<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research তিলক পড়ার বিধি - Sri Yoga Center Ashram's Blog

তিলক ধারণের বিধি কি?

16f7dc67de6ac98e39c93fcd5be9c4e4

16f7dc67de6ac98e39c93fcd5be9c4e4

 

তিলক পড়া হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার বা ধর্মীয় চিহ্ন। এটি সাধারণত কপালের মাঝখানে দেওয়া হয় এবং এটি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, শুদ্ধতা ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে তিলক পড়ার সম্পূর্ণ নিয়ম ব্যাখ্যা সহ দেওয়া হলো।

তিলক পড়ার অর্থ ও গুরুত্ব:

আধ্যাত্মিকতা: কপালের মাঝখানে ‘অজ্ঞান চক্র’ বা ‘আজ্ঞা চক্র’ রয়েছে, যেটি আত্মিক জ্ঞান ও ধ্যানের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে তিলক দিলে একাগ্রতা বাড়ে।

ধর্মীয় পরিচয়: বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন রকম তিলক পড়ে, যা তাদের ইষ্টদেবতা ও দর্শনের পরিচয় বহন করে।

রক্ষা কবচ: বিশ্বাস করা হয় যে তিলক নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করে।

 

তিলক পড়ার নিয়ম:

১. সময় ও প্রস্তুতি:

স্নান করার পরে তিলক পড়া উচিত, কারণ এটি শুদ্ধতার প্রতীক।

পবিত্রতা বজায় রেখে, ধ্যান বা প্রার্থনার আগে তিলক পড়া উত্তম।

২. উপকরণ:

গোপীচন্দন (বিশেষত বিষ্ণু ভক্তরা)

ভস্ম (ভিভূতি) – শৈব সম্প্রদায়ের জন্য

কুমকুম – সাধারণত গৃহিণীরা বা শক্তি উপাসকরা ব্যবহার করেন

সন্দল (চন্দন) – শীতলতা ও পবিত্রতার প্রতীক

৩. তিলক পড়ার প্রক্রিয়া:

ডান হাতের তর্জনী বা অঙ্গুলি ব্যবহার করে তিলকের দ্রব্য নিয়ে তিলক দিন।

2. তিলকের আকৃতি ও স্থান:

বিশ্ণু ভক্ত: দুইটি উলম্ব রেখা, মাঝে তুলসী পাতা বা গোপীচন্দনের বিন্দু (উর্ধ্বপুন্ড্র)

শিব ভক্ত: তিনটি ভস্মের রেখা (ত্রিপুণ্ড্র)

শক্তি ভক্ত: লাল কুমকুম বা চন্দনের বিন্দু

 

3. তিলক দেওয়ার সময় মনে মনে ইষ্টদেবতার নাম জপ করুন বা মন্ত্র পাঠ করুন।

১. শ্রী বিষ্ণু বা নারায়ণ (উর্ধ্বপুণ্ড্র তিলক):

তিলক: দুইটি সাদা উলম্ব রেখা, মাঝে তুলসী পাতা বা গোপীচন্দনের বিন্দু।

মন্ত্র:

ऊर्ध्वपुण्ड्रं धराम्यद्य नारायणप्रीत्यर्थम्।
বাংলা উচ্চারণ: ঊর্ধ্বপুন্ড্রং ধরাম্যদ্য নারায়ণ প্রীত্যর্থম্।
অর্থ: আমি আজ নারায়ণের প্রীতির জন্য এই তিলক ধারণ করছি।

২. শ্রী কৃষ্ণ (গোপীচন্দনের তিলক):

মন্ত্র:

गोपिचन्दनं धारयामि श्रीकृष्णप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: গোপীচন্দনং ধারযামি শ্রীকৃষ্ণ প্রীত্যর্থম্।

অর্থ: আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির জন্য গোপীচন্দনের তিলক ধারন করছি।

৩. শ্রী রামচন্দ্র (রামভক্তদের তিলক):

মন্ত্র:

रामचन्द्राय नमः।
বাংলা: রামচন্দ্রায় নমঃ।

(তিলক দেবার সময় অন্তরে এই নামজপ করা হয়।)

৪. শিব (ত্রিপুণ্ড্র তিলক – তিনটি ভস্মের রেখা):

তিলক: তিনটি ভস্মের আড়াআড়ি দাগ

মন্ত্র:

विभूतिं धारयामि शिवप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: বিভূতিং ধারযামি শিব প্রীত্যর্থম্।

অথবা সহজে শুধু:

ॐ नमः शिवाय।
(ওঁ নমঃ শিবায়)

৫. দেবী দূর্গা / পার্বতী (লাল কুমকুম তিলক):

মন্ত্র:

कुंकुमं धारयामि मातृदेवीप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: কুঙ্কুমং ধারযামি মাতৃদেবী প্রীত্যর্থম্।

অথবা:

ॐ दुर्गायै नमः।
(ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ)

৬. হনুমানজী (লাল বা কমলা চন্দনের তিলক):

মন্ত্র:

ॐ श्री हनुमते नमः।
(ওঁ শ্রী হনুমতে নমঃ)

৭. সূর্যদেব (রক্ত চন্দন তিলক):

মন্ত্র:

ॐ सूर्याय नमः।
(ওঁ সূর্যায় নমঃ)

৮. গণেশ (লাল কুমকুম বা সিন্দুর):

মন্ত্র:

ॐ गं गणपतये नमः।
(ওঁ গম্ গণপতয়ে নমঃ)

৯. কালী মা (লাল কুমকুম / সিঁদুর / রক্তচন্দন)

মন্ত্র :

ॐ कालीकायै नमः।
বাংলা উচ্চারণ: ওঁ কালীকায়ৈ নমঃ।
অর্থ: কালী মাকে আমি প্রণাম জানাই।

তিলক পড়া শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। প্রতিদিন স্নান করার পর, শুদ্ধ চিত্তে তিলক ধারণ করলে তা মনকে শান্ত করে, আত্মশক্তি বাড়ায় এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিকে দৃঢ় করে।

তিলকের রূপ, উপকরণ ও মন্ত্র উপাস্য দেবতার উপর নির্ভরশীল—শিব, বিষ্ণু, কালী, দুর্গা, রাম, কৃষ্ণ—যার উপাসনা করা হয়, তার অনুযায়ী তিলক ধারন করতে হয়।

তিলক পড়ার সময় দেবতার নাম বা মন্ত্র জপ করলে তা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং অন্তরের সাধনাও হয়ে ওঠে।

সারকথা:
তিলক হলো ভক্তির চিহ্ন, আত্মপরিচয়ের প্রতীক, এবং একাগ্রতার কেন্দ্র। সঠিক নিয়ম, শুদ্ধ উপকরণ ও আন্তরিকতার সঙ্গে তিলক পড়লে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগ্রত করে।

“This content is subject to copyright.” April 21,  2025