ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু সমাজে বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচিত। এই বিবাহিত জীবনের চিহ্ন বহন করে কিছু নির্দিষ্ট রীতি ও প্রতীক, যার মধ্যে শাঁখা ও সিঁদুর অন্যতম। হিন্দু নারীদের শাঁখা ও সিঁদুর পরার রীতি হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং সামাজিক প্রতীকীতা।
শাঁখা ও সিঁদুরের পরিচয়:
শাঁখা: শাঁখা হলো শঙ্খের তৈরি সাদা চুড়ি, যা সাধারণত বিবাহিত হিন্দু নারীরা পরেন। এটি পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, ওড়িশা, আসাম প্রভৃতি অঞ্চলে বিশেষভাবে প্রচলিত।
সিঁদুর: সিঁদুর হলো লাল রঙের এক ধরনের পাউডার, যা বিবাহের পর স্ত্রী তার সিঁথিতে ব্যবহার করেন। এটি স্বামীর প্রতি তার ভালোবাসা, কর্তব্য ও শুভকামনার প্রতীক।
ধর্মীয় গুরুত্ব:
হিন্দু ধর্মে বিশ্বাস করা হয়, একজন নারী যদি প্রতিদিন শাঁখা ও সিঁদুর পরে, তবে তা তার স্বামীর মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে। এটি দেবী পার্বতীর সাথে সম্পর্কিত, যিনি স্বামী মহাদেবের জন্য চিরকাল পত্নীত্ব বজায় রেখেছিলেন। তাই বিবাহিত নারীরা পার্বতীর আদর্শ অনুসরণ করে এই রীতিগুলি পালন করেন।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি:
শাঁখা ও সিঁদুর নারীর বিবাহিত জীবনের পরিচয় বহন করে। সমাজে একজন নারী বিবাহিত কিনা, তা অনেক সময় এই প্রতীকগুলোর মাধ্যমেই বোঝা যায়। এগুলো কেবল অলংকার নয়, বরং নারীর মর্যাদা ও দায়িত্বের প্রতীক।
মনো-বৈজ্ঞানিক দিক:
সিঁদুর সাধারণত কপালের মাঝখানে বা সিঁথিতে পরা হয়, যা মস্তিষ্কের “আজ্ঞা চক্র” (third eye chakra)-এর কাছে অবস্থিত। বিশ্বাস করা হয়, এই স্থানে সিঁদুর লাগালে মানসিক প্রশান্তি ও স্থিরতা আসে। এছাড়া সিঁদুরে ব্যবহৃত উপাদান কিছুটা উত্তেজক, যা নারীর জীবনীশক্তি ও মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
আধুনিক যুগে এর প্রাসঙ্গিকতা:
বর্তমান সময়ে অনেক নারী নিজস্ব পছন্দ ও বিশ্বাস অনুযায়ী শাঁখা ও সিঁদুর পরেন। কেউ কেউ একে ধর্মীয় আচার হিসেবে পালন করেন, আবার কেউ কেউ আধুনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে এই রীতিতে পরিবর্তন আনেন। তবে, এখনো বহু পরিবারে এই রীতি যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে মানা হয়।
শাঁখা ও সিঁদুর কেবল নারীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির অলংকার নয়, বরং তা তার আত্মপরিচয়, বিশ্বাস ও দায়িত্বের প্রতীক। এই রীতির মাধ্যমে নারী তার বিবাহিত জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেন। যুগ পাল্টালেও এই প্রথার গুরুত্ব আজও অনেকের মনে গভীরভাবে প্রোথিত।