Collected from WhatsApp. Writer unknown. Posted by Smt. Adhikari, Marketing Officer , Child Health Care Arambag and Sri Yoga Center.
-স্যার নমস্কার। ভালো আছেন ?
- “হ্যাঁ বাবা ভালো। মুড়োতে বেশি মাছ রেখো না।” বললেন জয়কৃষ্ণ হাই স্কুলের অঙ্ক মাস্টার অবনী বাবু। আজকাল আর বাজার যেতে পারেন না। কিন্তু মাছটা নিজে কেনা চাই।
তাই মাছ বিক্রেতা কৈলাস বাড়িতে এসেই মাছ দিয়ে যায়।
বাড়ির বারান্দায় রোদে ইজি চেয়ারে বসে খবরের কাগজে চোখ বুলোতে বুলোতে মাছ কিনছিলেন তিনি আর সেই সময়েই কথাটা কানে এলো।
- ‘এই যে বলেছিলে তোমার বাবার ছাত্ররা অনেকে জজ, ব্যারিস্টার, ডাক্তার ? এতো দেখছি মাছওয়ালা।। তা মাছওয়ালার অঙ্কের দৌড় কতটা তোমার বাবার কাছে পড়ে? ” তারপর খিলখিলিয়ে নারী কণ্ঠের হাসি।।
অবনী মাষ্টারের পুত্রবধূ মনীষা। তিনিও শিক্ষিকা। প্রি-প্রাইমারি স্কুলে।।
কথাটা যে অবনী বাবুকে শুনিয়েই বলা হয়েছে তা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন। কিন্তু সংসারে এখন বাতিল ইজি চেয়ারটার মত তিনিও এক কোনে পড়ে থাকেন। বেশি কথা বলার অধিকার নেই। সেই অধিকার জন্মায় ব্যাংক ব্যালেন্স থাকলে। সে ভাঁড়ার শুন্য। আর যাকে মানুষ করতে শূন্য হয়েছে সেই পুত্র নির্মাল্য, এ কথার কোনো প্রতিবাদ পর্য্যন্ত করলো না।
মাছ কেনা হয়ে গেছে। টাকাটা নির্মাল্য দেবে। তাই মাছওয়ালা কৈলাস হাঁক দিলো, “ও দাদা বাবু। এসো গো। আমার আবার ছুটতে হবে”
নির্মাল্যর সাথে বাইরে এসে দাঁড়ালো স্ত্রী মনীষা। তাকে দেখে কৈলাস হালকা হেসে বললো, “ওই তো বৌদি এসে গেছেন। তা বৌদি একটু চট করে হিসেবটা করে দাও না। আমরা তো মুখ্যুসুখ্যু মানুষ।।”
মনীষা মোবাইলে ক্যালকুলেটর খুলে বললো, “বলো”
কৈলাস বললো, “চারশো পঞ্চাশ করে ট্যাংরা মাছ। 750 গ্রাম। কত হলো বৌদি ?”
মনীষা ক্যাকুলেটারে দ্রুত চাপ দিল। ইউনিটারি মেথড। 1Kg-র দাম Rs450 তাহলে 750 গ্রাম হলো… এই যাঃ…. গড়বড় হয়ে গেছে। 1 kg কে 1000 gm ধরতে হবে। তবে 1 গ্রামের দাম বেরোবে.. তবে 750 gm-এর দাম বেরোবে।
মুছে দিলো মনীষা। আবার চাপ দিল ক্যালকুলেটরে। এবারে 1000 gm ।
এর মধ্যে কৈলাস বলে উঠলো, “ও বৈদি । কি হলো ? তাড়াতাড়ি করো ।। আমায় আর এক জনের বাড়ি যেতে হবে”
মনীষা বিরক্ত হয়ে বললো, “অত তাড়া দিও না।। একটু সময় দাও”
কৈলাস মুচকি হেসে বললো, “এই দ্যাখো বৌদি। তোমার মত এত পড়াশুনো জানা লোকের এত সময় লাগলে কি করে হবে? আমি মুখ্যু, আমারই হিসেব হয়ে গেল 337 টাকা 50 পয়সা।। “
তারপর দু মিনিট নীরবতা।। মনীষা অঙ্ক করছে। দুবার মুছে তৃতীয় বার উত্তর এলো।
337 টাকা পঞ্চাশ পয়সা।।
মাছওয়ালা মুখে মুখে করেছে এই অঙ্ক। মনীষা দুবারের ভুলের পর ক্যালকুলেটর দিয়ে।
মাছওয়ালা কৈলাস বললো, “আর ভেটকি আছে।। 600 করে kg বেচছি। স্যারের জন্য 575 টাকা। ভেটকি নিয়েছেন দেড় কেজি। কত হলো বৌদি ?”
মনীষা আবার মোবাইলে চাপ দিল।
কৈলাস আবার মুচকি হেসে বললো, “আঃ আবার মোবাইল কেন। 575 এর অর্ধেক 287 টাকা পঞ্চাশ পয়সা। তাহলে দেড় kg হলো 575 যোগ 287 টাকা।। পঞ্চাশ পয়সা বৌদির জন্য ছেড়ে দিলাম। তাহলে সব শুদ্ধু দাঁড়ালো 862 টাকা।। “
মনীষার মোবাইলে ক্যালকুলেটর একই কথা বলছে।।
-” কি মিললো?” কৈলাসের গলায় শ্লেষের সুর।।
তারপর মাছের ঝুড়িটা মাথায় তুলতে তুলতে কৈলাস বললো, ” বৌদি , আপনার মাষ্টার ভাগ্যটা ভালো না। আপনি আমাদের স্যারের মত অঙ্ক মাষ্টার পান নি।। আমি আমার কপালের জন্য মাছ বেচছি।। কিন্তু এখান থেকে আমি যার বাড়ি মাছ দিতে যাবো সেও আমার সঙ্গে স্কুলে পড়ত। স্যারেরই ছাত্র। নাম বিনয় সেনগুপ্ত ।। এবার পদ্মশ্রী পেয়েছে।।”
চোখ ছানা বড়া হয়ে গেল মনীষার ।। বিনয় সেনগুপ্ত। এ নাম সে তো চেনে। সে যে স্কুলে পড়ায় সেই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।। আরো স্কুল কলেজ তাঁর আছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদনের জন্য তিনি এবার পদ্মশ্রী পেয়েছেন।। বেশির ভাগ সময় দিল্লিতে থাকেন।।”
মাথায় ঝুড়ি তুলে বেরিয়ে যাবার আগে কৈলাস একবার ঘুরলো।
অবনীবাবুর চোখ ঝাপসা।।
কৈলাস তাঁকে বললো , “বিনয় আপনার সাথে খুব শিগগিরি দেখা করতে আসবে বলেছে স্যার।। পদ্মশ্রী পাবার পর এই গত সপ্তাহে কলকাতা এসেছে।। আপনাকে এসে প্রণাম না করলে ও শান্তি পাচ্ছে না”
কৈলাস বেরিয়ে গেল। মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকে গেল মনীষা আর নির্মাল্য।।
অবনী বাবু চোখের জল মুছে, এক বুক গর্ব নিয়ে তাকালেন টেবিলে র দিকে।