🌺🌺 দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব কাহিনী🌺🌺

আজ দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব তিথি।

 

‘নারদপঞ্চরাত্র’ শাস্ত্র মতে ছিন্নমস্তা দেবীর আবির্ভাবের একটি কাহিনী আছে।

 

একদা দেবী পার্বতী তাঁর দুই সহচরী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে মন্দাকিনীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নানান্তে জয়া ও বিজয়ার ক্ষুধার উদ্রেগ হওয়ায় দেবী পার্বতীর কাছে আহার চাইলেন। দেবী বললেন – কৈলাসে গিয়ে আহার প্রদান করবো। কিন্তু বারবার তারা ক্ষুধার কথা জানিয়ে প্রার্থনা করলে এই জয়া-বিজয়া ডাকিনী-বর্ণিনী রূপে মায়ের দুপাশ থেকে খাদ্য প্রার্থনা করলে করুণাময়ী জননী তাদের এই প্রার্থনা শুনে নিজের বাম নখাগ্র দিয়ে নিজেরই মস্তক ছিন্ন করে সেটি নিজের বামকরতলে ধারণ করলেন। ছিন্ন মস্তক ও কণ্ঠ থেকে ত্রিধারায় রক্তস্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। বাম ও দক্ষিণ দিক থেকে নির্গত দুটি ধারা দুই সহচরী জয়া ও বিজয়ার ভয়ঙ্করী মূর্তি ডাকিনী ও বর্ণিনীর ঊর্ধ্বমুখ লেলিহান জিহ্বায় সংযোজিত হল। আর মধ্যধারাটি নিজ ছিন্ন মুখে পড়তে লাগল। এই ভাবে নিজ মুণ্ড ছিন্ন করে সহচরীদের পরিতৃপ্ত করেছিলেন বলে তাঁর নাম হল ছিন্নমস্তা।

 

দেবীর নিজ রুধির ধারা এভাবে গ্রহণ করতে দেখে ত্রিলোক হলেন স্তম্ভিত। দেবতারাও বিকট মূর্তি দেখে ভগবতীকে প্রণাম জানালেন। সন্তানদের ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর করতে তিনি স্বেচ্ছায় সানন্দে নিজ মুণ্ড ছিন্ন করে নিজ রক্তে তাদের পরিতৃপ্ত করেন। সহচরীগণ তৃপ্ত হলে দেবী কৈলাসে ফিরে গেলেন। পুনরায় তিনি হলেন শিব জায়া গৌরী।

 

দশমহাবিদ‍্যা দেবীদের মধ্যে ষষ্ঠ মহাবিদ্যা দেবী হলেন ছিন্নমস্তা। ছিন্নমস্তাকে উগ্র মহাবিদ্যাও বলা হয়। ‘দশমহাবিদ্যা’র ভয়ঙ্করী রূপের প্রকাশ হয়েছে ‘দেবী ছিন্নমস্তা’য়।

 

ছিন্নমস্তা দেবী প্রত্যালীঢ় ভঙ্গীতে দন্ডায়মানা,গলায় তার নাগ যজ্ঞের উপবীত। সর্বদা ছিন্ন মস্তক ও খড়্গে ভূষিতা, দিগবসনা, নিজ কবন্ধের দ্বারা সানন্দে অমৃতকল্প রক্তধারা পানরতা, সর্পের মুকুট মনি দ্বারা ভূষিতা, ত্রিনয়না, বক্ষদেশ পদ্মে ভূষিতা, বিপরীত বিহারে রতা এবং দেবীর গাত্র বর্ণ জবা ফুলের ন্যায়। পীনোন্নত পয়োধরা, সদা ষোড়শ বর্ষীয়া। তাঁর একদিকে মুক্তকেশী লোহিতসৌম্যা, দিগম্বরী বর্ণিনী ও অন্যদিকে প্রলয় অগ্নির মতো ডাকিনী শক্তি। এঁরা দেবীর ছিন্ন কন্ঠের রক্তপানে রতা। দেবী ছিন্নমস্তার পদতলে সকাম রত মদন ও রতি দেবী থাকেন।

 

ছিন্নমস্তা দেবীর এই গুপ্ত রূপে বহু তত্ত্বকথা লুক্কায়িত- যা কেবল গুরু পরম্পরাতে গুপ্ত। ছিন্নমস্তা দেবী প্রত্যালীঢ় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পদতলে সকামরত মদন ও রতিকে দলন করেন। এই রূপ ব্রহ্মচর্য বৈরাগ্য মূর্তি। ছিন্নমস্তা দেবীকে ব্রহ্মচর্যস্বরূপিণী দেবী বলা হয়। এই দেবীর পূজা সাধারণ কেও করতে পারেন না। কেবল তন্ত্র সাধকেরা তন্ত্র মতে দেবীর পূজা করেন। বিভিন্ন দেবী মন্দিরের দশমহাবিদ্যার সঙ্গে তাঁর পূজা প্রচলিত। তবে গৃহস্থবাড়িতে তাঁর পূজা করা হয় না। কেবলমাত্র তান্ত্রিক, যোগী ও সর্বত্যাগীগণ বীরাচারী তান্ত্রিক মতে তাঁর পূজা করে থাকেন।

 

ছিন্নমস্তার শতনাম ও সহস্রনাম স্তোত্রে দেবীর ভীষণা প্রকৃতি ও ক্রোধের উল্লেখ আছে। এই সকল নামে তাঁকে প্রেতসেবিতা ও রক্তপানকারিণী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি নররক্ত ও নরমাংসে প্রীতা হন। দেহরোম, মাংস ও ভয়ংকর মন্ত্রে তাঁর পূজা করা হয়।

 

তন্ত্রসাধকগণ সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের জন্য ছিন্নমস্তার পূজা করেন। ছিন্নমস্তার মন্ত্র শ্রীঁ ক্লীঁ হ্রীঁ ঐঁ বজ্রবৈরোচনীয়ে হুঁ হুঁ ফট্ স্বাহা নারী বশীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাঁর মন্ত্র কাউকে মন্ত্রচালিত করা বা কারোর ক্ষতি করার জন্যও ব্যবহার করা হয়। কাব্যশক্তি, সুস্থতা, শত্রুবিজয়, বিঘ্নোপসারণ, রাজপ্রসাদ লাভ, অন্যকে আকর্ষণ, শত্রুরাজ্য জয় ও মোক্ষলাভ – মহাবিদ্যা আরাধনার এই সকল উদ্দেশ্যেও ছিন্নমস্তার পূজা করা হয়।

 

‘তন্ত্রশাস্ত্র’ অনুসারে অর্ধরাত্রে দেবীর স্বরূপ কল্পনা করে নিষ্ঠার সঙ্গে ‘ছিন্নমস্তার ধ্যান’ করলে সাধক বা সাধিকা ‘সরস্বতী সিদ্ধ’ হন। ‘শত্রুবিজয়’, ‘রোগমুক্তি’, ‘রাজ্যপ্রাপ্তি’ এবং ‘দুর্লভ মোক্ষপ্রাপ্তি’র জন্য ‘ছিন্নমস্তার ধ্যান ও পূজা’ অত্যন্ত ফলদায়ক।

 

মা ছিন্নমস্তার মন্ত্র —

 

শ্রীঁ ক্লীঁ হ্রীঁ ঐঁ বজ্রবৈরোচনীয়ে হুঁ হুঁ ফট্ স্বাহা।

 

আজ আবির্ভাব তিথিতে মা ছিন্নমস্তা সবার মঙ্গল করুন।

 

.

 

জয় মা  সংগৃহিত  (published by SHRUTI ADHYA KUNDU MARKETING OFFICER OF SYCN ) 

 

.