<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Culture and Tradition. - Sri Yoga Center Ashram's Blog - Page 29

TREND OF DISEASES

Kotha Silpi SaratChandra Chottopadhyay a great Bengali writer wrote a beautiful story of Lalu. Lalu was a brave boy. At his village there was an epidemic of ‘OlaOtha/ VedBomon/Antrik’[Cholera]. At that period there was no known treatment for Cholera and an old lady died from that. Lalu spent a whole night with her dead body in a rainy night of winter. At the dawn when people came for that lady’s funeral, they noticed that the dead body was moving under a rag, it swelled up. They became afraid. Suddenly they saw the body sat over the cot. Then they tried to run away. After repeated call of Lalu they again came back. Lalu was laughing. Every body was afraid. Lalu replied that he spent a whole night with that body, because in Hindu system one should to stay with a dead body till funeral.

Today this is story. But once this was a fact. Being a doctor even I have not seen many a disease that we read in the book, like Small pox, Diphtheria, tertiary stage of Syphilis.
This is mainly for immunization. Immunization is a nice achievement of Medical Science. It was started in ancient India first. After a long saga it has come back in Medical Science through the England.
Please read https://www.intechopen.com/books/vaccines-the-history-and-future/introductory-chapter-the-journey-of-vaccines-the-past-and-the-present

ASPER THIS BOOK

“However, the term smallpox is an English term for the disease, introduced first in India during the British rule and before it was known as the Masurika (For about 2000 years as mentioned in Charak and Sushruta Samhita before the Christian era) Basanta roga (Paproga, Sitalika, Sitala, Gunri, and Guli) or the spring disease in Eastern India. The concept of variolation or inoculation moved from India to the England in the early eighteenth century or 1721 by the British Lady Mary Wortley Montagu, who was living in Ottoman Empire (1716–1718) and communicated to her friend in Britain (Miss Sarah Chiswell, who died of smallpox 9 years later) about this technique by letters [2, 5]. Even in 1731 one British called Robert Coult in Bengal wrote a letter to Dr. Oliver Coult in England describing the procedure of variolation used in India to protect the local population from smallpox [6]. Dr. Edward Ives (1773), a British naval surgeon, also observed the procedure of variolation as described by the Robert Coult on his visit to India (Bengal) in 1755 [6]. Before the introduction of variolation/inoculation in England in the sixteenth century the burden of infectious diseases including smallpox, measles, whooping cough, dysentery, scarlet fever, influenza, and pneumonia accounted for the death of more than 30% children of age below 15 years as the record. The concept of variolation/inoculation was introduced in North America in 1721. By 1777, George Washington, ordered that all the soldiers and recruits of his army should be inoculated/variolated. Thus introduction of the concept of variolation was the first step towards the development of Edward Jenner’s cowpox/smallpox vaccine, modern day vaccines, and the introduction of the concept of vaccination to fight against infectious diseases.”


However, thanks to our Medical Science, thanks to those scientists who discovered its remedies. Thanks to Dhanwantari,the Indian God of Health Science, thanks to Brahmin cult those nourished this culture with Goddess Mata Sitala, thanks to Dr EDWARD JENNER who discovered the vaccine first in modern day against Small Pox,Thanks to Great  LUIS PASTEUR for the concept of Rabies and other vaccines.

ভারত ভ্রমনের পর স্বামী বিবেকানন্দের রামকৃষ্ণ দেবের সাথে সাক্ষাৎ

নরেন্দ্রনাথকে দেখে ঠাকুরের খুশী ধরে না। এদিনও ঠাকুর তাঁকে গান শোনাতে বললেন।
নরেন্দ্রনাথ এদিন ঠাকুরকে দুটি গান শুনিয়েছিলেন।
প্রথম গানটি নরেন্দ্রনাথ গাইলেন —
“মন চল নিজ নিকেতনে।
সংসার বিদেশে, বিদেশীর বেশে, ভ্রম কেন অকারণে॥
….. মন চলো নিজ নিকেতনে।”
‘কই, আর একখানা গা’ — বললেন ঠাকুর।
নরেন্দ্রনাথ আবার গান ধরলো, গানটি বেচারাম চট্টোপাধ্যায় রচিত —
“যাবে কি হে দিন আমার বিফলে চলিয়ে।
আছি নাথ দিবানিশি আশাপথ নিরখিয়ে॥
তুমি ত্রিভুবন নাথ, আমি ভিখারি অনাথ।
কেমনে বলিব তোমায় এস হে মম হৃদয়ে॥
হৃদয়-কুটীর-দ্বার, খুলে রাখি আনিবার।
কৃপা করি একবার এসে কি জুড়াবে হিয়ে॥”
গান শুনে ভাবে বিভোর ঠাকুর, হঠাৎ চমকিয়ে উঠে নরেন্দ্রনাথের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন উত্তরের বারান্দার ঘরে। বন্ধ হলো বাইরের দরজা। মুখোমুখি বসলেন দুজনে।
ঠাকুরের চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে, কেঁদে কেঁদে বলছেন, “তোর কি মায়া দয়া নেই ? কোথায় ছিলি এতদিন ? দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চেয়ে আছি তোর পথ পানে। কি করে আমায় ভুলে ছিলি ?”
“সেদিন মাঝরাতে তুই এলি আমার ঘরে, আমায় ঘুম থেকে টেনে তুললি। বললি, আমি এলাম….”
ঠাকুরের কথা শুনে চমকে উঠলো নরেন্দ্রনাথ।
এই সাক্ষাত নরেন্দ্রনাথের জীবনে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “তাহাকে [রামকৃষ্ণ] একজন সাধারণ লোকের মতো বোধ হইল, কিছু অসাধারণত্ব দেখিলাম না। অতি সরল ভাষায় তিনি কথা কহিতেছিলেন, আমি ভাবিলাম, এ ব্যক্তি কি একজন বড় ধর্মাচার্য হইতে পারেন ? আমি সারা জীবন অপরকে যাহা জিজ্ঞাসা করিয়াছি, তাহার নিকটে গিয়া তাহাকেও সেই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম,
‘মহাশয়, আপনি কি ঈশ্বর বিশ্বাস করেন ?’
তিনি উত্তর দিলেন — ‘হাঁ।’
‘মহাশয়, আপনি কি তাহার অস্তিত্বের প্রমাণ দিতে পারেন ?’
‘হাঁ’।
‘কি প্রমাণ ?’
‘আমি তোমাকে যেমন আমার সম্মুখে দেখিতেছি, তাহাকেও ঠিক সেইরূপ দেখি, বরং আরও স্পষ্টতর, আরও উজ্জ্বলতররূপে দেখি।’
আমি একেবারে মুগ্ধ হইলাম।”
.
জয় ঠাকুর
.
(সংগৃহীত)

কল্পতরু উৎসব

আজ থেকে ১৩৫ বছর আগের ব্রিটিশ কোলকাতা, ১লা জানুয়ারী ১৮৮৬, ১৮ই পৌষ ১২৯২, কৃষ্ণা একাদশী, শুক্রবার, ইংরেজি নববর্ষ, ছুটির দিন।
ঠাকুর তখন কাশীপুর উদ‍্যানবাটিতে। সকাল থেকেই ঠাকুর সুস্থ রয়েছেন আর বেলা যত বাড়ছে ততই কাশীপুর উদ্যানবাটির বাগানে ঠাকুরের ভক্তরা এসে মিলিত হচ্ছেন। ভক্তরা জমা হয়েছে যদি একফাঁকে ঠাকুরকে একটু দেখা যায়। ছুটি তাই অনেকক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে। ইংরেজি বছরের প্রথম দিন, সবারই ইচ্ছে ঠাকুরকে দর্শন করে।
ঠাকুর তখন ওপরে ছিলেন। দুপুর তিনটে নাগাদ হঠাৎ তিনি রামলালকে বলেন ‘আজকে একটু ভালো বোধ করছি, আজকে একটু বাগানে বেড়াবো’।
‘ওরে ওরা আমার জন্য সব বসে আছে’। ঠাকুর হঠাৎ ব‍্যস্ত হয়ে উঠলেন : ‘আমাকে জামা-কাপড় দাও, আমি পরব, সাজব, যাব আমি বাগানে বেড়াতে।’ একি অসম্ভব কথা ! শয‍্যাশায়ী রোগী কিভাবে নীচে যাবে। এদিকে তিনি বলে চলেছেন, ‘মনোহর বেশ পরব। তেলধুতি নয়, ধোয়া ধুতি। নিয়ে এস আমার বনাতের জামা। আমার কানঢাকা টুপি। আমার ফুলকাটা মোজা।’
ঠাকুর লালপেড়ে ধুতি পরলেন। গায়ে দিলেন সবুজ বনাতের জামা। মোজা পায়ে চটিজুতো পরলেন। পায়ের জুতোটি লতাপাতা আঁকা। মাথায় আঁটলেন কাপড়ের কানঢাকা সবুজ টুপি। রোগশীর্ণ মুখখানি সূর্যের দীপ্তিতে ঝলমলে, করুণার রসে লাবণ্যপূর্ণ। চক্ষে আজ তাঁর বিশ্বরূপ দর্শন দানের ইঙ্গিত। রামলাল ওঁকে সাজিয়ে দিলেন। সাজগোজ শেষ করে নিজে হেঁটে নেমে চললেন সিঁড়ি বেয়ে।
সবাই দেখলেন ঠাকুর সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছেন। নরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং অনান্য সন্ন্যাসীরা ভাবলেন, আগের দিন রাতে তাঁরা তপস্যা করেছিলেন বলেই বোধহয় ঠাকুর নীচে নেমে এলেন। ওঁরা তখন সবাই নীচে একটা ঘরে বিশ্রাম করছিলেন। ওদিকে সারদানন্দজি (শরৎ মহারাজ) আর অদ্ভুতানন্দজি অনেকদিন পর ঠাকুর রোগশয্যা ত্যাগ করে নীচে নেমেছিলেন বলে সেই অবসরে ঠাকুরের ব্যবহৃত বিছানা রোদে দিতে ব্যস্ত ছিলেন। ভক্তদের উল্লাস তাঁদের কানে গেলেও তাঁরা নেমে আসার কোনও উৎসাহ দেখাননি।
ঠাকুর একেবারে সোজা এসে উপস্থিত হলেন সামনের মাঠে যেখানে গৃহীভক্তরা জমায়েত হয়েছে। চলে এলেন সেই গৃহীদের আহ্বানে যারা পাপী, তাপী, দুর্গত, নানা বেদনায় জর্জর, সংশয়ে, অবিশ্বাসে পীড়িত, আকাঙ্ক্ষা, অহংকারে অভিভূত।
প্রায় ত্রিশজন গৃহী ভক্ত এসেছেন। এসেছেন গিরিশ ঘোষ, অতুল ঘোষ, রামচন্দ্র দত্ত, অক্ষয় সেন, হারান দাস, কিশোরী রায়, বৈকুন্ঠ সান‍্যাল, নবগোপাল ঘোষ, হরমোহন মজুমদার, মাস্টারমশাই মহেন্দ্র গুপ্ত, হরিশ মুস্তাফি, চুনীলাল বসু, উপেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সকলে ভাবলেন, একি সত্যি না দিবাস্বপ্ন ? একসাথে এতগুলি লোকের দৃষ্টিভ্রম কিভাবে হয় ?
তুমি নিজে থেকে এলে আজ আমাদের মধ্যে। তোমার দুয়ারে কত রক্ষী, কত পাহারাওয়ালা, কত নিয়মকানুন। সমস্ত নস্যাৎ করে তুমি এলে। কিভাবে বুঝলে আমাদের দুঃখ, আমাদের অসামর্থ‍্যের, অসাফল‍্যের বেদনা ?
গিরিশকে সামনে দেখে ঠাকুরের জিজ্ঞাসা, ‘গিরিশ, তুমি আমার সম্বন্ধে কী বলছ এখানে-সেখানে ? আমার মধ্যে তুমি কি দেখলে ?’
গিরিশ তৎক্ষণাৎ নতজানু হয়ে ঊর্ধ্বমুখে ঠাকুরকে বললেন, — ‘ব্যাস-বাল্মীকি যাঁর ইয়ত্তা করতে পারেনি, আমি তাঁর বিষয়ে কি বলব ?’ এই বলে পদপ্রান্তে করজোড়ে ঠাকুরের মুখপানে তাকিয়ে রইলেন। চারিদিকে জয়-জয় পড়ে গেল।
গিরিশ চন্দ্রের অনাবিল ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে ঠাকুর গিরিশের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে সমবেত ভক্তদের বললেন, ‘তোমাদের আর কী বলব, আশীর্বাদ করি তোমাদের চৈতন্য হোক।’
হঠাৎ করে ঠাকুরের আশীর্বাদে বা দিব্যস্পর্শে উপস্থিত ভক্তদের ভাবান্তর ঘটল। তখন কেউ কাঁদতে লাগল, কেউ হাসতে লাগল, কেউ দুহাত ওপরে তুলে নাচতে লাগল, কেউ বা ধ্যানে মগ্ন হল আবার কেউ চিৎকার করে অন্যদের ডাকতে লাগল ঠাকুরের কৃপা লাভের জন্য।
ঠাকুরও গিরিশের কথায় ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। সকলে তখন ‘জয় রামকৃষ্ণ’ বলে চিৎকার করতে লাগল আর স্পর্শ করা নিষেধ সত্ত্বেও তাঁর পদধূলি গ্রহণ করতে লাগল। চারদিকে চৈতন্যের ঢেউ পড়ে গেল। প্রনামের প্রেমপুষ্পাঞ্জলী পড়তে লাগলো পায়ের উপরে। যারা প্রতিজ্ঞা করেছিল ঠাকুর সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে ছোঁবেন না, সবাই সব ভুলে গেল।
রামচন্দ্র দত্ত অঞ্জলিভরে ফুল দিতে লাগল পায়ে। ঠাকুর তাকে স্পর্শ করলেন। দুটি জহুরী চাঁপা নিয়ে এল অক্ষয় সেন। ফুলদুটি পায়ে দিতেই ঠাকুর বক্ষ ছুঁয়ে দিলেন। কৃপার কল্পতরু হয়েছেন ঠাকুর। আত্মপ্রকাশ করেছেন। করেছেন অভয়প্রকাশ।
‘ওরে কোথায় কে আছিস এইবেলা চলে আয়। মুঠো মুঠো অভয় কুড়িয়ে নে। আশ্বাস কুড়িয়ে নে।’ আনন্দে চিৎকার করে ওঠে অক্ষয়। ‘চৈতন্যের বন‍্যা বয়ে যাচ্ছে। কুড়িয়ে নে ভারে ভারে। জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য যার যা খুশি। ঠাকুর কল্পতরু হয়ছেন। এমন দিন আর পাবিনা রে। কৃপার পাত্র উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন প্রভু। আয় নিয়ে যা দেখে যা।’
বেলেঘাটার হারাণ চন্দ্র দাস এ সময় ঠাকুরকে প্রণাম করা মাত্র ঠাকুর তার মাথায় পা ঠেকালেন, ঠিক নারায়ণ যেমন গয়াসুরের মাথায় পা দিয়ে তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন।
রামচন্দ্র দত্ত নবগোপাল ঘোষকে বলেন, ‘মশায়, আপনি কি করছেন ? ঠাকুর যে আজ কল্পতরু হয়েছেন। যান, যান, শীঘ্র যান। যদি কিছু চাইবার থাকে তো এই বেলা চেয়ে নিন।’ শুনে নবগোপাল দ্রুত ঠাকুরের কাছে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে বললেন, ‘প্রভু আমার কি হবে ?’ ঠাকুর একটু নীরব থেকে বললেন, ‘একটু ধ্যান-জপ করতে পারবে ?’ নবগোপাল বললেন – ‘আমি ছা-পোষা গেরস্ত লোক; সংসারের অনেকের প্রতিপালনের জন্য আমায় নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়, আমার সে অবসর কোথায় ?’ ঠাকুর বললেন – ‘তা একটু জপ করতে পারবে না ?’ নবগোপাল বললেন – ‘তারই বা অবসর কোথায় ? তখন ঠাকুর বললেন‚ ‘আমার নাম একটু একটু করতে পারবে তো ?’ নবকুমার বললেন – ‘তা খুব পারব।’ তখন ঠাকুর বললেন — ‘তা হলেই হবে — তোমাকে আর কিছু করতে হবে না।’
এ সময় ঠাকুরের পিছনে দাঁড়ানো রামলাল ভাবছিল — সকলেরই তো হল, আমার কি গাড়ু-গামছা বওয়া সার হল ? হঠাৎ ঠাকুর পিছন ফিরে তাকে বললেন — ‘কী রে রামলাল‚ অত ভাবছিস কেন ?’ এবারে তাকে সামনে দাঁড় করিয়ে নিজের গা থেকে চাদর খুলে ফেলে বললেন — ‘দেখ দিকিনি এবার।’ রামলাল বললেন — ‘আহা, সে যে কী রূপ, কী আলো, কী জ্যোতি ! সে আর কী বলব ?’
উপেন্দ্র মুখোপাধ্যায় অর্থ প্রার্থনা করায় তাকে ঠাকুর বললেন ‘তোর অর্থ হবে’। পরবর্তীতে তিনি কলকাতার একজন নামকরা ধনী ব্যক্তি হয়েছিলেন।
বৈকুণ্ঠ সান্যাল তাঁর কৃপা প্রার্থনা করলে ঠাকুর তাকে বললেন — ‘তোমার তো সব হয়ে গেছে।’ তখন বৈকুন্ঠ বললেন — ‘তা যাতে অল্পবিস্তর বুঝতে পারি তা করে দিন।’ ঠাকুর তখন তার বক্ষস্থল স্পর্শ করা মাত্র তার ভাবান্তর ঘটল। সে তখন চারদিকে শুধু ঠাকুরকে দেখতে লাগল। চিৎকার করে বলতে লাগল — ‘তোরা কে কোথায় আছিস — এই বেলা চলে আয়।’
গৃহী ভক্ত অতুল ও কিশোরী রায়কেও কৃপা করলেন। শেষে কে কোথায় বাদ পড়ে গেল খোঁজ করতে গিয়ে গিরিশচন্দ্র, রাঁধুনি গাঙ্গুলিকে রান্নাঘর থেকে ধরে আনলেন। ঠাকুর তাকেও কৃপা করলেন।
উপস্থিত ভক্তদের মধ্যে কেবল দুজনকে ঠাকুর ‘এখন নয়’ বলে কৃপা করলেন না বা স্পর্শ করলেন না। তারা খুবই দুঃখিত হয়েছিল। এঁদেরই একজন হরমোহন মিত্র। পরে ঠাকুর তাঁকে কৃপা করলে তাঁর যে অনুভূতি হয়েছিল তাতে তিনি ভ্রূ-যুগলের মধ্যে অনেক দেবদেবীর দর্শন পেয়েছিলেন। আর একজন প্রতাপ চন্দ্র হাজরা। ঠাকুর অবশ্য তাঁকে মৃত্যুকালে সশিষ্য দর্শন দিয়ে ধন্য করেছিলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের অকাতরে আশীর্বাদ দানের এই ঘটনাকে রামচন্দ্র দত্ত প্রমুখ গৃহী ভক্তেরা ‘কল্পতরু’ নামে চিহ্নিত করেন।
ঠাকুরের ত্যাগী সন্তানদের মতে ঠাকুর ছিলেন ‘নিত্য কল্পতরু’। তাঁর কাছে যা চাওয়া যায় তাই লাভ করা যায়। বৈরাগ্যবান যুবকদের অন্তর পূর্ণ করে রেখেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ। তাঁদের বৈরাগ্যদীপ্ত অন্তরে আর কোনও কিছু চাওয়ার ছিল না, এমনকি আধ্যাত্মিক অনুভূতিও না। পিতার ধন লাভ করবেন তাঁরা, তাঁরা যে শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবমন্দিরের অন্তরঙ্গ। শ্রীরামকৃষ্ণ দেহরূপ, তাই তাঁদের কাছে এই বিশেষ ঘটনা ছিল ‘আত্মপ্রকাশ পূর্বক অভয়দান’।
দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তদের উদ্দেশে বলতেন, ‘যাওয়ার সময় হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়ে যাব।’ অর্থাৎ নিজ স্বরূপকে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে দিয়ে যাব।
শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তদের মধ্যে রামচন্দ্র দত্ত আর গিরিশ ঘোষ শ্রীরামকৃষ্ণকে ‘অবতার’ বলে প্রচার করতেন। শ্রীরাম আর শ্রীকৃষ্ণের পর দুয়ের সম্মিলিত রূপ ‘শ্রীরামকৃষ্ণ’।
এইদিনে গিরিশ ঘোষ যখন বললেন কৃষ্ণ জীবনীকার ব্যাসদেব আর রামায়ণ রচয়িতা বাল্মীকির কথা, তখন শ্রীরামকৃষ্ণ নিজ স্বরূপকে তাঁদের কাছে স্বীকার করে নিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা করলেন এক মহান আশীর্বাদ। ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’।
চৈতন্যস্বরূপ মানব সত্তা আজ আর নিজ বৈশিষ্ট্য মনুষ্যত্ব থেকে দূরে চলে গিয়েছে। পশুর সঙ্গে তাদের যে পার্থক্য আছে তাই তারা ভুলেছে। মানুষের ‘মান’ সম্বন্ধে ‘হুঁশ’ আনার জন্য এই আশীর্বাদ। আধ্যাত্মিকতা, ঈশ্বর, সন্ন্যাস–সব পরের কথা। আগে মানুষ, আর তার সঙ্গে সেই মনুষ্যেত্বর চেতনা।
এই চৈতন্যের বাণীকে রূপায়িত করতে হবে নিজের জীবনে। চৈতন্যলাভের পথই প্রকৃত ধর্ম পালনের পথ, এই পথের কোনও নাম নেই, বিভেদ নেই, দ্বন্ধ নেই। ধর্মকে গোষ্ঠী থেকে বের করে ব্যক্তির উপরে স্থাপিত করলেন শ্রীরামকৃষ্ণ।
সেই নতুন চৈতন্যের পথই আমাদের লক্ষ্য হয়ে উঠুক, লাভ করুক বিশ্বজনীন এক রূপ। এই হল নতুন আন্দোলন, এই আন্দোলন বলে চলার কথা, মানুষ থেকে ভগবান হওয়ার যাত্রা, চেতনা লাভ করে চৈতন্য হওয়ার পথ। যে পথের সম্মুখে থাকবেন শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। নর হয়েও যিনি নরোত্তম।
.
ॐ স্থাপকায় চ ধর্মস্য সর্বধর্মস্বরূপিণে
অবতার বরিষ্ঠায় রামকৃষ্ণায় তে নমঃ॥
ধর্মের সংস্থাপক সর্বধর্মস্বরূপ, অবতারশ্রেষ্ঠ হে রামকৃষ্ণ, তোমাকে নমস্কার॥
.
(সংগৃহীত)