<Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research ="https://gmpg.org/xfn/11"> Sri Yoga Center Kunarpur – Vedic Yoga, Indology & Cultural Research Bengal - Sri Yoga Center Ashram's Blog - Page 7

হিন্দুধর্মে ঈশ্বর বা দেবী-মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়া হয় কেন?

Images (1) (4)

Images (1) (4)

 

ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দু সংস্কৃতিতে দেবী বা ঈশ্বরের মূর্তিকে জলে বিসর্জন একটি বহু প্রাচীন এবং গভীর অর্থবাহী আচার। এটি কেবল একটি ধর্মীয় নিয়ম নয়, বরং এর মধ্যে নিহিত রয়েছে দর্শন, প্রকৃতি-সচেতনতা ও মানবজীবনের গভীর শিক্ষা। এই প্রবন্ধে বিসর্জনের কারণ, তাৎপর্য ও তাৎক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হল।

সৃষ্টি ও লয়ের চক্রের প্রতিফলন

হিন্দু দর্শনে বিশ্বাস করা হয় যে এই জগৎ অনিত্য, অর্থাৎ এখানে যা সৃষ্টি হয়েছে তা একদিন ক্ষয় বা লয়ের মধ্যে মিলিয়ে যাবে। দেবীর মূর্তি সাধারণত নদীর মাটি, খড়, কাঠ ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। পূজা-অর্চনা শেষে সেই মূর্তি জলে বিসর্জনের মাধ্যমে আবার প্রকৃতির কোলে ফিরে যায়। এটি প্রকৃতির চক্র—সৃষ্টি, স্থিতি ও লয়কে প্রতিফলিত করে এবং মানুষকে মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের সব কিছুই ক্ষণস্থায়ী।

ঈশ্বর সর্বব্যাপী — মূর্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নন

হিন্দু ভাবধারায় ঈশ্বর কেবল মূর্তির মধ্যে আবদ্ধ নন, বরং সর্বত্র বিরাজমান। পূজার মাধ্যমে মানুষ ঈশ্বরের এক বিশেষ রূপের কাছে প্রার্থনা করে, আর বিসর্জনের মাধ্যমে বোঝায় যে ঈশ্বর আবার আমাদের চারপাশে, প্রকৃতির প্রতিটি অংশে মিশে গেছেন। এটি মানুষের মন থেকে ‘মূর্তিপূজা’ কে ‘ভাবপূজা’-তে রূপান্তরিত করে।

বৈরাগ্য ও অনাসক্তির শিক্ষা

পূজা বা উৎসবের সময় মানুষের মনে গভীর আসক্তি ও আবেগের জন্ম হয়। বিসর্জনের মাধ্যমে সেই আসক্তি থেকে মুক্ত থাকার শিক্ষা দেওয়া হয়। এ শিক্ষা হল জীবনের যেকোনো প্রিয় জিনিস বা মানুষকে সঠিক সময়ে ছেড়ে দিতে জানা এবং তাতেই জীবনের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার দিক

পুরনো নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিমা তৈরি হতো গঙ্গার মাটি, খড়, কাঠ ও প্রাকৃতিক রঙ দিয়ে; যা নদীতে মিলিয়ে আবার প্রকৃতিকে কোনও ক্ষতি করত না। এর মাধ্যমে প্রকৃতির উপাদান আবার প্রকৃতির মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়ার এক পরিবেশবান্ধব প্রথা গড়ে উঠেছিল। যদিও এখন রাসায়নিক রঙ ও প্লাস্টার অব প্যারিস ব্যবহারের কারণে পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তবুও প্রাচীন রীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা।

উৎসবের সমাপ্তি ও নতুন সূচনা

বিসর্জন উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নির্দেশ করে। এটি এক ধরণের মানসিক প্রস্তুতি, যেখানে মানুষ পূজার আনন্দ ও উদ্দীপনা শেষে আবার দৈনন্দিন জীবনে ফেরার প্রেরণা পায়। এই সমাপ্তির মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আগামী বছরের নতুন পূজার আশা ও অপেক্ষা।

দেবী বা ঈশ্বরের মূর্তিকে জলে বিসর্জন দেওয়ার মধ্যে কেবল একটিমাত্র আচার নয়, বরং রয়েছে গভীর দার্শনিক শিক্ষা, প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও মানব জীবনের এক মহৎ বার্তা। এটি শেখায়—সব সৃষ্টি একদিন লয়ে মিলে যায়, ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরন্তন। তাই বিসর্জন আমাদের মনে করায়—ত্যাগেই আছে শান্তি, আর অনাসক্তির মধ্যেই আছে জীবনের আসল সৌন্দর্য।

অঞ্জলি দেওয়া – শুধু ফুল নয়, আত্মসমর্পণের প্রতীক।

Images (1) (1)

Images (1) (1)

 

দুর্গাপূজো হোক বা অন্য যেকোনো পূজা – দেবীর চরণে অঞ্জলি দেওয়া আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ। অনেকেই ভাবেন, অঞ্জলি মানে হাতে ফুল নিয়ে প্রণাম করা বা মন্ত্রপাঠের অংশ। কিন্তু অঞ্জলি আসলে শুধুমাত্র একমুঠো ফুল নয়; এটি আমাদের মনের ভক্তি, বিনয় আর সর্বোচ্চ আত্মসমর্পণের প্রকাশ। এই রীতি যেমন দেখতে সুন্দর, তেমনি এর গভীরে লুকিয়ে আছে আত্মিক ও দার্শনিক তাৎপর্য।

 

🌸 অঞ্জলি শব্দের অর্থ

‘অঞ্জলি’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত “অঞ্জ্” ধাতু থেকে, যার অর্থ হল “লেপন” বা “আবরণ”। পরে এর অর্থ দাঁড়ায় – দু’হাত জোড় করে তৈরি হওয়া এক ধরনের পাত্র বা “হস্তপুট”, যেখানে আমরা কিছু অ捧ি করে নিবেদন করি। তাই অঞ্জলি আসলে শুধু হাতের মুঠোয় রাখা ফুল নয়, সেই হাতের আকারে তৈরি পবিত্র পাত্রে নিজের মন, প্রাণ ও চেতনা নিবেদন করা।

 

🪷 শুধু ফুল নয়, আত্মসমর্পণ

অঞ্জলি দেবতাকে দেওয়া হয়, কিন্তু দেবতার জন্য দেবতাকে কিছু দেওয়ার আসলে প্রয়োজন নেই। আসল অর্থ হল – আমরা নিজের অহংকার, লোভ, ক্রোধ, হিংসা, দ্বন্দ্ব এইসব ত্যাগ করে ঈশ্বরের চরণে আত্মসমর্পণ করছি। ফুল এখানে প্রতীক মাত্র; আসল উপহার হল অন্তরের পবিত্রতা আর মনোসংযম।

ত্রিবার অঞ্জলি: এর আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা

দুর্গাপূজোর অঞ্জলি তিনবার উচ্চারিত মন্ত্রে দেওয়া হয়। এই তিনবার অঞ্জলি দেবীর কাছে শরীর, মন ও বাক্যের দ্বারা সমস্ত পাপক্ষয় ও শুদ্ধতার প্রার্থনা – যাতে আমরা শুধু বাহ্যিক নয়, অন্তরেরও শুদ্ধি অর্জন করতে পারি।

– প্রথম অঞ্জলি: শরীরের অপবিত্রতা ত্যাগের সংকল্প
– দ্বিতীয় অঞ্জলি: মনের অশুদ্ধতা দূর করার প্রার্থনা
– তৃতীয় অঞ্জলি: বাক্যের দোষ ও কুকথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রার্থনা

সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিক

অঞ্জলি সাধারণত একসাথে অনেক মানুষ মিলে দেওয়া হয়। এতে তৈরি হয় এক ধরনের সমষ্টিগত ভক্তি আর মানসিক সংযোগ। সেই সময় মানুষ একে অপরকে পাশে পায়, সমাজে একাত্মতার অনুভূতি জন্মায়। অঞ্জলি দিতে গিয়ে মাথা নত করা মানে নিজের ইগো বা অহংকার ত্যাগ করার শিক্ষা।

 

অঞ্জলি কেবল ফুল নয়, আত্মসমর্পণের মাধ্যম। দেবীর চরণে অঞ্জলি দিয়ে আমরা যেন বলি: “মা, যা কিছু ত্রুটি আমার মধ্যে আছে, তা তোমার হাতে সঁপে দিলাম। আমাকে সত্যিকারের ভালো মানুষ হতে শেখাও।” এই অঞ্জলিই আমাদের শিখিয়ে দেয় – ঈশ্বরের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার আমাদের পবিত্র মন ও নিঃস্বার্থ আত্মা।

কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত?

Sleep

Sleep

 

ঘুম আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু শুধু ঘুমানোই যথেষ্ট নয়; সঠিক দিক বা অবস্থানও আমাদের শরীর ও মনে সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে, মাথা কোন দিকে রেখে ঘুমানো উচিত – এ বিষয়ে প্রাচীন বাস্তুশাস্ত্র, আয়ুর্বেদ এবং আধুনিক বিজ্ঞান তিনটিই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে।

 

বাস্তুশাস্ত্র ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাস অনুযায়ী

প্রাচীন ভারতে বাস্তুশাস্ত্র ও যোগশাস্ত্রে বলা হয়েছে, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে আমাদের শরীরের নিজস্ব চৌম্বক ক্ষেত্রের মিল রাখা উচিত। এজন্য মাথা রাখার দিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়:

দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

বাস্তুশাস্ত্র মতে এটি সবচেয়ে শুভ।

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের কারণে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে।

এটি হৃদযন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে, ঘুমের গুণমানও উন্নত হয়।

পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

এটি বিশেষ করে শিক্ষার্থী, গবেষক ও মানসিক কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য ভালো।

বলা হয়, পূর্বদিকে মাথা রেখে ঘুমালে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক স্থিরতা আসে।

পূর্বদিক হলো সূর্যের উদয়ের দিক, যা জীবনীশক্তির প্রতীক।

উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত নয়

বাস্তুশাস্ত্র মতে এটি অশুভ।

শরীরের চৌম্বক ক্ষেত্র এবং পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বিপরীতমুখী হয়ে যায়।

ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, মাথাব্যথা ও দুশ্চিন্তা হতে পারে, এমনকি ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটতে পারে।

পশ্চিম দিকে মাথা রেখে ঘুমানো

এটি ততটা অশুভ নয়, তবে খুব ভালোও নয়।

কিছু মতে, এটি অলসতা ও মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।

 

আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী

বিজ্ঞানীরা যদিও মাথা কোন দিকে থাকবে তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা করেননি, তবু কিছু পর্যবেক্ষণ আছে:

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাব আমাদের দেহের উপর সামান্য হলেও পড়তে পারে।

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, উত্তরদিকে মাথা রেখে ঘুমালে রক্তচাপ বা হৃৎস্পন্দনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।

বাম পাশে কাত হয়ে ঘুমানো (Left lateral position):

এটি পেটের জন্য ভালো, হজম শক্তি বাড়ায়।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স কমায়।

হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমায়।

গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও এই অবস্থান উপকারী।

 

সংক্ষেপে: কোন দিকে মাথা রেখে ঘুমানো উচিত?

দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে ঘুমানো সবচেয়ে ভালো।

পূর্বদিকে মাথা রেখে ঘুমানোও ভালো, বিশেষ করে পড়াশোনা বা মানসিক কাজে।

উত্তর দিকে মাথা রাখা উচিত নয়।

শরীর বাঁ দিকে কাত হয়ে ঘুমানো স্বাস্থ্যকর।

 

শুধু পর্যাপ্ত ঘুম নয়, সঠিক ঘুমের ভঙ্গি ও দিকও আমাদের জীবনের মান উন্নত করে। প্রাচীন জ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞানের সমন্বয় আমাদের শেখায়:
দক্ষিণ বা পূর্ব দিকে মাথা রেখে ঘুমানোই সবচেয়ে নিরাপদ ও উপকারী।
এতে শুধু আমাদের শরীর নয়, মনও প্রশান্তি ও শক্তি পায়।