<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research আধ্যাত্মিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা - Sri Yoga Center Ashram's Blog

সন্ধ্যায় শঙ্খ বাজানো হয় কেন? এবং শঙ্খ তিন বার বাজানোর পিছনে কি কারণ?

Images

Images

 

 

ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সংস্কৃতিতে শঙ্খ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় প্রতীক। হিন্দুধর্মে শঙ্খকে পবিত্রতা, সৌভাগ্য ও শক্তির প্রতীক হিসেবে মানা হয়। সন্ধ্যাবেলায় মন্দিরে বা বাড়িতে শঙ্খ বাজানো এক বিশেষ প্রথা, যা শুধু ধর্মীয় আচরণ নয়, বৈজ্ঞানিক ও সামাজিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ।

শঙ্খ কী ও এর ধর্মীয় তাৎপর্য:
শঙ্খ মূলত একটি সামুদ্রিক ঝিনুক, যা প্রাকৃতিকভাবে গঠিত হয়। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, শঙ্খ দেবতা বিষ্ণুর একটি অস্ত্র, যেটিকে তিনি তার ডান হাতে ধারণ করেন। শঙ্খ থেকে উৎপন্ন ধ্বনি অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে এবং পরিবেশকে পবিত্র করে তোলে বলে বিশ্বাস করা হয়।

সন্ধ্যায় শঙ্খ বাজানোর পেছনে কারণসমূহ:

১. ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কারণ:
সন্ধ্যা হল দিন ও রাতের সংযোগকাল – এই সময় হিন্দু ধর্মে “সন্ধ্যা আরতি” বা উপাসনা করা হয়। এই আরতির শুরুতে বা শেষে শঙ্খ বাজানো হয় ঈশ্বরের আরাধনার অংশ হিসেবে। শঙ্খ ধ্বনিতে পরিবেশ পবিত্র হয় এবং তা মনকে একাগ্র করে ভক্তিময় চেতনা জাগায়।

২. বৈজ্ঞানিক কারণ:
শঙ্খ বাজালে উচ্চ কম্পাঙ্কের একটি শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি হয়। এই শব্দ বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংসে সহায়ক। ফলে সন্ধ্যাবেলায় যখন সূর্যের আলো কমতে থাকে এবং জীবাণু সক্রিয় হয়, তখন শঙ্খ ধ্বনি পরিবেশকে জীবাণুমুক্ত করতে সাহায্য করে।

৩. মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব:
শঙ্খের ধ্বনি শ্রবণ করলে মানুষের মন শান্ত হয়। এটি মানসিক চাপ কমায় এবং মনোসংযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সন্ধ্যাবেলায় দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে নতুন প্রেরণা পাওয়ার একটি উপায় হয়ে দাঁড়ায় শঙ্খ ধ্বনি।

একটি সময়ে গ্রামে-গঞ্জে সন্ধ্যার সময় শঙ্খ বাজানো একটি সামষ্টিক কার্যকলাপ ছিল। এতে করে প্রত্যেকেই সন্ধ্যার উপাসনার জন্য প্রস্তুতি নিত। এটি একটি ঐক্যবদ্ধ ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি করত।

শঙ্খ তিন বার বাজানোর পিছনে কারণ:

হিন্দু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে শঙ্খ সাধারণত তিনবার বাজানো হয়, এবং এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক ও প্রতীকী ব্যাখ্যা। নিচে এই তিনবার শঙ্খ বাজানোর প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো:

১. তিনটি দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা (ত্রিদেব):

শঙ্খ তিনবার বাজানো হয় ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর – এই ত্রিদেবের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার জন্য।

প্রথমবার শঙ্খ বাজানো হয় ব্রহ্মা – সৃষ্টি কর্তার উদ্দেশ্যে।

দ্বিতীয়বার বাজানো হয় বিষ্ণু – পালন কর্তার উদ্দেশ্যে।

তৃতীয়বার বাজানো হয় শিব/মহেশ্বর – সংহার কর্তার উদ্দেশ্যে।

 

২. শরীর, মন ও আত্মার শুদ্ধির জন্য:

শঙ্খ ধ্বনি যখন তিনবার বাজে, তখন তা মানুষের শরীর, মন, ও আত্মা – এই তিনটি স্তরে পবিত্রতা আনে বলে বিশ্বাস করা হয়।

এটি শরীরকে সক্রিয় করে,

মনকে একাগ্র করে,

আত্মাকে জাগ্রত করে।

 

৩. তিনটি কাল বা সময়কে নির্দেশ করে:

শঙ্খের তিনবার ধ্বনি অতীত, বর্তমান, ও ভবিষ্যত – এই তিন সময়কে প্রতীকীভাবে বোঝায়।
এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সমস্ত সময়েই ঈশ্বরের উপস্থিতি রয়েছে এবং আমাদের প্রতিটি কর্মে তাঁর স্মরণ থাকা উচিত।

৪. বৈদিক ব্যাখ্যা – ত্রিগুণ (সত্ব, রজ, তম):

হিন্দু দর্শনে বলা হয়, সৃষ্টির মূল তিনটি গুণ আছে – সত্ত্ব (শুদ্ধতা), রজ (ক্রিয়া), এবং তম (জড়তা)।
শঙ্খ ধ্বনি এই তিন গুণের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সত্ত্বগুণকে জাগ্রত করে, যা ধ্যান ও পূজার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।

৫. আচার শুরুর সংকেত:

শঙ্খ তিনবার বাজানোর মাধ্যমে পূজা বা যেকোনো আচার শুরুর জন্য দেবতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রথম ধ্বনিতে পরিবেশ শুদ্ধ হয়,

দ্বিতীয় ধ্বনিতে ভক্তদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়,

তৃতীয় ধ্বনিতে ঈশ্বরের কাছে আহ্বান জানানো হয়।

সন্ধ্যায় শঙ্খ বাজানো শুধুই একটি ধর্মীয় প্রথা নয়, এর পেছনে রয়েছে গহীন বৈজ্ঞানিক, আধ্যাত্মিক ও সামাজিক দিক। এই প্রাচীন রীতি আজও আমাদের জীবনে প্রাসঙ্গিক, কারণ এটি পরিবেশ, মন ও সমাজকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। তাই এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই গুরুত্বপূর্ণ।