আজ কালভৈরব দেবাবির্ভাব অষ্টমী। কৃষ্ণপক্ষের এই অষ্টমী তিথি কালভৈরব অষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়। এইদিনে মহাদেব কালভৈরব রূপ ধারন করেন। কালভৈরব দেবতা শিবের একটি হিংস্র প্রকাশ বা রুদ্র অবতার, যা মৃত্যু এবং বিনাশের সাথে সম্পর্কিত।
শিব পুরাণে শিবের এই রূপের বিষয়ে বর্ণণা করা হয়েছে। পুরাণ মতে, কালভৈরব কাল বা সময়ের শাসক। প্রতিটি মন্দিরেই কালভৈরবের মূর্তি থাকে। তিনি সেই মন্দিরের রক্ষক হিসেবে বিবেচিত হন। শিব মন্দিরে কালভৈরব এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ওই মন্দিরের চাবির রক্ষক বলে গণ্য হন।
দেবাদিদেব মহাদেবের অনেক রুদ্র অবতার আছে। দৈত্য দানব ও অশুভশক্তির বিনাশ হেতু ভগবান জটাধর বিভিন্ন রুদ্ররূপের ব্যাপ্তি ঘটিয়েছেন। ভগবান মহাদেবের রুদ্রাবতার অতীব ভয়ঙ্কর এবং মহাবিনাশক। ভগবান শিবশঙ্কর যখনই রুদ্ররূপ ধারণ করেছেন ত্রিলোক কোনও না কোনও দ্বিধায় পড়েছে, কিন্তু পরবর্তীকালে ধরিত্রী পেয়েছে নবপরিচয়। যা একমাত্র মহাকালের লীলাতেই সম্ভব ছিল। ঠিক যেমন অনলে দগ্ধ হয়ে স্বর্ণ হয় শুদ্ধ, ঠিক তেমনই মহারুদ্রের ক্রোধাগ্নিতে দগ্ধ হয়ে ধরিত্রী হয়েছে শিবভস্ম যা থেকে পরবর্তীতে অঙ্কুরিত হয়েছে শুদ্ধ পবিত্র জ্ঞানবৃক্ষ।
মহাদেব শিবের যতরকম রুদ্র অবতার আছে তন্মধ্যে অন্যতম একটি অবতার হলো কালভৈরব। কাল শব্দের অর্থ ‘মৃত্যু’ আর ভৈরব শব্দের অর্থ ‘ছন্দ’ অর্থাৎ কালভৈরব শব্দের অর্থ মৃত্যুরদেবতা বা কালবিনাশক।
কথিত আছে ব্রহ্মার পঞ্চম মস্তক যা সমূহপাপে আক্রান্ত সেই পাপ ও মস্তক বিনাশ হেতু মহাদেবের নীলতেজ হতে কালভৈরবের আবির্ভাব।
তন্ত্রশাস্ত্র মতে, বৈদিক দেব-দেবীদের প্রভাব কলিযুগে অস্তমিত হবে। প্রধান দেবতা হিসেবে আবির্ভূত হবেন ভৈরবরা।
মহাজগতের বিশেষ স্থানগুলি ভৈরব রক্ষা করেন। ভৈরবের মোট সংখ্য ৬৪। তাদের ৮টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। প্রতিটি শ্রেণির আবার একজন করে প্রধান ভৈরব রয়েছেন। প্রধান ৮ ভৈরবকে ‘অষ্টাঙ্গ ভৈরব’ বলা হয়। অষ্টাঙ্গ ভৈরবের নামগুলি এই প্রকার- অসিতাঙ্গ ভৈরব, রুরু ভৈরব, চণ্ড ভৈরব, ক্রোধ ভৈরব, উন্মত্ত ভৈরব, কপাল ভৈরব, ভীষণ ভৈরব ও সংহার ভৈরব। এই আটজন মহাবিশ্বের আটটি দিকের অধিপতি। এই আট জন আবার নিয়ন্ত্রিত হন মহাস্বর্ণকালভৈরবের দ্বারা। তিনিই সাধারণভাবে কালভৈরব নামে পরিচিত।
ভৈরবদের মহিমা অনেকটাই গুপ্ত। প্রত্যেক ভৈরবের একজন করে ভৈরবী থাকেন। ৬৪ ভৈরব ও তাদের সঙ্গিনী ৬৪ যোগিনী তন্ত্রমতে বিবিধ শক্তির আধার। ভৈরবরা সুপ্ত এবং দূরবর্তী। ভৈরবীরা সক্রিয়। বিভিন্ন পূজা, উপচার ইত্যাদির মাধ্যমে ভৈরবীশক্তিকে তুষ্ট করে ভৈরবের প্রসাদ লাভ করতে হয়। এই সাধনধারা দীর্ঘ দীর্ঘ কাল ধরে চলে আসছে।
কালী পূজার সময় কালভৈরব রূপে মহাকাল রূপী শিবের পূজা করা হয়। তন্ত্রসাধক মহাকাল কে সাধনায় সন্তুষ্ট করে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হয়।
মহাকাল ভৈরবের প্রণাম মন্ত্র —
ॐ মহাকালং যজেদব্যং দক্ষিণে ধূমবর্ণকম।
বিভ্রতং দন্ড খটাঙ্গৌ দংস্ট্রাভীমমূখম্ শিশুম্॥
ব্যাঘ্রচর্মাবৃতকটীং তূন্দীলং রক্তবাসসম্।
ত্রিনেত্রমূর্ধং কেশঞ্চ মুণ্ডমালা বিভূষিতম্।
জটাভার লসচ্চচন্দ্র খন্ডমুগ্রং জলন্নিভম্॥
.
হর হর মহাদেব
.
(সংগৃহীত)