<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Indian spiritual - Sri Yoga Center Ashram's Blog - Page 8

হরিনাম কীর্তন কেন করা হয়?

Images

Images

 

হরিনাম বলতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম (যেমন “হরে কৃষ্ণ, হরে রাম”) বোঝানো হয়। কীর্তন মানে হচ্ছে ভগবানের গুণ, লীলা, নাম, রূপ ইত্যাদির গানে বা উচ্চারণে প্রকাশ। হরিনামের কীর্তন হলো ভগবানের নামের সমবেত গাওয়া বা জপ করা। এখন চলুন ধাপে ধাপে বোঝা যাক কেন হরিনামের কীর্তন করা হয়:

১. আত্মশুদ্ধির জন্য

শাস্ত্র মতে (বিশেষত ভাগবত পুরাণ ও চৈতন্যচরিতামৃত অনুযায়ী), হরিনামের কীর্তনে হৃদয় শুদ্ধ হয়। আমাদের মনে প্রচুর কামনা, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদি অশুদ্ধতা থাকে। ভগবানের নাম উচ্চারণ করলে সেই অশুদ্ধতা দূর হয় এবং মন ঈশ্বরের দিকে আকৃষ্ট হয়।

উদ্ধৃতি:
“চেতোদর্পণমার্জনং” — (চৈতন্যচরিতামৃত)
(অর্থ: ভগবানের নাম হৃদয়ের দর্পণকে পরিশুদ্ধ করে।)

২. কলিযুগের জন্য শ্রেষ্ঠ ধর্ম

শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কলিযুগে অন্যান্য যোগ বা তপস্যা কঠিন হলেও, হরিনাম সংকীর্তন সবচেয়ে সহজ ও ফলপ্রদ। তাই বলা হয়:

শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ (১২.৩.৫২):
“কলোর দোষনিধে রাজন অস্থি এক মহৎ গুণঃ।
কীর্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তঃ সংঘঃ পরং ভজেত্।”
(অর্থ: হে রাজন, যদিও কলিযুগে অনেক দোষ আছে, তবে একটি বড় গুণ হলো—কেবল কৃষ্ণ নাম কীর্তন করলেই মুক্তি লাভ করা যায়।)

৩. ঈশ্বরের সরাসরি উপস্থিতি

শাস্ত্র অনুসারে ভগবান ও ভগবানের নাম অভিন্ন। যখন আমরা হরিনামের কীর্তন করি, তখন প্রকৃতপক্ষে আমরা ভগবানের সান্নিধ্যে থাকি।
“নামচিন্তামণি কৃষ্ণ চৈতন্য রসবিগ্রহঃ” — ভগবান নামের মধ্যে পূর্ণ চেতনা, আনন্দ ও স্বয়ং ভগবানের অস্তিত্ব বর্তমান।

৪. ভক্তি ও প্রেমের বৃদ্ধি

হরিনামের কীর্তন হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও প্রেম জাগায়। এই প্রেমই জীবের চূড়ান্ত লক্ষ্য (পরমার্থ)। চৈতন্য মহাপ্রভু শিক্ষা দিয়েছিলেন —
“হরিনাম কীর্তন করে প্রেম লাভ করা যায়।”

৫. দুঃখ ও সংকট দূর হয়

জীবনের দুঃখ, ক্লেশ, মানসিক অশান্তি ইত্যাদি হরিনামের কীর্তনের দ্বারা দূর হয়। মন প্রশান্ত হয় ও আনন্দে পূর্ণ হয়। এজন্য ভক্তরা বিপদের সময়ও কীর্তন করেন।

৬. বিশ্বশান্তির জন্য

কেবল ব্যক্তিগত মুক্তি নয়, বিশ্বশান্তির জন্যও হরিনাম কীর্তন গুরুত্বপূর্ণ। বহু সাধু-ভক্ত বিশ্বাস করেন, যদি বিশ্ববাসী সম্মিলিতভাবে হরিনাম করে, তবে বিশ্ব থেকে হিংসা, লোভ, যুদ্ধ ইত্যাদি কমে যাবে।

সংক্ষেপে:

হরিনামের কীর্তন করা হয়:

আত্মা শুদ্ধির জন্য।

কলিযুগের সহজ ধর্মপথ হিসেবে।

ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকার জন্য।

ভক্তি ও প্রেমের বিকাশের জন্য।

দুঃখ ও কষ্ট মোচনের জন্য।

বিশ্বশান্তির জন্য।

মহামন্ত্র (সবচেয়ে প্রসিদ্ধ)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র:

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ
কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম
রাম রাম হরে হরে

 

এই মহামন্ত্রের জপ বা কীর্তন জীবের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং ঈশ্বরপ্রেমের দ্বার খুলে দেয়। চৈতন্য মহাপ্রভু নিজে এই মন্ত্রের প্রচার করেছেন।

এই হরিনাম কীর্তনের কোনো বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ বা ব্যাখ্যা আছে কি?

১. ধ্বনি ও কম্পনের প্রভাব

যখন আমরা “হরে কৃষ্ণ” বা অন্য মন্ত্র উচ্চারণ করি, তখন নির্দিষ্ট কম্পন বা ফ্রিকোয়েন্সি সৃষ্টি হয়।

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক শব্দ কম্পন (positive vibration) মস্তিষ্কে আনন্দ হরমোন (ডোপামিন, সেরোটোনিন) নিঃসরণ ঘটায়।

মন্ত্রের সুনির্দিষ্ট ছন্দ ও শব্দশক্তি মনকে প্রশান্ত করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করে।

২. সামূহিক কীর্তন ও “সিনক্রোনাইজেশন”

যখন একসাথে অনেক মানুষ এক সুরে কীর্তন করে, তখন সবার মস্তিষ্কের ব্রেনওয়েভ (EEG patterns) একরকম হয়ে যায়। একে বলে নিউরাল সিঙ্ক্রোনাইজেশন।

এর ফলে দলগতভাবে সুখানুভূতি, সংহতি (bonding) এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৩. স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানো

মন্ত্রোচ্চারণ, বিশেষত সমবেত গানের মাধ্যমে, কর্টিসল (stress hormone) এর মাত্রা কমে যায়।

কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, নিয়মিত কীর্তন বা জপ মানসিক চাপ, উদ্বেগ (anxiety), বিষণ্নতা (depression) ইত্যাদি কমাতে সহায়ক।

৪. শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ

কীর্তন বা মন্ত্র উচ্চারণ করার সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ধীরে এবং নিয়মিত হয়।

এটা “pranayama” (শ্বাসের যোগব্যায়াম) এর মতো কাজ করে, যা শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় এবং স্নায়ুকে শান্ত করে।

৫. মস্তিষ্কের গামা-ওয়েভ বৃদ্ধি

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মন্ত্র বা হরিনাম জপ করার সময় মস্তিষ্কের গামা ওয়েভ (৪০ হার্টজ) বৃদ্ধি পায়।

গামা ওয়েভ যুক্ত হয় উচ্চতর সচেতনতা, আনন্দ ও তীব্র মনঃসংযোগের সাথে।

 

সংক্ষেপে:

হরিনাম কীর্তন —

মনের অশান্তি দূর করে।

মানসিক চাপ কমায়।

আত্মবিশ্বাস ও আনন্দ বাড়ায়।

মস্তিষ্ক ও শরীরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

মানুষের মধ্যে ঐক্য ও ভালোবাসা তৈরি করে।

গরমকালে কেন হরিনাম করা হয়?

Images

Images

 

গরমকালে হরিনাম কেন করা হয় — এটি ধর্মীয়, সামাজিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিস্তারিতভাবে বললে:

১. ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে:

হরিনাম (বিশেষত “হরে কৃষ্ণ হরে রাম” ইত্যাদি) হলো ভগবানের নামস্মরণ। শাস্ত্র মতে কালীযুগে (বর্তমান যুগ) হরিনাম সংকীর্তনই হলো মুক্তির প্রধান উপায়:

বৈষ্ণব ধর্ম (বিশেষত চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রচলিত দর্শন) বলে, গ্রীষ্মকালে, যখন শরীর দুর্বল হয়, মন ক্লান্ত থাকে, তখন ভগবানের নাম জপ বা গাওয়ার মাধ্যমে মন-প্রাণ সতেজ হয়।

গরমকালে মানুষ রোগ-ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই ঈশ্বরের নামে মন একাগ্র করে রোগ, দুঃখ ও ক্লেশ থেকে মুক্তি প্রার্থনা করা হয়।

শাস্ত্রের উল্লেখ:
ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, পদ্ম পুরাণ ইত্যাদিতে বলা হয়েছে — গ্রীষ্মের তাপদাহে ভগবান নাম-স্মরণ করলে পুণ্য অর্জন হয় এবং পাপ নষ্ট হয়।

২. সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে:

সমষ্টিগত হরিনাম সংকীর্তন (দলের মধ্যে একত্রে গান) মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। গ্রীষ্মে যখন মানুষ ক্লান্ত ও অস্থির হয়ে পড়ে, তখন এই সম্মিলিত গান একধরনের মানসিক শীতলতা দেয়।

গরমের সময়ে সাংস্কৃতিক মেলা, যাত্রা, হরিনাম যাত্রা ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজে আনন্দ এবং সামাজিক সংযোগ বজায় থাকে।

 

৩. পরিবেশগত দৃষ্টিকোণ থেকে:

আগে গ্রামে গ্রীষ্মকালে হরিনাম করতে করতে গ্রাম পরিক্রমা করা হতো। এতে:

মানুষ ভোরবেলা বা সন্ধ্যায় বের হতো, যা প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করত।

শীতল সময়ে হাঁটাচলা এবং গান করা শরীরের জন্য উপকারী ছিল।

অনেক সময় জল ছিটিয়ে, বৃক্ষরোপণ বা পরিবেশ রক্ষার মন্ত্রও উচ্চারিত হতো হরিনামের সঙ্গে।

 

৪. গ্রীষ্মকালীন ধর্মীয় উৎসবের অংশ:

গরমকালে রথযাত্রা, দোলপূর্ণিমা পরবর্তী সংকীর্তন, নন্দ উৎসব ইত্যাদির সময় ব্যাপক হরিনাম হয়।

এগুলি মূলত কৃষ্ণের নাম-স্মরণকে কেন্দ্র করে হয় এবং ভক্তির মাধ্যমে আত্মিক তৃপ্তি প্রদান করে।

প্রথম অংশ: চৈতন্য মহাপ্রভুর হরিনাম প্রচার ইতিহাস

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু (১৪৮৬–১৫৩৪ খ্রিঃ) ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অবতার রূপে মেনে নেওয়া হয়। তিনি বিশেষ করে হরিনাম-সংকীর্তন আন্দোলন (নাম সংকীর্তন) শুরু করেন, যার মাধ্যমে গোটা সমাজের আধ্যাত্মিক উন্নতির ব্যবস্থা করেছিলেন।

তাঁর হরিনাম প্রচারের মূল বৈশিষ্ট্য:

“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে
হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে” — এই মহামন্ত্রের মাধ্যমে সর্বত্র ভক্তি আন্দোলন ছড়িয়ে দেন।

মহাপ্রভু বিশ্বাস করতেন:
“কলিযুগে কেবল নামসংকীর্তনের মাধ্যমেই মুক্তি সম্ভব”। তাই তিনি সবাইকে গানের ছন্দে ঈশ্বরের নাম জপ করতে উৎসাহ দেন।

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত — সব ঋতুতে মহাপ্রভু এবং তাঁর ভক্তগণ নিত্যানন্দ, অদ্বৈত আচার্য প্রভৃতি মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হরিনাম প্রচার করতেন।
গরমের সময়ও দিনে-রাতে কীর্তন চলত — বিশেষত সন্ধ্যাবেলা একটু ঠান্ডা হওয়ার সময় বড় বড় শোভাযাত্রা হতো।

কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা:

নদিয়া (নবদ্বীপ) অঞ্চলে তিনি ‘নাগর সংকীর্তন’ চালু করেছিলেন, যেখানে শত শত মানুষ ঢোল, করতাল, মৃদঙ্গ নিয়ে রাস্তায় বের হতেন।

একবার গ্রীষ্মকালে প্রবল গরমের মধ্যেও মহাপ্রভু সমবেত কীর্তনের নেতৃত্ব দেন, এবং লোকজনের মনে গভীর আধ্যাত্মিক আনন্দের সঞ্চার হয়।

মহাপ্রভু বলেছিলেন:
“প্রকৃতির পরিবর্তন যেমন গ্রীষ্ম বা বর্ষা — ভক্তির পথে বাধা নয়; ভগবান নাম গাওয়া সব ঋতুতে সমান জরুরি।”

 

দ্বিতীয় অংশ: শাস্ত্রসম্মত নির্দেশ (Scriptural Instructions)

গ্রীষ্মকালে বিশেষভাবে হরিনাম বা সংকীর্তনের গুরুত্ব বিভিন্ন পুরাণ ও শাস্ত্রে উল্লেখ আছে:

১. ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ:

বলা হয়েছে:
“গ্রীষ্মকালে ভগবানের নাম স্মরণ করে যে ব্যক্তি সংকীর্তন করে, তার পাপ আগুনে দগ্ধ তৃণের মতো ভস্ম হয়।”

২. পদ্ম পুরাণ:

“গ্রীষ্মের তাপদাহে যারা ঈশ্বরের নামগান করে, তারা শুধু নিজেদের নয়, তাদের চারপাশের পরিবেশকেও পবিত্র করে।”

৩. ভগবত পুরাণ (শ্রীমদ্ভাগবতম):

উল্লেখ আছে:
“এই কলিযুগে সংকীর্তন যজ্ঞই প্রধান ধর্ম।”
ঋতু নির্বিশেষে — বিশেষত দুর্যোগপূর্ণ সময়েও — সংকীর্তনই মোক্ষের পথ।

৪. কালীসংক্রান্তি তত্ত্ব:

কিছু প্রাচীন তন্ত্র ও পুরাণ মতে, গ্রীষ্মকাল হচ্ছে শরীর ও চেতনার জন্য চরম পরীক্ষার সময়। এই সময় বিশেষত ঈশ্বরচিন্তন ও নামসংকীর্তন প্রয়োজন, যাতে শরীর-মন ভারসাম্য বজায় থাকে।

সংক্ষেপে:

গরমকালে হরিনাম করা হয় কারণ এটি শরীর, মন এবং আত্মার প্রশান্তি দেয়, রোগ ও পাপ থেকে মুক্তি দেয়, সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষা করে এবং পরিবেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। ধর্মীয়ভাবে, এটি কলিযুগের শ্রেষ্ঠ সাধনাও বটে।

এবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করি — গরমকালে হরিনাম বা সমবেত সংগীতচর্চার উপকারিতা কীভাবে কাজ করে:

১. মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব (Psychological effects)

সংগীত (বিশেষত সমবেত গান বা সংকীর্তন) ডোপামিন, সেরোটোনিন ও এন্ডরফিন (সুখের হরমোন) নিঃসরণ বাড়ায়।

গ্রীষ্মে প্রচণ্ড তাপের কারণে মস্তিষ্কে স্ট্রেস হরমোন (কর্টিসল) বেড়ে যায়, ক্লান্তি ও অস্থিরতা বাড়ে। সমবেত হরিনাম করার সময় কর্টিসল কমে যায়, ফলে মন শান্ত ও প্রশান্ত হয়।

নিয়মিত জপ বা গান করলে মনোযোগ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং উদ্বেগ কমে।

 

২. শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রভাব (Respiratory and Nervous system)

হরিনাম করার সময় দীর্ঘশ্বাস এবং ছন্দময় উচ্চারণের কারণে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে।

ধীর লয়ে, সংগীতময় উচ্চারণে প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম (শরীরের বিশ্রাম ও হিলিং সিস্টেম) সক্রিয় হয়, ফলে রক্তচাপ কমে এবং হৃদস্পন্দন নিয়মিত হয়।

গরমের সময় এই ধরণের শ্বাসপ্রশ্বাস পদ্ধতি শরীরকে দ্রুত ঠান্ডা করতে সাহায্য করে।

 

৩. শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ (Thermal Regulation)

হরিনাম বা সংকীর্তনের সময় মৃদু শারীরিক চলাচল (পদক্ষেপ নেওয়া, মাথা দোলানো ইত্যাদি) হয়।

এভাবে ঘর্মনিঃসরণ (Sweating) নিয়ন্ত্রিত হয়, যা দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখে।

অতিরিক্ত গরমে দীর্ঘ সময় নীরব বা স্থির থাকলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে; হালকা সক্রিয়তা এই ঝুঁকি কমায়।

 

৪. সমষ্টিগত ক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা (Collective Behavior Benefits)

যখন মানুষ দলবদ্ধভাবে হরিনাম করে, তখন Social Bonding Hormone (Oxytocin) নিঃসৃত হয়।
এটি:

মানুষকে একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল করে,

একাকীত্ব এবং বিষণ্ণতা দূর করে।

গরমকালে মানসিক দুশ্চিন্তা এবং বিরক্তি বেশি হয়; এই সমবেত গানের মাধ্যমে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

 

৫. স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের উন্নতি (Cognitive Enhancement)

বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে: নিয়মিত মন্ত্রোচ্চারণ বা সঙ্গীতচর্চা করলে হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতির কেন্দ্রীয় অংশ) সক্রিয় হয়।

ফলে গ্রীষ্মকালের ক্লান্তি বা ‘ব্রেন ফগ’ দূর হয় এবং মানসিক সতেজতা বজায় থাকে।

 

সংক্ষেপে বৈজ্ঞানিক ভাষায়:

হরিনাম সংকীর্তন গরমকালে স্ট্রেস কমিয়ে, শ্বাসপ্রশ্বাস উন্নত করে, দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।

তিলক ধারণের বিধি কি?

16f7dc67de6ac98e39c93fcd5be9c4e4

16f7dc67de6ac98e39c93fcd5be9c4e4

 

তিলক পড়া হিন্দুধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ আচার বা ধর্মীয় চিহ্ন। এটি সাধারণত কপালের মাঝখানে দেওয়া হয় এবং এটি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, শুদ্ধতা ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। নিচে তিলক পড়ার সম্পূর্ণ নিয়ম ব্যাখ্যা সহ দেওয়া হলো।

তিলক পড়ার অর্থ ও গুরুত্ব:

আধ্যাত্মিকতা: কপালের মাঝখানে ‘অজ্ঞান চক্র’ বা ‘আজ্ঞা চক্র’ রয়েছে, যেটি আত্মিক জ্ঞান ও ধ্যানের কেন্দ্রবিন্দু। সেখানে তিলক দিলে একাগ্রতা বাড়ে।

ধর্মীয় পরিচয়: বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন রকম তিলক পড়ে, যা তাদের ইষ্টদেবতা ও দর্শনের পরিচয় বহন করে।

রক্ষা কবচ: বিশ্বাস করা হয় যে তিলক নেতিবাচক শক্তি থেকে রক্ষা করে।

 

তিলক পড়ার নিয়ম:

১. সময় ও প্রস্তুতি:

স্নান করার পরে তিলক পড়া উচিত, কারণ এটি শুদ্ধতার প্রতীক।

পবিত্রতা বজায় রেখে, ধ্যান বা প্রার্থনার আগে তিলক পড়া উত্তম।

২. উপকরণ:

গোপীচন্দন (বিশেষত বিষ্ণু ভক্তরা)

ভস্ম (ভিভূতি) – শৈব সম্প্রদায়ের জন্য

কুমকুম – সাধারণত গৃহিণীরা বা শক্তি উপাসকরা ব্যবহার করেন

সন্দল (চন্দন) – শীতলতা ও পবিত্রতার প্রতীক

৩. তিলক পড়ার প্রক্রিয়া:

ডান হাতের তর্জনী বা অঙ্গুলি ব্যবহার করে তিলকের দ্রব্য নিয়ে তিলক দিন।

2. তিলকের আকৃতি ও স্থান:

বিশ্ণু ভক্ত: দুইটি উলম্ব রেখা, মাঝে তুলসী পাতা বা গোপীচন্দনের বিন্দু (উর্ধ্বপুন্ড্র)

শিব ভক্ত: তিনটি ভস্মের রেখা (ত্রিপুণ্ড্র)

শক্তি ভক্ত: লাল কুমকুম বা চন্দনের বিন্দু

 

3. তিলক দেওয়ার সময় মনে মনে ইষ্টদেবতার নাম জপ করুন বা মন্ত্র পাঠ করুন।

১. শ্রী বিষ্ণু বা নারায়ণ (উর্ধ্বপুণ্ড্র তিলক):

তিলক: দুইটি সাদা উলম্ব রেখা, মাঝে তুলসী পাতা বা গোপীচন্দনের বিন্দু।

মন্ত্র:

ऊर्ध्वपुण्ड्रं धराम्यद्य नारायणप्रीत्यर्थम्।
বাংলা উচ্চারণ: ঊর্ধ্বপুন্ড্রং ধরাম্যদ্য নারায়ণ প্রীত্যর্থম্।
অর্থ: আমি আজ নারায়ণের প্রীতির জন্য এই তিলক ধারণ করছি।

২. শ্রী কৃষ্ণ (গোপীচন্দনের তিলক):

মন্ত্র:

गोपिचन्दनं धारयामि श्रीकृष्णप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: গোপীচন্দনং ধারযামি শ্রীকৃষ্ণ প্রীত্যর্থম্।

অর্থ: আমি শ্রীকৃষ্ণের প্রীতির জন্য গোপীচন্দনের তিলক ধারন করছি।

৩. শ্রী রামচন্দ্র (রামভক্তদের তিলক):

মন্ত্র:

रामचन्द्राय नमः।
বাংলা: রামচন্দ্রায় নমঃ।

(তিলক দেবার সময় অন্তরে এই নামজপ করা হয়।)

৪. শিব (ত্রিপুণ্ড্র তিলক – তিনটি ভস্মের রেখা):

তিলক: তিনটি ভস্মের আড়াআড়ি দাগ

মন্ত্র:

विभूतिं धारयामि शिवप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: বিভূতিং ধারযামি শিব প্রীত্যর্থম্।

অথবা সহজে শুধু:

ॐ नमः शिवाय।
(ওঁ নমঃ শিবায়)

৫. দেবী দূর্গা / পার্বতী (লাল কুমকুম তিলক):

মন্ত্র:

कुंकुमं धारयामि मातृदेवीप्रीत्यर्थम्।
বাংলা: কুঙ্কুমং ধারযামি মাতৃদেবী প্রীত্যর্থম্।

অথবা:

ॐ दुर्गायै नमः।
(ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ)

৬. হনুমানজী (লাল বা কমলা চন্দনের তিলক):

মন্ত্র:

ॐ श्री हनुमते नमः।
(ওঁ শ্রী হনুমতে নমঃ)

৭. সূর্যদেব (রক্ত চন্দন তিলক):

মন্ত্র:

ॐ सूर्याय नमः।
(ওঁ সূর্যায় নমঃ)

৮. গণেশ (লাল কুমকুম বা সিন্দুর):

মন্ত্র:

ॐ गं गणपतये नमः।
(ওঁ গম্ গণপতয়ে নমঃ)

৯. কালী মা (লাল কুমকুম / সিঁদুর / রক্তচন্দন)

মন্ত্র :

ॐ कालीकायै नमः।
বাংলা উচ্চারণ: ওঁ কালীকায়ৈ নমঃ।
অর্থ: কালী মাকে আমি প্রণাম জানাই।

তিলক পড়া শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি এক গভীর আধ্যাত্মিক অনুশীলন। প্রতিদিন স্নান করার পর, শুদ্ধ চিত্তে তিলক ধারণ করলে তা মনকে শান্ত করে, আত্মশক্তি বাড়ায় এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিকে দৃঢ় করে।

তিলকের রূপ, উপকরণ ও মন্ত্র উপাস্য দেবতার উপর নির্ভরশীল—শিব, বিষ্ণু, কালী, দুর্গা, রাম, কৃষ্ণ—যার উপাসনা করা হয়, তার অনুযায়ী তিলক ধারন করতে হয়।

তিলক পড়ার সময় দেবতার নাম বা মন্ত্র জপ করলে তা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং অন্তরের সাধনাও হয়ে ওঠে।

সারকথা:
তিলক হলো ভক্তির চিহ্ন, আত্মপরিচয়ের প্রতীক, এবং একাগ্রতার কেন্দ্র। সঠিক নিয়ম, শুদ্ধ উপকরণ ও আন্তরিকতার সঙ্গে তিলক পড়লে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের আধ্যাত্মিক শক্তিকে জাগ্রত করে।

“This content is subject to copyright.” April 21,  2025