|| অঙ্কন কথা || পর্ব – ২

এই পর্ব আমাদের Intermediate চিত্রশিল্পী বা শিক্ষার্থীদের জন্য যারা প্যাস্টেল, ওয়াটার কালারের সাথে পরিচিত। আমরা যখন আঁকা শিখি, তখন আমাদের বাড়ির কাছাকাছি যে সব শিক্ষকরা আছেন তারা বিভিন্ন ড্রয়িং বই থেকে বিভিন্ন সিনারী আঁকতে দেন। আমরা সেটা থেকেই কপি করে থাকি। এটা শুরুতে ড্রয়িং শেখার জন্য ঠিক আছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিনিয়ত কপি করা একটা ভুল পদ্ধতি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হয়। যে শিল্পীর বইটা থেকে আমরা কপি করছি তার সিনারী বা কম্পোজিশন, দেখার দৃষ্টিভঙ্গি, কালার, কন্সেপ্ট আলাদা। সেই শিল্পীও একটা প্রকৃতির কোন দৃশ্যকে সেখানে বসে বা তার ফটোগ্রাফী করে কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে তিনি ওই প্রকৃতি কে তার চোখে তিনি যেভাবে দেখছেন সেভাবেই একেছেন। তাই আপনি দেখবেন বিভিন্ন বই এ বিভিন্ন শিল্পীর কাজ ও ড্রয়িং ভিন্ন, অতএব ওটা ওনাদের একজনের নিজস্ব শৈলী। সেটা দেখে কপি করলে আমরা নিজে কিছু শিখতে পারব না। কারণ তিনি সেখানে তার ড্রয়িং তার কালার তিনি করে সবকিছু করে দিয়েছেন। সেটা দেখে আঁকলে আমরা তাকে কপি করছি, তার কাজের স্টাইল আমারা অভ্যাস করে ফেলেছি। ফলে আমরা আমাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলব এবং আমারা নতুন কিছু ভাবতে বা দেখতে পারবো না। ছবি আঁকা শেখার জন্য আমরা বিভিন্ন বড় বড় শিল্পীর কাজ গাইড হিসাবে দেখতে পারি। কিন্ত সেটা থেকে সবসময় হুবুহ কপি করার চেষ্টা করতে পারি না। হ্যা হয়ত কোন সময় একটু তার কাজ দেখে করতে ইচ্ছে করছে সেক্ষত্রে আপনি করতেই পারেন, তবে প্রতিনিয়ত না। সে ক্ষেত্রে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হল আমরা কোন বাইরের দৃশ্য দেখে সেখানে বসে বা ফটোগ্রাফি করে সেটা দেখে ড্রয়িং ও কালার করতে পারি। এরফলে যে কাজটা তৈরি হবে সেটা হবে সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব শৈলী। ফলে ধীরে ধীরে আমরা নিজেই প্রকৃতির রঙ, তার ড্রইয়িং এর সাথে পরিচিত হব। তার ফলে যেটা সৃষ্টি হবে সেটা সম্পূর্ন আপনার নিজস্ব একটা কাজ। একটা ছবি। এবং সেটা হবে অদ্বিতীয়।

Writing by Bachchu Chanda (Masters of Fine Art, kolkata)n

[Content subject to copyright.]

 

**প্রকৃতির কি কি জিনিস আমরা কিভাবে আঁকব সেটা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।

 

।। অঙ্কন কথা ।। – পর্ব -১

ছবি আঁকা মানে সর্বদা এই নয় যে একটা খুব পরিপাটি সুন্দর জিনিসই আঁকতে হবে। অনেকেই মনে করেন পেইন্টিং মনে সুন্দর দৃশ্য, সুন্দর মুখ। সেটা সবসময় নাও হতে পারে। আপনি পৃথিবীটাকে কিভাবে দেখছেন, তার ভিত্তিতেও কাজে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রাথমিক পর্বে আমরা সকলেই সুন্দর ভাবে ড্রয়িং, ছবি শিখি বা করি। আমি শুধু আর্ট কলেজের স্টুডেন্টদের কথা বলছি না যারা এখনও স্কুল জীবনে আছেন এবং ছবি আঁকেন তাদেরও বলছি। ছবি মানে একটা শিল্প একটা সৃষ্টি। ছবির মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারি, একটা নতুন সৃষ্টি করতে পারি, যেটা হবে সবার থেকে আলাদা। তাই আমি নিজে নতুন কি সৃষ্টি করলাম সেটাই সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। আমরা এতদিন যাবৎ যে যে বিষয় বা বস্তু এঁকেছি বা শিখেছি সেই সব অবজেক্ট এর সাথে মনের ভাব একত্রিত করে নতুন কিছু একটা সৃষ্টি করা, সেখানে বিভিন্ন শিল্পীর বিষয় ও চিন্তা ভাবনা ভিন্ন হবে। অর্থাৎ কবি বা সাহিত্যিক তাঁর জীবনের গল্প বা বাস্তবিক জীবনের প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ, আনন্দ, দুঃখ, সবকিছু তার লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন, ঠিক সেই ভাবেই ছবিতেও আমরা আমাদের ভাব প্রকাশ করতে পারি। সেক্ষেত্রে প্রতিটি শিল্পীর বিষয়, ছবির লাইন, রং, সারফেস আলাদা আলাদা হতে পারে। অর্থাৎ আমি আমার কাজের মধ্যে যেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটার ড্রয়িং, রং, টেক্সচার কিরকম করলে ভালো হবে সেটা আপনার বিষয় ও চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভর করবে। এমনকি আপনার পেন্সিল ড্রয়িং, প্যাস্টেল, ওয়াটার কালার এর কাজেও নিজস্ব শৈলী আনতে পারেন, শুধুমাত্র একটু অভ্যাসের দ্বারা। আপনি বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীর কাজও দেখতে পারেন, এবং তাদের কাজের বিষয় যদি আপনার চিন্তাভাবনার সাথে মেলে, তার কাজ থেকে আপনি অনুপ্রাণিত হতে পারেন এবং আপনি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন। এরপর আপনি যেটা সৃষ্টি করবেন সেটা সম্পূর্ন আপনার নিজস্ব আর তখনই সেটা একটা প্রকৃত ছবি হয়ে ওঠবে।

।।পড়ার জন্য  অসংখ্য ধন্যবাদ।।

[Content subject to copyright.]

(Writer – Bachchu Chanda)

Masters of Fine Art, Kolkata