<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Culture and Tradition. - Sri Yoga Center Ashram's Blog - Page 30

Swami SaradaNanda of Sri Ramkrishna Sri Sarada

Today is the Birthday of SARAT MAHARAJ of RAMKRISHNA Order. I have collected some nice posts about Him from WhatsApp. I am presenting them. Thanks to all writers and those who posted these in Whatsapp today.

1.

১৮৬৫ খ্রীস্টাব্দের ২৩ ডিসেম্বর শনিবার ( ৯পৌষ,১২৭২ সাল, শুক্লা ষষ্ঠীতিথি) স্বামী সারদানন্দ জন্মগ্রহণ করেন ৷
সারদানন্দের পূর্বাশ্রমের নাম শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী ৷
তেরো বৎসর বয়সে উপনয়নের পর তিনি অতি আগ্রহসহকারে নিয়মিত পূজাপাঠ ও জপধ্যানে মগ্ন হলেন ৷
তিনি এসময় ব্রহ্মসমাজে যাতায়াত করতেন ৷
১৮৮২ খ্রীস্টাব্দে তিনি হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন ৷
এই সময় তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে দর্শন করেন এবং প্রায় তিন বছর তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন ৷ ঠাকুরের দিব্যজীবনের বহু ঘটনার তিনি সাক্ষী ৷
শ্রীরামকৃষ্ণদেবের অন্তর্ধানের পর শরৎচন্দ্র বরানগর মঠে স্বাধ্যায় ও সাধনায় মগ্ন হন ৷
এই সময় সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁর নাম হয় স্বামী সারদানন্দ ৷
তন্ত্রের সাধন-রহস্য জানবার জন্য তিনি পিতৃব্য ঈশ্বরচন্দ্রের কাছে ১৯০০ সালের ২৫ নভেম্বর তন্ত্রসাধনায় অভিষিক্ত হন ৷ তিনি শ্রীমা ও স্বামী ব্রহ্মানন্দের অনুমতি নেন ৷
ঠাকুর ও শ্রীমায়ের কৃপায় তিনি সাধনপথে দ্রুত অগ্রসর হন ৷ নারীমাত্রে মাতৃজ্ঞান তন্ত্রসাধনার প্রথম সোপান ৷
দেবীর প্রত্যক্ষদর্শন তার চরম সিদ্ধি ৷

১৮৯০ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত সারদানন্দ ভারতের বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে ও হিমালয়ে তপস্যা করেন ৷
তারপর ১৮৯৬ সালে স্বামীজীর আহ্বানে তিনি পাশ্চাত্যে প্রচারের জন্য যান ৷
পাশ্চাত্যে ২বছর থেকে সারদানন্দ আবার স্বামীজীর নির্দেশে ভারতে ফিরে আসেন ৷
১৮৯৭ সালে স্বামীজী রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরে ১৯০১ সালে সারদানন্দকে সঙ্ঘের সেক্রেটারি করেন ৷
১৮৯৮ সালে স্বামীজী উদ্বোধনে পত্রিকা শুরু করেন এবং স্বামী ত্রিগুণাতীতানন্দ সম্পাদক হন ৷
১৯০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ত্রিগুণাতীত বেদান্ত প্রচারের জন্য আমেরিকায় যান এবং সারদানন্দের ওপর পত্রিকার ভার পড়ে ৷
স্বামীজীর বই বিক্রি করে তাঁর কাছে জমা২৭০০ টাকা দিয়ে গৃহনির্মাণের কাজ শুরু করেন ৷
১৯০৯ সালে তিনি উদ্বোধন পত্রিকা ও শ্রীশ্রীমার বাসস্থানের জন্য বাড়ি তৈরির কজ সম্পূর্ণ হয় ৷
এর জন্য তিনি ১১০০০ অর্থ ধার করেন ৷
ধার পরিশোধের জন্য তিনি ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ’ লিখতে শুরু করেন ৷
প্রত্যহ অনেকক্ষণ ধ্যানজপ করবার পর তিনি লিখতে বসতেন ৷
তিনি যোগি-পুরুষ ছিলেন ৷ না হলে উদ্বোধনের ঐ হৈ চৈ পরিবেশের মধ্যে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ঐরূপ সুগভীর মহাগ্রন্থ রচনা সম্ভবপর ছিল না ৷
শ্রীমা বলতেনঃ ‘শরৎ হচ্ছে আমার ভারী ৷’
বলতেন ঃ ‘আমার ভার নেওয়া কি সহজ ? শরৎ ছাড়া কেউ ভার নিতে পারে এমন তো দেখিনি ৷ সে আমার বাসুকি, সহস্রফণা ধরে কত কাজ করেছে, যেখানে জল পড়ে সেখানেই ছাতা ধরে ৷’
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণ একদিন পায়চারি করতে করতে সহসা যুবক শরতের ক্রোড়ে উপবিষ্ট হন ৷
কয়েক মুহূর্ত ঐভাবে থাকার পর তিনি উঠে যান ৷
উপস্থিত ভক্তদের ঐ সম্পর্কে কৌতূহল দেখে তিনি বলেছিলেন ঃ “দেখলাম, ও কতটা ভার সইতে পারবে ৷”
স্বামীজী রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তাঁর উপর এবং তিনি সুদীর্ঘ ত্রিশ বৎসর কাল সঙ্ঘরূপী শ্রীরামকৃষ্ণ-শরীরের গুরুভার অসাধারণ নিষ্ঠার সাথে বহন করেছিলেন ৷
শ্রীমা সারদানন্দকে নিজের ‘ভারী’ বলে চিহ্নিত করে আনন্দ পেতেন কিন্তু তিনি মায়ের ‘দ্বারী’ বলে পরিচয় দিতে গৌরববোধ করতেন ৷
জয়রামবাটী থেকে শ্রীমাকে নিয়ে সেবক সারদানন্দ উদ্বোধন কার্যালয়ের নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেন ১৯০৯ খ্রীস্টাব্দের ২৩ মে ৷
বস্তুত, ঐদিন থেকে উদ্বোধন কার্যালয়ের ভবনটি রামকৃষ্ণ-ভক্ত-মণ্ডলে ‘মায়ের বাড়ি’ বলে পরিচিত হয় ৷
অদ্যাবধি এই ‘মায়ের বাড়ি’ একাধারে শক্তিপীঠরূপে পরমতীর্থ এবং স্বামী সারদানন্দের অপূর্ব মাতৃসাধনার মহতী স্মৃতিসৌধ ৷.

2.

🙏আজ শ্রীমৎ স্বামী সারদানন্দ জী মহারাজের পুণ্য আবির্ভাব তিথি 🙏

দীর্ঘ কয়েক বছর ঠাকুর ও স্বামীজীর জন্মতিথিতে মঠে গান গাওয়া ছিল স্বামী সারদানন্দজী মহারাজের একটি অবশ্যকর্তব্য। ওই দিনে দিনে তিনি সাধারণত নির্দিষ্ট কয়েকটি গান গাইতেন, যেমন ঠাকুরের জন্মতিথিতে তিনি অবশ্যই গাইতেন – গিরিশচন্দ্র রচিত ‘দুঃখিনী ব্রাহ্মণী কোলে কে শুয়েছ আলো করে’। তেমনি স্বামীজীর তিথিতে ‘একরূপ অরূপ- নাম -বরণ’। 1912 খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বামীজীর ঘরের বারান্দায় বসে প্রথম গেয়েছিলেন তানপুরা সহযোগে-‘ এক রূপ অরূপ নাম বরণ’। তারপর গেয়েছিলেন,’ মুঝে বারি বনোয়ারী’, ‘তাথৈয়া তাথৈয়া নাচে ভোলা’ এবং ‘নাচে বাহু তুলে’। স্বামী সারদানন্দের সুর শিল্পের সাধনা শুধু গাওয়াতে সীমিত ছিল না, তিনি একাধারে গায়ক-বাদক, গীত রচয়িতা এবং গীতশিক্ষক। অপরে গান গাইলে তিনি তবলা, পাখোয়াজ বাজাতেন।তাঁর রচিত সংগীতের মধ্যে বিশেষ সমাদৃত স্বামীজীর মহাসমাধির পর একটি গান — ‘স্তিমিত চিত সিন্ধু ভেদি উঠিল কি জ্যোতির্ঘন ‘-গানটিতে তিনি নিজেই সুর দিয়েছিলেন। সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভগবত প্রেমিক শিল্পী ছিলেন সত্য সুন্দরের সন্ধানী, তাঁর সাহিত্য, সঙ্গীত সবকিছুই ছিল তাঁর অধ্যাত্ম জীবনের অলংকার।

সারদানন্দ চরিত
স্বামী প্রভানন্দ
পৃষ্ঠা 306

3.

পূজনীয় শরৎ মহারাজ সাধারণত স্বল্পভাষী ছিলেন। ধর্ম বিষয়ে অতি জটিল সমস্যাও তিনি দুই এক কথায় অতি সরলভাবে বুঝাইয়া দিতেন, বোধ হয় তিনি নিজেও শ্রীশ্রীঠাকুরের নিকট ঐরূপ শিক্ষা পাইয়াছিলেন। তিনি একদিন আমাদিগকে বলিয়াছিলেন, “একদিন ঠাকুর আমাকে বলিলেন, অত শাস্ত্রাদি পড়িয়া কি হইবে ‘নাথ, তুমি সর্বস্ব আমার’ এই গানটির অর্থ বুঝিলেই সমস্ত হইয়া যাইবে। ঠাকুর তাল দিয়া নিজেই আমাকে এই গানটি শিখাইয়াছিলেন।”

  • স্বামী সারদানন্দ

নাথ! তুমি সর্বস্ব আমার। প্রাণাধার সারাৎসার
নাহি তোমা বিনে কেহ ত্রিভুবনে বলিবার আপনার॥
তুমি সুখ শান্তি তুমি সহায় সম্বল সম্পদ ঐশ্বর্য জ্ঞান বুদ্ধিবল
তুমি বাসগৃহ আরামের স্থল আত্মীয় বন্ধু পরিবার॥
তুমি ইহকাল তুমি পরিত্রাণ তুমি পরকাল তুমি স্বর্গধাম
তুমি শাস্ত্রবিধি গুরু কল্পতরু অনন্ত সুখের আধার॥
তুমি হে উপায় তুমি হে উদ্দেশ্য তুমি স্রষ্টা পাতা তুমি হে উপাস্য
দণ্ডদাতা পিতা স্নেহময়ী মাতা ভবার্ণবে কর্ণধার॥

সাধক তোতাপুরী

তোতাপুরী জগদম্বাকে মানে না। কিন্তু তোতাপুরীর ওপর জগদম্বারর অপার করুণা। করুণাবলেই তার সাধনার পথ সহজ করে দিয়েছেন। দেখাননি তাকে তাঁর রঙ্গিণী মায়ার খেলা। অবিদ্যারূপিনী মোহিনী মায়ার ইন্দ্রজাল। দেখাননি তাকে তাঁর সর্বগ্রাসিনী করালী মূর্তি। প্রকটিতবদনা বিভীষিকা। বরং তাকে দিয়েছেন সুদৃঢ় স্বাস্থ্য, সরল মন আর বিশুদ্ধ সংস্কার। তাই নিজের পুরুষাকারের প্রয়োগে সহজ পথে উঠে গিয়েছে। আত্মজ্ঞানে, ঈশ্বরদর্শনে, নির্বিকল্প সমাধিভূমিতে। এখন মহামায়া ভাবলেন, ওকে এবার বোঝাই আসল অবস্থাটা কি।
লোহার মত শরীর, লোহা চিবিয়ে হজম করতে পারে তোতাপুরী — হঠাৎ তার রক্তআমাশা হয়ে গেল।
সব সময় পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। কি করে মন আর ধ্যানে বসে। ব্রহ্ম ছেড়ে মন এখন শুধু শরীরে লেগে থাকে। মনের সেই শান্তির মৌন চলে গিয়ে দেখা দেয় শারীরিক আর্তনাদ।
ব্রহ্ম এবার পঞ্চভূতের ফাঁদে পড়েছেন। এবার মহামায়ার কৃপা না হলে আর রক্ষা নেই।
তোতাপুরী ভাবলে এবার পালাই বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু শরীর ভাল থাকছে না এই অজুহাতে পালিয়ে যাব ? হাড়-মাসের খাঁচা এই শরীর। তাকে এত প্রাধান্য দেব ? তার জন্য ছেড়ে যাব এই ঈশ্বরসঙ্গ ? যেখানে যাব সেখানেই তো শরীর যাবে। শরীরের সঙ্গে-সঙ্গে রোগও যাবে। শরীর যখন আছে, তখন তো তা ভুগতেই হবে। শেষও হয়ে যাবে একদিন। সেই শরীরের প্রতি মমতা কেন ? যাক্ না তা ধুলোয় নস্যাৎ হয়ে। ক্ষয়হীন আত্মা রয়েছে অনির্বাণ। রোগ, জরা, মৃত্যু তাকে স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারে না। সে প্রদীপ্ত চৈতন্য শরীর-বহির্ভূত।
নানা তর্ক করে মনকে স্তব্ধ করল তোতাপুরী।
কিন্তু রোগ না শোনে ধর্মের কাহিনী। ক্রমেই তার শিখা বিস্তার করতে লাগল— যন্ত্রণার শিখা। ঠিক করল, আর থাকা চলে না দক্ষিণেশ্বরে — রামকৃষ্ণের থেকে শেষে বিদায় নিতেই হবে। কিন্তু মুখ ফুটে রামকৃষ্ণকে তা বলে এমন সাধ্য নেই। কে যেন তার মুখের ওপর হাত চাপা দিয়ে কথা কইতে বাধা দিচ্ছে। আজ থাক, কাল বলব। বারে-বারে এইভাব এসে তাকে নিরস্ত করছে। আজ গেল, কালও সে পঞ্চবটীতে বসে রামকৃষ্ণের সঙ্গে বেদান্ত নিয়েই আলোচনা করলে। অসুখের কথা দন্তস্ফুট করতে পারল না।
একদিন রাতে শুয়েছে, পেটে অসহ্য যন্ত্রণা বোধ হল। উঠে বসল তোতাপুরী। এ যন্ত্রণার কিসে নিবারণ হবে ? মনকে দেহ থেকে বিছিন্ন করে পাঠাতে চাইল সেই অদ্বৈতভূমিতে। কিন্তু মন আর যেতে চায় না। একটু ওঠে আবার পেটের যন্ত্রণায়য় নেমে পড়ে। শরীরবোধের আর বিচ্যুতি ঘটে না। ভীষয়ণ বিরক্ত হল তোতাপুরী। যে অপদার্থ শরীরটার জন্য মনকে বশে আনতে পারছি না, সে শরীর রেখে লাভ কি ? তার জন্য কেন এত নির্যাতন ? সেটাকে বিসর্জন দিয়ে মুক্ত, শুদ্ধ, অসঙ্গ হয়ে যাই।
তোতাপুরী ঠিক করল ভরা গঙ্গায়য় ডুবে মরবে।
গঙ্গার ঘাটে চলে এল তোতা। সিঁড়ি পেরিয়ে ধীরে-ধীরে জলে নামতে লাগল। ক্রমে-ক্রমে এগুতে লাগল গভীরের দিকে, মাঝ নদীতে।
কিন্তু এ কি! গঙ্গা কি আজ শুকিয়ে গেছে ? আদ্ধেক প্রায় হেঁটে চলে এল, তবু এখনো কি না ডুব-জল পেল না ? এ কি গঙ্গা ? না একটা শিশে খাল ? প্রায় ওপারের কাছাকাছি এসে পড়ল, এখন কি না ফের হাঁটু-জলে এসে ঠেকেছে। এ কি পরমাশ্চর্য ! ডুবে মরার জল পর্যন্ত আজ গঙ্গায় নেই ?
“এ ক্যায়া দেবী মায়া” অসহায়ের মত চিৎকার করে উঠল তোতাপুরী।
হঠাৎ তার চোখের ঠুলি যেন খসে পড়ল। যে অব্যয়-অদ্বৈত ব্রহ্মকে সে ধ্যান করে এসেছে, তাকে সে এখন দেখলে মায়ারূপিনী শক্তিরূপে। যা ব্রহ্ম, তাই ব্রহ্মশক্তি। ব্রহ্ম নির্লিপ্ত কিন্তু শক্তিতেই জীব-জগৎ। ব্রহ্ম নিত্য, শক্তি লীলা। যেমন সাপ আর তির্যক গতি, যেমন মণি আর বিভা।
সেই বিভাবতী জ্যোতির্ময়ীকে দেখল এখন তোতাপুরী। দেখল “জগজ্জননী” সমস্ত চরাচর আবৃত করে রেখেছেন। যা কিছু দৃশ্য, দর্শন ও দ্রষ্টা সব তিনি। শরীর-মন রোগ-স্বাস্থ্য জ্ঞান-অজ্ঞান জীবন-মৃত্যু — সব তাঁর রূপছটা। ” একৈব সা মহাশক্তিস্তয়া সর্বমিদং ততম্।”
মা’র এই বিশ্বব্যপ্ত রূপ দেখে তোতা অভিভূত হয়ে গেল।
লুপ্ত হয়ে গেল ব্যাধিবোধ। নদী ভেঙে সে ফের ফিরে চলল দক্ষিণেশ্বরে।
পঞ্চবটীতে ধুনির ধারে বসল গিয়ে সে চুপচাপ। ধ্যানে চোখ বোজে আর দেখে সে জগদম্বাকে। চিৎসত্তাস্বরূপিনী পরমানন্দময়ীকে।
সকালবেলা তোতাকে দেখে রামকৃষ্ণ তো অবাক। শরীরে রোগের আভাস-লেশ নেই। সর্বত্র প্রহর্ষ প্রকাশ।
“এ কি হল তোমার ? কেমন আছ ?”
“রোগ সেরে গেছে।”
“সেরে গেছে ? কি করে ?”
“কাল তোমার মা’কে দেখেছি।” তোতার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল।
“আমার মা’কে ?”
“হ্যাঁ, আমারো মা’কে। জগতের মা’কে। সর্বত্র তাঁর আত্মলীলার স্ফুর্তি— চিদৈশ্বর্যের বিস্তার—-“
“কেমন বলেছিলাম না ?” রামকৃষ্ণ উল্লাসিত হয়ে উঠল। “তখন না বলেছিলে আমার কথা সব ভ্রান্তি ? তোমায় কি বলব, আমার মা’যে ভ্রান্তিররূপেও সংস্থিতা —-“
“দেখলাম যা ব্রহ্ম, তাই ই শক্তি। যা অগ্নি, তাই দাহিকা। যা প্রদীপ, তাই প্রভা। যা বিন্দু, তাই সিন্ধু। ক্রিয়াহীনে ব্রহ্মবাচ্য, ক্রিয়াযুক্তেই মহামায়া।”
“দেখলে তো, দেখলে তো ?” রামকৃষ্ণের খুশী আর ধরে না। আমার মা’কে না দেখে কি তুমি যেতে পারো ? যোগে বসে এত দেখেছ, আর আমার মহাযোগিনী মা’কে দেখবে না ?”
যা মন্ত্র, তাই মূর্তি। এক বিন্দু বীর্য থেকে এই অপূর্বসুন্দর দেহ, এক ক্ষুদ্র বীজ থেকে বৃহৎ বনস্পতি, এক তুচ্ছ স্ফুলিঙ্গ থেকে বিস্তীর্ণ দাবানল। তেমনি ব্রহ্ম থেকে এই শক্তির আত্মলীলা।”
“এবার তোমার মা’কে বলে আমার ছুটি পাইয়ে দাও।”
“আমি কেন ? তোমার মা তুমি বলো না।” হাসতে লাগল রামকৃষ্ণ।
তোতা চলে এল ভবতারিণীর মন্দিরে। সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করল মা’ কে। প্রসন্ন মনে মা তাকে যাবার অনুমতি দিলেন। রামকৃষ্ণকে বিদায় জানিয়ে কালীবাড়ি ছেড়ে চলে গেল কোন দিকে।
কোন দিকে গেল কেউ জানে না।
পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণ
লেখক – অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
.
(সংগৃহীত)

ছট পূজা

রামায়ণে ছট্ পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। রাম ও সীতা যখন ১৪ বছর বনবাস শেষে রাবণ বধ করে অযোধ্যা ফিরে আসেন। তখন রাবন বধের পাপ থেকে মুক্তি পাবার আশায় ঋষি মুনিদের পরামর্শ নেন। মুনি ঋষিদের কথা অনুযায়ী রাম সীতা তখন যজ্ঞের আয়োজন করেন। এবং সেই যজ্ঞ সম্পূর্ণ করতে মুদগল ঋষিকে আহ্বান করা হয়। মুদগল ঋষি তখন গঙ্গা জল ছিটিয়ে সীতাকে পবিত্র করলেন এবং রাবণ বধ এই পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সীতাদেবীকে সূর্য দেবের উপাসনা করার আদেশ দিলেন। ঋষি কথামতো সীতা তখন ছয় দিন সূর্য দেবতার পূজা করলেন। আর সেসময় থেকেই এই পুজোর সূচনা হয়।
মহাভারতেও ছট্ পুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। পুরাকালে রাজা ভোজের দুহিতা কুন্তী কুমারী অবস্থায় থাকাকালীন ভোজের গৃহে ঋষি দুৰ্বাসা অসুস্থ অবস্থায় উপস্হিত হয়। ঋষি দুৰ্বাসাকে শুশ্রুষা করার দায়িত্ব ভোজ কুন্তীকে দেয়। কুন্তীর শুশ্ৰুষাতে সন্তুষ্ট হৈয়া ঋষি দুৰ্বাসা কুন্তীকে এক বীজ মন্ত্র প্রদান করেন। সেই বীজ মন্ত্র পেয়ে কুন্তীর মনে কৌতুহল জন্মায় এই বীজ মন্ত্র থেকে কি ফললাভ হয় তা দেখার। ঋষি দুর্বাসা ভোজের রাজ্য থেকে প্রস্থানের পর একদিন প্রাত স্মরণে সূর্যদেবের আরাধনা উপাসনাতে সেই বীজ মন্ত্রটি প্রয়োগ করেন। কুন্তীর বীজ মন্ত্রর আরাধনা উপাসনাতে সন্তুষ্ট হৈয়া সূৰ্যদেব কুন্তীকে এক পুত্র সন্তান “দানবীর কৰ্ণ” দিলেন। মহাভারতে কুন্তি দ্বারা সূর্যের আরাধনা এবং কর্ণের জন্ম থেকেই এই পর্বের সূচনা। আবার পাণ্ডবরা যখন পাশা খেলায় নিজেদের সমস্ত রাজপাট হারিয়ে ফেলে তখন দ্রৌপদী ছট্ ব্রত করেন। দ্রৌপদীর মনোস্কামনা পুরণ হয় এবং পাণ্ডবরা তাঁদের রাজপাট ফিরে পান।
বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়, যেখানে বিহারী বংশোদ্ভুতদের বাস, সেখানেই ধুমধাম করে পালিত হয় এই উৎসব। এছাড়া উত্তরপ্রদেশেও একটি বড় অংশে এই পুজোর প্রচলন রয়েছে। মোটামুটিভাবে এই অঞ্চলটিই মহাভারতের যুগে ‘অঙ্গদেশ’ বলে পরিচিত ছিল। এই অঙ্গদেশ ছিল কৌরবদের বা হস্তিনাপুর রাজবংশের অধীন। পাণ্ডব ও কৌরবদের শস্ত্র প্রতিযোগিতায় হঠাৎই আমন্ত্রণ ছাড়াই এসে পড়েন সুতপুত্র কর্ণ এবং এসেই অর্জুনকে প্রতিযোগিতায় আহ্বান জানান। কিন্তু কর্ণ তো আর রাজপুরুষ নন, তাই সেই প্রসঙ্গ তুলে তাঁকে প্রবল অপমান করেন ভীম। এই সময় সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন দুর্যোধন। কর্ণের তেজ ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শিতা দেখে তাঁকে দলে টানতে, সেই সময় তিনি কর্ণের জীবনের সবচেয়ে বড় উপকারটি করেন। তাঁকে অঙ্গদেশ দান করে, সেখানকার রাজা বলে ঘোষণা করেন। তখনও কিন্তু কেউ জানে না যে কর্ণ আসলে সূর্যের ঔরসজাত কুন্তীপুত্র। সেই প্রতিযোগিতার আসরে কুন্তী কর্ণকে চিনতে পারলেও কোন কিছু বলেননি। মুখ খুলেছিলেন সেই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে, পাণ্ডবদের বাঁচাতে যখন নিজে কর্ণের কাছে প্রস্তাব রাখেন পাণ্ডবপক্ষে চলে আসার জন্য।
তিনি যে সূর্যদেবের পুত্র, সেটা না জানলেও কর্ণ কিন্তু প্রথম থেকেই সূর্যের উপাসক ছিলেন। প্রচলিত আছে, অঙ্গদেশের রাজা হওয়ার পরে সেই অঞ্চলে ধুমধাম করে সূর্যদেবের পুজো ও উৎসবের প্রচলন করেন কর্ণ এবং সেই উৎসবই কয়েক হাজার বছর পেরিয়ে টিকে রয়েছে ছট্ পুজো হিসেবে। মহাভারতের গল্প অনুযায়ী কর্ণের শরীরে সব সময় থাকত একটি কবচ ও কুণ্ডল যা ছিল সূর্যদেবের আশীর্বাদ। ওই কবচ-কুণ্ডল থাকার জন্যেই তাঁকে বধ করা ছিল অসম্ভব। কৃষ্ণের পরামর্শ অনুযায়ী কর্ণকে দলে টানতে না পেরে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে সেই কবচ-কুণ্ডল ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে চেয়ে নিয়েছিলেন ইন্দ্র। ধর্মপ্রাণ ও দাতা বলে পরিচিত কর্ণ সেই অনুরোধ ফেরাতে পারেননি। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে এর পর তাঁর মৃত্যু হয়। কিন্তু রাজা হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং তাই হয়তো তাঁর মৃত্যুর পরেও অঙ্গদেশের মানুষ ভক্তিভরে সূর্যষষ্ঠী ও ছট্ পুজো পালন করে এসেছেন এবং এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়েছে এই উৎসবের মাহাত্ম্য।
ছট্ অর্থাৎ ছটা বা রশ্মির পূজা। এই রশ্মি সূর্য থেকেই পৃথিবীর বুকে আসে। সুতরাং এই পূজা আসলে সূর্যদেবের পূজা। মনে করা হয় ছট্ দেবী সূর্যের বোন। তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্যই সূর্যের আরাধনা করা হয়। প্রত্যক্ষভাবে ‘ছট;-এর পূজা হলেও এই পূজার সঙ্গে জড়িত আছেন স্বয়ং সূর্যদেব, আছেন মা গঙ্গা এবং দেবী অন্নপূর্ণা।
পৌরাণিক কাহিনীতে রয়েছে — বর্ষার আগমন ঘটেছে। কিন্তু বৃষ্টি তেমন হয়নি। চাষিদের মাথায় হাত। মাঠের ফসল মাঠেই মারা যাচ্ছে। মা অন্নপূর্ণা ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকেন। সকল দেবতা মা অন্নপূর্ণার এহেন দুর্দশায় ব্যথিত। ঘরে ঘরে অন্নাভাব হাহাকার ওঠে। সূর্যের তাপ হ্রাস করে বাঁচার জন্য মা অন্নপূর্ণা সূর্যদেবের ধ্যান করতে শুরু করেন। তাতে হিতে বিপরীত হয়। সূর্যের প্রখর ছটায় মা অন্নপূর্ণা দিন দিন শ্রীভ্রষ্টা হয়ে ক্ষীয়মান হতে থাকেন। দেবলোকে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। দেবতারা সম্মিলিতভাবে সূর্যদেবের কাছে গেলে তিনি মা অন্নপূর্ণার এই দশার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন এবং বলেন, মা অন্নপূর্ণা যেন গঙ্গাদেবীর আশ্রয় নেন। সূর্যদেব আরও বলেন, অস্তগমনকালে গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে এবং সপ্তমীর উদয়কালে মা অন্নপূর্ণা গঙ্গাদেবীর আশ্রয়ে থেকে উদীয়মান ছটা বা রশ্মিকে দেখে আমার স্তব বা ১২টি নাম উচ্চারণ করলে আমার স্মরণকারীকে সমস্ত পৃথিবী অন্নে পূর্ণ হতে থাকল। মা অন্নপূর্ণা আবার তাঁর শ্রী ফিরে পান। ছট্ পূজা বা ব্রত একাধারে সূর্যদেব, মা অন্নপূর্ণা ও গঙ্গাদেবীর পূজা।
পুরাণে এ-ও উল্লেখ আছে, কার্তিক শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীতে সূর্যাস্ত এবং সপ্তমীতে সূর্যোদয়ের মধ্যে বেদমাতা গায়েত্রীর জন্ম হয়। প্রকৃতির ষষ্ঠ অংশ থেকে উৎপন্ন শিশুদের রক্ষা করে থাকেন তিনি। তিনি বিষ্ণু দ্বারা রচিত মায়া। শিশু জন্মের ষষ্ঠ দিনে ষষ্ঠী দেবীর পুজো করা হয়। যাতে শিশুর কখনও কোনও প্রকার দুঃখ-কষ্ট না হয়।
প্রিয়ব্রত নামে এক রাজা কে ঘিরে এই পুজোর ব্রতকথা প্রচলিত। রাজা প্রিয়ব্রতের কোনো সন্তান ছিল না। অনেক যাগযজ্ঞ করেও যখন তার পুত্র প্রাপ্তি ঘটে না তখন প্রিয়ব্রত ঋষি কাশ্যপের শরণাপন্ন হন। ঋষি কাশ্যপ অবশেষে প্রিয়ব্রতের পুত্র প্রাপ্তির জন্য বিশালাকার যজ্ঞ করান এবং যজ্ঞের আহুতি থেকে উৎপন্ন ক্ষীর প্রিয়ব্রতের স্ত্রী কে খেতে দেন। যদিও ক্ষীর খেয়ে রীতিমতো সন্তানের জন্ম দেন প্রিয়ব্রতের স্ত্রী। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তাদের সেই সন্তানটিও মৃত হয়। তখন পুত্রের বিয়োগে শোকাহত রাজা প্রিয়ব্রত নিজের জীবন ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক এমনি সময় ভগবানের মানস পুত্রী প্রিয়ব্রত কে দর্শন দিয়ে বলেলেন তিনি প্রকৃতির মূল ছয়টি অংশের মধ্যে তার সৃষ্টি। তাকে ষষ্ঠী ও বলা হয়।তিনি যেন তার পুজো দেন তবেই রাজার মনকামনা পূরণ হবে। এইভাবে রাজা সেদিন থেকে ছট্ মাতার পূজো করে দেবীর কৃপায় পুনরায় সুস্থ পুত্র সন্তান লাভ করেন।
দীপাবলির ঠিক ছ-দিন পর পালিত হয় ছট্ উৎসব। ছট্ পুজো হল চার দিনের উৎসব। কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠীতে ছট্ ব্রতর বিধান রয়েছে। সূর্যের এই ব্রতে শক্তি এবং ব্রহ্মার উভয়ের পুজোর ফল পাওয়া যায়। তাই এই ব্রত সূর্যষষ্ঠীর নামে বিখ্যাত। এই ব্রত পালনে সূর্যদেবের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি আমাদের জীবনে যেমন বিঘ্ননাশক, দুঃখনাশক, তেমনি সুখদায়ক ও অর্থ-বৈভবদায়ক।
এই ব্রতে তিন দিনের কঠোর উপবাসের বিধান রয়েছে। চতুর্থীর দিন থেকে এই ব্রত শুরু। এদিন পুরো দিনের উপবাস রাখা হয়। রাতে কাঠ বা মাটির উনুনে পায়েস এবং লুচি রান্না করা হয়। ভোগ লাগিয়ে সেই প্রসাদ খান মহিলারা। যাঁরা এই ব্রত করেন, তাঁদের পঞ্চমীর দিন নুন ছাড়া ভোজন গ্রহণ করেত হয়। ষষ্ঠীতে নির্জলা থেকে ব্রত করতে হয়। ষষ্ঠীতে অস্ত সূর্যের পুজো করে অর্ঘ্য নিবেদন করতে হয়। সপ্তমীর সকালে উদিত সূর্যকে অর্ঘ্য দিতে হয়। তার পর জল খেয়ে উপবাস পুরো করতে হয়। কোনও নদী বা পুকুরে গিয়ে এই পুজো করতে হয়।
এই ব্রতের বিশেষত্ব হল, বাড়ির যে কোনও সদস্য এই ব্রত করতে পারে। ছট্ পুজোর সময়ে বাড়ি স্বচ্ছ রাখা হয়। এই ব্রতের বিশেষ প্রসাদ ঠেকুয়া।
.
সূর্য দেবের প্রণাম মন্ত্র —
ॐ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম্।
ধান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতঃ অস্মি দিবাকরম্।।
— জবাপুষ্পের মত লোহিত বর্ণ, অন্ধকারনাশক, মহাদ্যুতিবিশিষ্ট, সর্ব্বপাপবিনাশক কশ্যপপুত্র সূর্যদেবকে (আমি) প্রণাম করি।
.
(সংগৃহীত)