জন্ম।

এটি আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষলাভের প্রতীক।

ভস্ম মানে ‘সব কিছু ধ্বংসযোগ্য’—এটি মোহভঙ্গ ও বৈরাগ্যের প্রতীক।

 

শাক্ত তিলক (দেবী দুর্গা বা শক্তির ভক্তরা)

তিলকের রূপ:
সাধারণত কপালের মাঝখানে একটি লাল বিন্দু (বিন্দি বা কুমকুম)।

ব্যবহৃত পদার্থ:
কুমকুম (সিঁদুর)

অর্থ ও তাৎপর্য:

এটি অগ্নিচক্র বা শক্তিচক্রের প্রতীক।

নারীর শক্তি, মাতৃত্ব, ও পবিত্রতার প্রতীক।

বিবাহিত নারীরা এটি সধবা বা শুভ লক্ষণ হিসেবে ধারণ করেন।

 

৪. স্মার্ত সম্প্রদায় (যাঁরা শিব, বিষ্ণু, দেবী, গণেশ, সূর্য সবাইকে পূজা করেন)

তিলকের রূপ:
কখনও ত্রিপুণ্ড্র, কখনও উর্ধ্ব রেখা বা বিন্দু—ব্যক্তি বা সময় অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে।

অর্থ ও তাৎপর্য:
এই সম্প্রদায় সর্বদেবতার প্রতি সমান শ্রদ্ধা রাখে, তাই তিলকের রীতিতেও বৈচিত্র্য দেখা যায়।

 

সারাংশ:
তিলক শুধু একটি ধর্মীয় প্রতীক নয়, এটি আত্মিক উন্নতি, ভক্তি প্রকাশ, ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও কার্যকরী ভূমিকা রাখে—এটি ধার্মিক বিশ্বাস এবং আধুনিক বিজ্ঞানের মিলিত ব্যাখ্যায় স্পষ্ট হয়।


Spread the love