<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Culture and Tradition. - Sri Yoga Center Ashram's Blog - Page 31

ভূতচতুর্দশী ও ১৪ শাক

ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাকের তালিকা ও তাৎপর্য: এই দিনে কোন রীতি পালন করলে ঘরে আসে সৌভাগ্য
দুর্গাপুজোর পরই লক্ষ্মীপুজো। আর সেই রেশ কাটতে না কাটতেই আলোর রোশনাইয়ের উৎসব দীপাবলী (Dewali)। বাংলায় কালীপুজোর রাতে অন্ধকারের গ্রাস সরিয়ে ঘরে ঘরে দীপ জ্বেলে দীপাবলী পালনের রীতি প্রচলিত। আর সেই রাতের আগের দিন পালিত হয় ভূত চতুর্দশী। একনজরে দেখে নেওয়া যাক, এই ভূত চতুর্দশীর তাৎপর্য।

ভূত চতুর্দশী ও ১৪ শাক

মূলত, ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাক ও ১৪ টি প্রদীপ প্রতিটি বাঙালি ঘরেই জ্বালানো হয়। আর এর নেপথ্যে রয়েছে বহু আচার বিচার। তবে তার আগে দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ১৪ টি শাক ভূত চতুর্দশীতে খাওয়া হয়। যে ১৪ টি শাক খেয়ে ভূত চতুর্দশী পালিত হয়, সেই ১৪ শাকের নাম হল, ওল , কেঁউ, বেতো , সর্ষে, কালকাসুন্দে, জয়ন্তী , নিম,হেলঞ্চা, শাঞ্চে, পলতা, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা, শুলফা, শুষণী শাক। এই শাক খেয়ে সন্ধ্যেবেলায় ১৪ টি প্রদীপ দিয়ে অন্ধকার বিতাড়নের পূর্বরীতি প্রচলিত রয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে।

১৪ শাকের তাৎপর্য

মনে করা হয় , ভূত চতুর্দশীর দিনটিকে ১৪ পুরুষের জন্য উৎসর্গ করা হয়। পূর্বপুরুষরা এমন দিনে মর্ত্যে আসেন বলে বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। প্রচলিত ধ্যানধারণা বলছে, এই ১৪ পুরুষ , জল, মাটি, বাতাস, অগ্নির সঙ্গে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে রয়েছেন। আর তার জন্যই মাটির কোলে থাকা ১৪ টি বিশেষ শাক খেয়ে এদিন দিনটি ১৪ পুরুষের জন্য উৎসর্গ করা হয়।

১৪ প্রদীপ কেন জ্বালানো হয়?

মূলত, পূর্বপুরুষ বা পূর্বের ১৪ পুরুষের জন্য ভূত চতুর্দশীর দিনটিকে উৎসর্গ করা হয়। আর তাঁদের উদ্দেশেই ১৪টি প্রদীপ সারা ঘরে দেওয়া হয়। অনেকেই এই দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীর আবাহন করে দুরাত্মাকে ঘর ছাড়া করার পুজো করেন।

১৪ শাক ধোয়ার জল কী করতে হয়?

কথিত রয়েছে, যে জল দিয়ে ১৪ শাক ধোয়া হয়, সেই জলকে ঘরের বিভিন্ন দিকে ছিটিয়ে দিলে দুরাত্মা দূর হয়। এর ফলে বহু বাধা বিঘ্ন কেটে ঘরে শান্তি বিরাজ করে। আসে সৌভাগ্য, সমৃদ্ধি।

শ্রীমদ্ স্বামী অখণ্ডানন্দজী মহারাজ

কিঙ্কর রামেশানন্দজী( রামেশ্বর ডাগা) লিখছেন :
বৃন্দাবনে জে কে পরিবারের মন্দিরে দীর্ঘদিনের অতিথি ছিলেন ভারত বন্দিত মহাত্মা—-শ্রীমদ্ স্বামী অখণ্ডানন্দজী মহারাজ | তিনি ছিলেন ভগবদ্দ্রষ্টা সর্ব্বশাস্ত্রজ্ঞ মহাপুরুষ | সেবার তাঁর জন্মোৎসব এ তাঁর বিরাট আশ্রমে ভারতপূজ্য শঙ্করাচার্য্যজী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলেন অসংখ্য বিদ্বান ও সন্তমন্ডলী | জে কে পরিবারের সঙ্গে পূজ্য অখণ্ডানন্দজীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল | জে কে পরিবারের গৃহবধূ এ দাসের কনিষ্ঠা কন্যা সুনন্দা প্রসঙ্গক্রমে অখণ্ডানন্দজীর কাছে জানায় যে সে শ্রীশ্রীবাবার কৃপাশ্রয় লাভে ধন্য | স্বামীজী সঙ্গে সঙ্গেই গভীর আকুতি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন—-“তাহলে তোমার মাথায় যখন তিনি হাত দিয়েছিলেন, তখন তোমার নিশ্চয় কিছু অনুভূতি হয়েছিল?” শ্রীশ্রীবাবার উপর তাঁর কি অবিচলিত বিশ্বাস! একবার বোম্বেতে ভুলাভাই অডিটোরিয়াম এ সহস্র সহস্র শ্রোতৃমণ্ডলীর কাছে প্রবচন করছিলেন অখণ্ডানন্দজী | প্রভুকে কোন ভক্ত সেখানে নিয়ে যান | স্বামীজী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে শ্রীশ্রীবাবার একটি হাত নিজের মস্তকে তুলে নিয়ে সমবেত ভক্তমণ্ডলীর উদ্দেশ্যে বললেন,—“ইনকা হাত জিসকে মাথে পর জায়েগা, উসিকা কল্যাণ |”
*** মহাত্মা প্রভুদত্ত ব্রহ্মচারীজী একবার “জাহ্নবীকুঞ্জে ” শ্রীশ্রীবাবার দর্শনে এলেন | বাবার নিয়মানুসারে তাঁকে চৌকিতে বসানো হল | বাবা বললেন,—“ব্রহ্
মচারীজীর চরণ ধুইয়ে দে |” শ্রীমৎ প্রভুদত্তজী প্রবল আপত্তি জানালেন—-“শ্র
ীভগবানকা সামনে চরণ নেহি ধোলায়েগা |” শ্রীশ্রীবাবা আবার একই আদেশ করলেন | ওঁর কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা | শ্রীশ্রীবাবার সম্মুখে চরণ প্রক্ষালন করতে দিলেন না |
****বিশ্ববিশ্রুত মহাত্মা “Divine Life Society ” র কর্ণধার শ্রীমদ্ চিদানন্দজী মহারাজের ও শ্রীশ্রীবাবার প্রতি ভক্তির তুলনা ছিলনা | শ্রীশ্রীবাবাকে তিনি গুরুবৎ শ্রদ্ধা করতেন, দণ্ডবৎ প্রণাম করতেন, আর বলতেন, ” আপনি ও আমার দীক্ষাদাতা আচার্য্য আমার কাছে অভিন্ন |”হৃষিকেশ আশ্রমে বাসন্তী পূজা বা দুর্গাপূজার সময় শ্রীমদ্ চিদানন্দজী হৃষিকেশে অবস্থান কালে সশ্রদ্ধভাবে উপস্থিত থাকতেন | একবার ওঁকে নিমন্ত্রণ করতে গেছি, তারকদাও( তৎকালীন সংঘ সর্ব্বাধীশ) সঙ্গে আছেন | গিয়ে দেখি শতাধিক বিদেশী দীক্ষার্থী এসেছেন | আমাদের আবেদন শুনে স্বামীজী সশ্রদ্ধভাবে বললেন —” দেখুন যাবো | তবে এতজন রয়েছেন এখানে——any way I shall pinch out some time “. শ্রীমদ্ চিদানন্দজী এসেছিলেন শুধু নয়, শ্রীশ্রীবাবার ধ্যানকক্ষের সম্মুখে ধ্যানস্থ হয়ে তিনি দন্ডায়মান থাকতেন ও শ্রীশ্রীবাবার উদ্দেশ্যে পরে শ্রীশ্রীবাবার উদ্দেশ্যে সাষ্টাঙ্গে প্রণতি জানাতেন দীর্ঘক্ষণ | এটি তাঁর দীর্ঘ অনুসৃত অভ্যাস |শ্রীশ্রীবাবাকে তিনি শ্রীভগবানের অবতার বলেই মান্য করতেন | এক প্রবন্ধে লিখেছেন ” Baba’s advent and presence in this age is of utmost significance to India as well as the whole world…….After several centuries Babajee has now come to revive and give fillip to this all important saving and liberating work commenced by Mahaprabhu….. Boloved Babajee is verily “Namabatara”.

সূত্র —জয় রাজরাজেশ্বর !!
by– Aniruddha Chakraborty

চরক এবং প্রাচীন চিকিৎসাশাস্ত্র

অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী

চরক প্রাচীন চিকিৎসার কৃৎকৌশল ও এর বিজ্ঞান সম্পর্কে অন্যতম অবদান রাখেন যা একটি চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে একটি জীবন প্রণালী হিসেবে তৎকালীন ভারতে বিকশিত হয়েছিল। তিনি প্রাচীন ভারতের অন্যতম চিকিৎসাগ্রন্থ ‘চরক সংহিতা’র রচয়িতা হিসেবে খ্যাত হয়ে আছেন। চরক ও শুশ্রুত সংহিতা এ’দুটোর মধ্যে প্রথমোক্তটি অপেক্ষাকৃত প্রাক্তন এবং এটি মূলতঃ মেডিসিন নিয়ে কাজ করেছে, তবে এতে সার্জারীরও একটি সংক্ষিপ্ত অধ্যায় রয়েছে।
চরককে কাশ্মীরের অধিবাসী মনে করা হয়। চরকের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মতেন স্বাস্থ্য এবং রোগ বহু ক্ষেত্রে পূর্ব নির্ধারিত নয়, বরং মানুষের কর্মকান্ড এবং জীবনযাত্রার উপর এটা বহুলাংশে নির্ভরশীল। তাঁকে “মেডিসিন চিকিৎসা”র জনক হিসেবে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে সুশ্রুত ছিলেন মূলতঃ শল্যবিদ। স্বভাবতঃই কয়েক হাজার বছর আগে উভয়ের রচিত গ্রন্থের ধরণও ভিন্ন। চরকের মেডিসিন বিষয়ক ‘চরক সংহিতা’ আর সুশ্রুতের শল্যবিদ্যা বিষয়ক ‘সুশ্রুত সংহিতা’।
চরক সংহিতায় শরীরের নানা অভ্যন্তরীণ ও স্বাভাবিক কর্মকান্ড (ফিজিওলজি), রোগের উৎপত্তি ও কারণ(ইটিয়োলজি), ভ্রুণ তত্ত্ব (এম্ব্রায়োলজি), হজমপ্রক্রিয়া (ডাইজেস্সান) বিপাক প্রক্রিয়া (মেটাবোলিজম), রোগ প্রতিরোধের বিষয় (ইম্যুনিটি) সহ শ্রেনীবদ্ধ ভাবে শরীর বিষয়ক প্রায় সকল মূল বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে।
জেনেটিক্স্ এর একবারে প্রাথমিক পর্যায়ের ধারণার সন্ধানও এ সংহিতায় বর্তমান। চরক সংহিতায় মোট আটটি অংশ আছে। সুত্র স্থান (স্থান মানে গ্রন্থ),নিদান স্থান, বিমান স্থান, শরীর স্থান, ইন্দ্রিয় স্থান, চিকিৎসা স্থান, কল্প স্থান, ও সিদ্ধি স্থান। আটটি অংশ সম্বলিত এ গ্রন্থে ১২০টি অধ্যায় আছে, ১২০০০ শ্লোক ও ২০০০ হাজার ঔষধের বর্ণনা আছে। শরীরের প্রায় সকল অংশের অসুস্থতা নিরাময়ের জন্য প্রাকৃতিক ঔষধ নির্ভর চিকিৎসার বর্ণনা আছে। ‘সূত্র স্থান’ হচ্ছে চিকিৎসার সাধারণ নিয়ম সংক্রান্ত গ্রন্থাংশ। ত্রিশটি অধ্যায় সম্বলিত এ অংশটি সুস্থ জীবনযাপন, ঔষধি সংগ্রহ এবং এগুলোর ব্যবহার, উপসম, খাদ্য এবং চিকিৎসকের কর্তব্য বিষয়ে লিখিত। ‘নিদান স্থান’ তথা প্যাথলজির এর আটটি অধ্যায়Ñএ আটটি মুখ্য রোগের প্যাথলজি বর্ণনা করা হয়েছে। বিমান স্থান এর আটটি অধ্যায়ে রয়েছে প্যাথলজি, রোগ নির্ণয়ের চিকিৎসা পাঠক্রম বিষয়ের নানা যন্ত্রপাতি ও আচরণ বিধি।
শরীর গ্রন্থÑএর আটটি অধ্যায়ে শরীরের এনাটমি এবং এম্ব্রায়োলজি বর্ণিত হয়েছে। ইন্দ্রিয় স্থান সংক্রান্তÍ – বারোটি অধ্যায়ে বি¯তৃত রোগ নির্র্ণয়, তার অনুভূতি বা ইন্দ্রিয়Ñনির্ভর পরিণাম এতে বর্ণিত। চিকিৎসা স্থান এর এতে ত্রিশটি অধ্যায় রয়েছে যা বিশেষ ধরনের কিছু চিকিৎসার কথা বলে। ফার্মাকোলজি ও টক্সিকোলজি বিষয়ক ‘কল্প স্থান’ এর বারোটি অধ্যায়। সিদ্ধি স্থান চিকিৎসায় সাফল্য বিষয়ক Ñ বারো অধ্যায় সম্বলিত এই অংশে ‘পঞ্চকর্মের’ সাধারণ সূত্রগুলোও বর্ণনা করে।এই পঞ্চকর্ম হচ্ছেÑ বমন, বিরেচন (জোলাপের মাধ্যমে মলত্যাগ করানো), বস্তি তথা বস্তী (প্রস্রাব বা পায়খানা করানো) নস্য, রক্তমোক্ষন।
চরক সংহিতার চিকিৎসা স্থানের সতেরোটি অধ্যায়, পুরো ‘কল্পস্থান’ এবং ‘সিদ্ধি স্থান’ পরবর্তীতে দ্রুধপদ কর্তৃক অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। এ সংহিতার ‘সূত্রস্থান’ মূলতঃ আয়ুর্বেদের মৌলিক ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করে। চরক সংহিতা যে সমস্ত অনবদ্য বৈজ্ঞানিক অবদান রেখেছে তার মধ্যে রয়েছেÑ রোগের কারণ এবং এর চিকিৎসা নির্ধারণে একটি যৌক্তিক উপায় নির্মাণ। রোগীকে পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে বাস্তবানুগ প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্তকরণ ও অনুসরণ। সংহিতা এ বিষয়ে গুরুত্ব নির্দেশ করে জোর দেয় যে, রোগীর প্রত্যক্ষ নিরীক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যদিও কখনো কখনো এর সঙ্গে সংমিশ্রিত হয় সত্ত্বার প্রকৃতি ও জ্ঞানÑসংক্রান্ত দর্শন শাস্ত্র তথা অধিবিদ্যা। প্রাচীন ভারতে সফল চিকিৎসাÑ চিকিৎসক, ঔষধ ও পথ্য, নার্স এবং রোগীÑ সবার উপর যুগপৎ নির্ভরশীল বলে উল্লেখিত; নিরাময়ের ক্ষেত্রে সবার দায়িত্ব রয়েছে। সংহিতা এ বিষয়ে জোর দেয় যে, রোগের সকল প্রকার প্রমাণাদির মধ্যে যা চোখে দেয়া যায় সেই প্রমাণ বা লক্ষণই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চিকিৎসকের শিক্ষাগত যোগ্যতাসমূহের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের তত্ত্বগত জ্ঞান সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ধারণা অর্জন ও অনুধাবন ক্ষমতা, বিবিধ বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন, দক্ষতা, পরিচ্ছন্ন থাকা সহ বিবিধ গুণাবলী থাকা প্রয়োজন। ঔষধের উত্তম মানÑ সম্পন্নতা ও কার্যকারিতা,একই ঔষধের বিবিধ ব্যবহার ও প্রয়োগ সম্পন্নতা, পর্যাপ্ত সরবরাহ ও প্রাপনীয়তা বিদ্যমান থাকা সমীচীন। রোগীর কি কি গুণাবলী থাকা উচিত চরক তাও বর্ণনা করেছেন: ভালো স্মৃতিশক্তি, উপসর্গসমূহ বর্ণনার সাহস ও ক্ষমতা থাকা, চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলা।
চরক মানব শরীরের এ্যানাটমি অধ্যয়ন করেন। তাঁর হিসেবে দাঁত সহ মোট হাড়ের সংখ্যা হচ্ছে ৩৬০টি। তার মতে হৃদপিন্ড শরীরের কেন্দ্র যা সারা শরীরের সঙ্গে অন্ততঃ তেরোটি চ্যানেলের মাধ্যমে সংযুক্ত। তাঁর মতে এছাড়া ছোট বড়ো আরো অসংখ্য বিভিন্ন আকারের পরিবহনকারী পাইপ রয়েছে যার মাধমে শরীরে পুষ্টিকর বস্তুসমূহ সরবরাহ করা হয়, অন্য দিকে শরীরে থেকে দূষিত পদার্থ সরিয়ে নেয়া হয়। তাঁর মতে যে কোন মূল ধমনী বা মূল চ্যানেল বা মাধ্যমÑএ কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তা থেকে রোগের উৎপত্তি হয় এবং বিকলাঙ্গতা সৃষ্টি হয়।
চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে চরক তাঁর সংহিতায় বলেনÑ ‘জ্ঞান ও অনুধাবন ব্যতিরেকে তথা এই আলোকবর্তিকা বা লন্ঠন ব্যতিরেকে মানব শরীরে প্রবেশ করলে মানুষের চিকিৎসা অসম্ভব।’ এছাড়া তিনি রোগ প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রাথমিকভাবে ‘রোগ প্রতিরোধ তার চিকিৎসার চাইতে উত্তম’Ñ এই শাশ্বত বাক্যটির সঙ্গে চরক তাঁর চিকিৎসক জীবনের প্রথম থেকেই উচ্চারণ করেছিলেন। বলতে গেলে একই ধারণা পরবর্তীতে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের ভিত্তি তৈরী করেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও বলেÑ ‘প্রিভেনশন্ আজ বেটার দ্যান কিওর’, আর বলে শরীরের হোমিওস্টেটিক ইমব্যালেন্স্ অর্থাৎ শরীরের নানা অংশের কর্মকান্ডের সুসামঞ্জস্যের অভাবই(চরকের ভাষায় ‘দোষ’ এর অসামঞ্জস্যতাই) অধিকাংশ রোগের জন্মদাতা। একথা সর্বজনবিদিত এবং তা বারম্বার উল্লেখিতও হয়েছে যেÑ রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগের মূল কারণ নিরসন ভারতীয় প্রাচীন চিকিৎসার ব্যবস্থায় এর ঐতিহ্যের মূল সুর হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে। তাছাড়া, প্রকৃতির ঋতুসমূহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শরীরকে সঙ্গতঃ করতে হবেÑ এ কথাও তাঁর উল্লেখিত। চরক বলছেন একজন চিকিৎসক প্রথমে সবকিছু পড়ে দেখা অনুধাবন করা এবং বছরের বিভিন্ন ঋতুকালসমূহও অনুধাবন করা উচিত এবং তারপরেই ঔষধের ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা উচিত।
চরক তাঁর সংহিতায় উল্লেখ করেন যে চিকিৎসকরা অথর্ববেদ সংলগ্ন থাকা বিধেয়। হিন্দুদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ অথর্ববেদ লৌহ যুগের(খ্রী.পূ ১২০০Ñ খ্রী.পূ.২০০) প্রথম দিকে রচিত হয়েছিল বলে ধরা হয়। এটা ভারতের চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রথম গ্রন্থ। অথর্ববেদ এ রয়েছে বিবিধ রোগ নিরাময়ের জন্য নানা উদ্ভিদ নির্ভর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র। তৎকালের নিকটÑপ্রাচ্যে প্রচলিত নিয়মে মন্ত্রাদির সাহায্যে ভুতপ্রেত দূরীভূত করা ও জাদু বিদ্যা এর একটি অংশ। অথর্ব বেদের সংহিতা অংশে রোগ নিরাময়ের জন্য ১১৪টি স্ত্রোত্রগীত বা জাদুবিদ্যার মন্ত্রোচ্চারণমূলক শ্লোক আছে। অসুস্থতায় লতা পাতা বৃক্ষমূল বাকল থেকে তৈরী এই ভেষজ ঔষধির ব্যবহার নিয়ে পরে সৃষ্টি হয় আয়ুর্বেদের ব্যাপক অংশ। অর্থাৎ, বেদ পরবর্তী ভারতীয় সমাজে প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থাকে বলা বলা হয় আয়ুর্বেদ (আযুর্বেদ মানে দীর্ঘ জীবনের জন্য পূর্ণ জ্ঞান)। এর দুটি মুখ্য গ্রন্থ হচ্ছে শুশ্রুত ও চরক সংহিতা, শুশ্রুত ও চরক উভয়ই অনেকটা সমসাময়িক, খ্রীপূ ৬ষ্ঠ শতকে এদের বিচরণ।
যদিও ভারতে চিকিৎসার প্রাথমিক ভিত্তি প্রচলিত ভেষজ চিকিৎসার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠে তবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়Ñ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যাপক বাস্তব অভিজ্ঞতা লব্ধ ধ্যান ধারণা, ব্যাপক তাত্ত্বিক ধ্যান ধারণার সংযুক্তি, রোগের পরবর্তী শ্রেণী বিন্যাস, খ্রীপূ ৪০০ অব্দ থেকে নতুন নতুন ঔষধি ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় অবতার বুদ্ধদেব সহ বিভিন্ন চিন্তাবিদদের নানা সংযোজনা। আযুর্বেদের কেন্দ্রীয় বিষয়গুলো তৈরী হয়ে উঠার ক্ষেত্রে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। শরীর বিষয়ে একটা ব্যালেন্স একটি ভারসাম্যতা মেনে চলার উপর গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। প্রাকৃতিক আকাংখাগুলোকে দমন করাকে অস্বাস্থ্যকর এবং তা দেহতন্ত্রকে অসুস্থতার দিকে ধাবিত করে বলে রায় দেয়া হয়েছে, তবে সাবধান বাণী উচ্চারিত হয়েছে প্রাকৃতিক চাহিদাসমূহের ক্ষেত্রে যেমন খাদ্য গ্রহণ, ঘুম, যৌন জীবন নিয়ে সীমার মধ্যে থাকার জন্যে।
এই মন্তব্যসমূহ আজকের দিনে সাদামাটা আটপৌরে অনুন্নত প্রাথমিক মনে হতে পারে, তবে এই অভিনব মন্তব্য চরক কর্তৃক আজ থেকে অন্যূন দুই সহস্র বৎসর আগে উচ্চারিত হয়েছিল বিধায় যুগান্তকারী এবং মৌলিক। চরক সংহিতা নামক আকর গ্রন্থে এ ধরণের বহু মন্তব্য রয়েছে যা আজকের দিনেও শ্রদ্ধার সাথে মান্য করা হয়। এর কোন কোনটি ফিজিওলজি, ইটিওলজি এবং এম্ব্রায়োলজি বিষয়ক। চরককেÑ হজম, বিপাক, এবং ইম্যুনিটি বিষয়ে লেখালেখির অন্যতম প্রাচীন চিকিৎসক বলে ধরা হয়।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র চরক সংহিতা থেকে প্রভূতভাবে নানা মতধারা সংগ্রহ করতঃ আত্মস্থ করে। চরক জেনেটিক নিয়েও লিখেন এবং সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারক হিসেবে কোন্ কোন্ বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তার আলোচনা করেন। জন্মান্ধতাকে পিতা মাতার ক্রটির চাইতে ডিম্বাণু বা শুক্রবীজের ভূমিকা তথা ভ্রুণগত বিষয়ের উপর জোর দেন বলে ধারণা করা হয়। এছাড়া চরক সংহিতায় ফিজিওলজি, ইটিওলজি এবং এম্ব্রায়োলজি সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হয়েছে।