ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস || পর্ব – ৭ || (শেষ পর্ব)

 

ভাস্কর্য

ভাস্কর্য ভারতে শৈল্পিক অভিব্যক্তির জন্য একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় শিল্পের একটি রূপ। বিল্ডিংগুলি প্রচুরভাবে সজ্জিত ছিল, এবং যেখানে বিষয়বস্তু হিসাবে মূলত হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের নীতিগুলিকে চিত্রিত করার জন্য ব্যবহৃত বিমূর্ত মানব রূপ নিয়ে গঠিত করা হয়। শক্তি, কালী এবং ব্রহ্মার মতো নারী দেবতাদের প্রায়ই ভারতীয় ভাস্কর্যে চিত্রিত করা হয়েছে।

ভারতীয় ভাস্কর্য সিন্ধু উপত্যকা থেকে বিস্তৃত, যেখানে পোড়ামাটির মূর্তিগুলি উৎপাদিত প্রথম ভাস্কর্যগুলির মধ্যে কয়েকটি ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ থেকে ২য় শতক পর্যন্ত বিস্তৃত মৌর্য রাজবংশ জুড়ে, বড় বড় পাথরের স্তম্ভগুলি চৌরাস্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উপস্থাপিত করা হয়। এবং সেগুলির প্রায়ই পদ্ম-আকৃতির শীর্ষ এবং সিংহের মূর্তি ছিল যা সাম্রাজ্য শাসনের প্রতীক ছিল। এই সময়ের মধ্যে দেবতাদের অনেক বড় পাথরের মূর্তি তৈরি করা হয়েছিল, তারপরে ছোট সংস্করণগুলি বৌদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভগুলিতে স্থাপন করা হয়েছিল। স্তূপ, কবরের ঢিবি, শোভাময়ভাবে খোদাই করা গেটওয়ে দ্বারা বেষ্টিত ছিল যাতে ধর্মীয় চিহ্নগুলির একটি বিন্যাস রয়েছে। আরও পরিপক্ক ভারতীয় রূপক ভাস্কর্য খ্রিস্টপূর্ব ২য় এবং ১ম শতাব্দীতে আবির্ভূত হতে শুরু করে।

পরবর্তী শতাব্দীতে, শৈলী এবং ঐতিহ্যের বিস্তৃত পরিসর পরবর্তীকালে বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে বিকাশ লাভ করে। সবচেয়ে বিশিষ্ট স্থাপনাগুলির মধ্যে একটি হল এলিফ্যান্ট গুহা, প্রধানত হিন্দু দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত গুহা মন্দিরগুলির একটি সংগ্রহ, যা খ্রিস্টীয় ৫ম থেকে ৬ষ্ঠ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত হয়েছিল। ৯ম এবং ১০ম শতাব্দীতে, ভারতীয় ভাস্কর্য একটি ফর্মে পৌঁছেছিল যা আজকের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সামান্য পরিবর্তিত হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে স্থাপত্য সজ্জার অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

২০ শতকের গোড়ার দিকে, ভারতীয় ভাস্কর্য পাশ্চাত্য একাডেমিক শিল্প ঐতিহ্যের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, এবং শৈলীগুলি বাস্তববাদী শিল্পীদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয় যারা ব্রিটিশ আর্ট স্কুলে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়গুলিতে কাজ করেছিলেন। পুরাণ এবং দেবতাদের চিত্রিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী ফর্ম থেকে একটি উল্লেখযোগ্য প্রস্থান দেখা যায়। 1940 এবং 1950-এর দশকে, চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কর রামকিঙ্কর বাইজ কংক্রিট, নুড়ি এবং সিমেন্টের মতো অপ্রচলিত উপকরণগুলির সাথে পরীক্ষা করে পাশ্চাত্য শিল্প এবং ঐতিহ্যগত ভারতীয় ফর্ম উভয়কে একত্রিত করার জন্য কাজ করেছিলেন। এই পরীক্ষাটি সমসাময়িক ভারতীয় ভাস্কর্যের অন্যতম সৃষ্টি, যা নতুন পদ্ধতির অন্বেষণ করার সময় ঐতিহ্যগত কৌশল এবং বিষয়বস্তু থেকে সমানভাবে ধার নেয়।

-:উল্লেখযোগ্য ভারতীয় ভাস্কর্য :-

মহেঞ্জোদারোর ডান্সিং গার্ল (Dancing Girl)

এই ব্রোঞ্জ মূর্তিটি প্রায় 4,500 বছরের পুরানো বলে মনে করা হয়। সূক্ষ্ম ধাতু দিয়ে তৈরি, এটি একটি অল্প বয়স্ক মেয়েকে তার বাহুতে চুড়ির আধিক্য সহ চিত্রিত করেছে, রাজস্থানের একটি সম্প্রদায় বানজারার মহিলাদের মতো।

 

অশোক স্তম্ভ

৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সম্রাট অশোক দ্বারা নির্মিত, কলামের এই সিরিজটি সারা ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সবচেয়ে বিখ্যাত স্তম্ভ, সারনাথের সিংহ রাজধানী, চারটি সিংহ তাদের পিছনের পায়ে তাদের পিঠ স্পর্শ করে। এটি 1950 সালে ভারতের জাতীয় প্রতীক হিসাবে গৃহীত হয়েছিল।

অজন্তা গুহা

মহারাষ্ট্র অঞ্চলে অবস্থিত, শিলা-কাটা বৌদ্ধ গুহাগুলির এই গোষ্ঠীতে বিভিন্ন ধরনের গুহাচিত্র এবং ভাস্কর্য রয়েছে। ২য় শতাব্দীতে নির্মিত, এগুলিকে মূলত ভারতের শিল্প ও স্থাপত্যের সেরা জীবিত নমুনা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

 

প্রাগৈতিহাসিক শিলা খোদাই থেকে শুরু করে প্রথাগত শৈলীর সমসাময়িক ব্যাখ্যা পর্যন্ত, ভারতীয় এবং দক্ষিণ এশীয় শিল্প শৈল্পিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবের বিস্তৃতি প্রদর্শন করে চলেছে যা ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে এর নান্দনিকতাকে অবহিত করেছে এবং আকার দিয়েছে। শিল্পের ঐতিহ্যগত কাজগুলি ধর্মীয় মোটিফ এবং পৌরাণিক চিত্রনাট্য প্রদর্শন করে, সমসাময়িক কাজগুলি জাতির সাংস্কৃতিক এবং আদর্শিক বৈচিত্র্যের সাথে মিলন সৃষ্টি করেছে।

(Written by Bachchu Chanda, Master of Fine Art, Kolkata)

(এই ব্লগের সমস্ত ছবি Google থেকে সংগৃহীত

এটি “ভারতীয় শিল্প ও তার প্রাণবন্ত ইতিহাস” এর শেষ পর্ব, কিন্তু শিল্প ইতিহাসের আরও নতুন নতুন বিষয় নিয়ে আরও ব্লগ নিয়মিত পাবেন। তাই নিয়মিত আমাদের ব্লগ Follow করুন।

|| অঙ্কন কথা || পর্ব – ৬

|| মাধ্যম জলরঙ ||

জলরঙ (Water colour) এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা খুব শীঘ্রই কোনো চিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। এই মাধ্যমের দ্বারা কোনো বিষয়কে পরিপূর্ণ খুঁটিনাটি না ধরেই খুব সহজেই সুন্দর রূপে ফুটিয়ে তোলা যায়। তারজন্য চাই অভ্যাস ও ধৈর্য। যেকোনো বিষয়কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে গেলে অভ্যাস ও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়।এই জলরঙের পেপার নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাজারে যে সমস্ত ড্রয়িং খাতা পাওয়া যায় সেগুলি শুরুতে জলরঙ প্র্যাকটিসের জন্য ঠিক আছে কিন্তু তাতে উপযুক্ত জলরঙের ছবি ঠিক ভাবে আঁকা যায় না। এই ধরনের পেপারের জল ধারণ ক্ষমতা খুবই কম থাকে আর তাছাড়া এই পেপার আমরা যতই রং দিই সেই তুলনায় তার উজ্জ্বলতা আসেই না। যার ফলে ছবির সৌন্দর্য্য কমে যায়। তাই জলরঙ করার জন্য আমদের উপযুক্ত কাগজ কেনা জরুরি। কিন্তু উপযুক্ত কাগজ পাবো কোথায়? এটা একটা প্রশ্ন। যাদের বাড়ি কলকাতার আশেপাশে তারা কোনো প্রসিদ্ধ আর্ট এর দোকান থেকে তা সংগ্রহ করতে পারে। এই জলরঙের কাগজের গুণমান অনুযায়ী মূল্য কম বেশি হয়। তবে এই ধরণের পেপার গুলিতে কমবেশি ভালোই কাজ করা যায়। যাদের বাড়ির আশেপাশে এই ধরনের পেপার সংগ্রহ করার উপযুক্ত কোন দোকান নেই, তারা অনলাইনে এই পেপার অর্ডার করতে পারেন। সেখানে আপনি সাইজ A4 থেকে ফুল সিটের কাগজ পেয়ে যাবেন। এরপর বিষয় হল রঙ। মার্কেটে জলরঙের দুটি বিকল্প পাওয়া যায় একটা স্টুডেন্ট ওয়াটার কালার অপরটি হল আর্টিস্ট ওয়াটার কালার। আর্টিস্ট ওয়াটার কালারের দাম একটু বেশি হলেও জলরঙের আসল মজা ও তার বিশেষ ধর্ম স্বচ্ছতাকে ঠিকভাবে বুঝতে গেলে আমাদের ওটাই সংগ্রহ করতে হবে। আর ব্রাশের (তুলি) ক্ষেত্রেও তাও আমরা অফলাইনে অথবা অনলাইন থেকে তা সংগ্রহ করতে পারি। প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকটা রাউন্ড ব্রাশ আর একটা বা দুটি ফ্ল্যাট ব্রাশ (১ ইঞ্চি, ১/২ ইঞ্চি)।

 

(Content subject to copyright)

|| অঙ্কন কথা || পর্ব – ৫

আমরা আগের পর্বেই আলোচনা করেছিলাম একজন শিল্পী বা অঙ্কন শিক্ষার্থীর কাছে সর্বদাই একটা ড্রয়িং প্যাড (খাতা) ও পেন্সিল থাকা অত্যন্ত জরুরী, যাতে আমরা যেকোন অবস্থাতে যেকোন জায়গায় স্কেচ বা ড্রয়িং করতে পারি। আমাদের ড্রয়িং এর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য যারা প্রত্যহ ড্রয়িং এর অভ্যাস করে চলেছেন এবং ড্রয়িং এর দক্ষতা ও গতির উন্নতি করতে চান তাদের জন্য এই আলোচনা পর্ব। ড্রয়িং এর উন্নতি এবং তার দক্ষতা এবং গতি অর্জন করতে গেলে প্রত্যহ লাইফ ড্রয়িং প্র্যাকটিস করা উচিত (অর্থাৎ ব্যক্তিকে দেখে ড্রয়িং অভ্যাস করা)। অর্থাৎ বাড়ির আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অথবা আমরা যখন বাইরে কোথাও যায় সেখানের মানুষজন বা কোনো বস্তু বা কোনো দৃশ্যকে দেখে লাইন ড্রয়িং এর অভ্যাস করা। এক্ষেত্রে শুধু সম্পূর্ণ কোনো মানুষের ড্রয়িং-ই নয় আমরা কোন মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ড্রয়িংও প্র্যাকটিস করতে পারি, যেমন মুখমণ্ডল (পোর্ট্রেট) হাত-পা ও আঙ্গুলের ড্রয়িং ইত্যাদিরও অভ্যাস করতে পারি। যখন এটা প্রত্যহ অভ্যাস করতে করতে আমাদের ড্রয়িং এর দক্ষতার কিছুটা উন্নতি ঘটবে এবং আমাদের ড্রয়িং আগের তুলনায় বেশ কিছুটা উন্নতি হবে তখন আমরা এই ড্রয়িং আরো দ্রুত কিভাবে আঁকা যায় তার চেষ্টা করব, একে বলা হয় র‍্যাপিড স্কেচ। অর্থাৎ আমরা কোন অবজেক্ট এর পুঙ্খানুপুঙ্খ ড্রয়িং না করে কয়েকটা লাইনের মাধ্যমে সেই অবজেক্ট এর অভিব্যক্তিকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা। এই ড্রয়িং আমরা কোনো বাজারে গিয়ে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বসে, ট্রেনে যেতে যেতে বা কোন স্টেশনে বসেও আমরা করতে পারি অর্থাৎ এক্ষেত্রে যেটা হয় আমরা যাকে দেখে ড্রয়িং করছি তিনি অত্যন্ত কম সময়ে সেখানে অবস্থান করবেন, যার ফলে আমাদের বিস্তারিত আঁকা সম্ভব নয় অতএব কম লাইনের ব্যবহার করে আমরা সেই অবজেক্টকে দ্রুত আঁকার চেষ্টা করবো। এটাই হলো র‍্যাপিড স্কেচ। এই স্কেচের অভ্যাস আমাদের লাইন ড্রয়িংকে আরো দৃঢ় করে তুলবে। প্রথমে আমরা এক একটা চরিত্র ধরার চেষ্টা করব। যখন সেটা করতে করতে অভ্যাস হয়ে যাবে, তখন পরবর্তীকালে আমরা একটা পুরো কম্পোজিশন ধরার চেষ্টা করতে পারি। যেমন – কোন বাজার, টেশনের ভিড়, চায়ের দোকান ইত্যাদি আমরা খুব দ্রুত ও কম সংখ্যক লাইনের মাধ্যমে আঁকার চেষ্টা করব।

(Content subject to copyright)

নিচে উদাহরন স্বরূপ দুটি ছবি দেয়া হল। প্রথমটি হল পূর্ণ ড্রয়িং এবং দ্বিতীয়টি হল র‍্যাপিড স্কেচ।