🌺🌺 দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব কাহিনী🌺🌺

আজ দেবী ছিন্নমস্তার আবির্ভাব তিথি।

 

‘নারদপঞ্চরাত্র’ শাস্ত্র মতে ছিন্নমস্তা দেবীর আবির্ভাবের একটি কাহিনী আছে।

 

একদা দেবী পার্বতী তাঁর দুই সহচরী জয়া ও বিজয়াকে নিয়ে মন্দাকিনীতে স্নান করতে গিয়েছিলেন। স্নানান্তে জয়া ও বিজয়ার ক্ষুধার উদ্রেগ হওয়ায় দেবী পার্বতীর কাছে আহার চাইলেন। দেবী বললেন – কৈলাসে গিয়ে আহার প্রদান করবো। কিন্তু বারবার তারা ক্ষুধার কথা জানিয়ে প্রার্থনা করলে এই জয়া-বিজয়া ডাকিনী-বর্ণিনী রূপে মায়ের দুপাশ থেকে খাদ্য প্রার্থনা করলে করুণাময়ী জননী তাদের এই প্রার্থনা শুনে নিজের বাম নখাগ্র দিয়ে নিজেরই মস্তক ছিন্ন করে সেটি নিজের বামকরতলে ধারণ করলেন। ছিন্ন মস্তক ও কণ্ঠ থেকে ত্রিধারায় রক্তস্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। বাম ও দক্ষিণ দিক থেকে নির্গত দুটি ধারা দুই সহচরী জয়া ও বিজয়ার ভয়ঙ্করী মূর্তি ডাকিনী ও বর্ণিনীর ঊর্ধ্বমুখ লেলিহান জিহ্বায় সংযোজিত হল। আর মধ্যধারাটি নিজ ছিন্ন মুখে পড়তে লাগল। এই ভাবে নিজ মুণ্ড ছিন্ন করে সহচরীদের পরিতৃপ্ত করেছিলেন বলে তাঁর নাম হল ছিন্নমস্তা।

 

দেবীর নিজ রুধির ধারা এভাবে গ্রহণ করতে দেখে ত্রিলোক হলেন স্তম্ভিত। দেবতারাও বিকট মূর্তি দেখে ভগবতীকে প্রণাম জানালেন। সন্তানদের ক্ষুধা তৃষ্ণা দূর করতে তিনি স্বেচ্ছায় সানন্দে নিজ মুণ্ড ছিন্ন করে নিজ রক্তে তাদের পরিতৃপ্ত করেন। সহচরীগণ তৃপ্ত হলে দেবী কৈলাসে ফিরে গেলেন। পুনরায় তিনি হলেন শিব জায়া গৌরী।

 

দশমহাবিদ‍্যা দেবীদের মধ্যে ষষ্ঠ মহাবিদ্যা দেবী হলেন ছিন্নমস্তা। ছিন্নমস্তাকে উগ্র মহাবিদ্যাও বলা হয়। ‘দশমহাবিদ্যা’র ভয়ঙ্করী রূপের প্রকাশ হয়েছে ‘দেবী ছিন্নমস্তা’য়।

 

ছিন্নমস্তা দেবী প্রত্যালীঢ় ভঙ্গীতে দন্ডায়মানা,গলায় তার নাগ যজ্ঞের উপবীত। সর্বদা ছিন্ন মস্তক ও খড়্গে ভূষিতা, দিগবসনা, নিজ কবন্ধের দ্বারা সানন্দে অমৃতকল্প রক্তধারা পানরতা, সর্পের মুকুট মনি দ্বারা ভূষিতা, ত্রিনয়না, বক্ষদেশ পদ্মে ভূষিতা, বিপরীত বিহারে রতা এবং দেবীর গাত্র বর্ণ জবা ফুলের ন্যায়। পীনোন্নত পয়োধরা, সদা ষোড়শ বর্ষীয়া। তাঁর একদিকে মুক্তকেশী লোহিতসৌম্যা, দিগম্বরী বর্ণিনী ও অন্যদিকে প্রলয় অগ্নির মতো ডাকিনী শক্তি। এঁরা দেবীর ছিন্ন কন্ঠের রক্তপানে রতা। দেবী ছিন্নমস্তার পদতলে সকাম রত মদন ও রতি দেবী থাকেন।

 

ছিন্নমস্তা দেবীর এই গুপ্ত রূপে বহু তত্ত্বকথা লুক্কায়িত- যা কেবল গুরু পরম্পরাতে গুপ্ত। ছিন্নমস্তা দেবী প্রত্যালীঢ় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পদতলে সকামরত মদন ও রতিকে দলন করেন। এই রূপ ব্রহ্মচর্য বৈরাগ্য মূর্তি। ছিন্নমস্তা দেবীকে ব্রহ্মচর্যস্বরূপিণী দেবী বলা হয়। এই দেবীর পূজা সাধারণ কেও করতে পারেন না। কেবল তন্ত্র সাধকেরা তন্ত্র মতে দেবীর পূজা করেন। বিভিন্ন দেবী মন্দিরের দশমহাবিদ্যার সঙ্গে তাঁর পূজা প্রচলিত। তবে গৃহস্থবাড়িতে তাঁর পূজা করা হয় না। কেবলমাত্র তান্ত্রিক, যোগী ও সর্বত্যাগীগণ বীরাচারী তান্ত্রিক মতে তাঁর পূজা করে থাকেন।

 

ছিন্নমস্তার শতনাম ও সহস্রনাম স্তোত্রে দেবীর ভীষণা প্রকৃতি ও ক্রোধের উল্লেখ আছে। এই সকল নামে তাঁকে প্রেতসেবিতা ও রক্তপানকারিণী রূপে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি নররক্ত ও নরমাংসে প্রীতা হন। দেহরোম, মাংস ও ভয়ংকর মন্ত্রে তাঁর পূজা করা হয়।

 

তন্ত্রসাধকগণ সিদ্ধি বা অলৌকিক ক্ষমতা লাভের জন্য ছিন্নমস্তার পূজা করেন। ছিন্নমস্তার মন্ত্র শ্রীঁ ক্লীঁ হ্রীঁ ঐঁ বজ্রবৈরোচনীয়ে হুঁ হুঁ ফট্ স্বাহা নারী বশীকরণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তাঁর মন্ত্র কাউকে মন্ত্রচালিত করা বা কারোর ক্ষতি করার জন্যও ব্যবহার করা হয়। কাব্যশক্তি, সুস্থতা, শত্রুবিজয়, বিঘ্নোপসারণ, রাজপ্রসাদ লাভ, অন্যকে আকর্ষণ, শত্রুরাজ্য জয় ও মোক্ষলাভ – মহাবিদ্যা আরাধনার এই সকল উদ্দেশ্যেও ছিন্নমস্তার পূজা করা হয়।

 

‘তন্ত্রশাস্ত্র’ অনুসারে অর্ধরাত্রে দেবীর স্বরূপ কল্পনা করে নিষ্ঠার সঙ্গে ‘ছিন্নমস্তার ধ্যান’ করলে সাধক বা সাধিকা ‘সরস্বতী সিদ্ধ’ হন। ‘শত্রুবিজয়’, ‘রোগমুক্তি’, ‘রাজ্যপ্রাপ্তি’ এবং ‘দুর্লভ মোক্ষপ্রাপ্তি’র জন্য ‘ছিন্নমস্তার ধ্যান ও পূজা’ অত্যন্ত ফলদায়ক।

 

মা ছিন্নমস্তার মন্ত্র —

 

শ্রীঁ ক্লীঁ হ্রীঁ ঐঁ বজ্রবৈরোচনীয়ে হুঁ হুঁ ফট্ স্বাহা।

 

আজ আবির্ভাব তিথিতে মা ছিন্নমস্তা সবার মঙ্গল করুন।

 

.

 

জয় মা  সংগৃহিত  (published by SHRUTI ADHYA KUNDU MARKETING OFFICER OF SYCN ) 

 

.

 

 

🌺🌺রটন্তী কালী🌺 🌺

[1/30, 8:54 PM] +91 94334 54935: 🌺 *শুভ রটন্তী কালীপূজা তিথি।*

৩০শে জানুয়ারি, ২০২২🌺

———————————————–

*চান্দ্রমাস অনুযায়ী রটন্তী কালী পূজার তিথি টি হচ্ছে পৌষ কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি।*

এই তিথিতেই আবির্ভাব মা ছিন্নমস্তার এবং বগলামুখী মায়েরও।

 

বঙ্গাব্দ বা বাংলা সাল অনুযায়ী পৌষ কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিটি পড়ে মাঘ মাসে এবং ইংরেজী সাল বা খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী এই তিথিটি পড়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে।

🌺🌺🌺🌺🌺🌺🌺

এবার এই তিথিটি অর্থাৎ রটন্তী কালীপূজার তিথি পড়েছে আজ: ৩০শে জানুয়ারি, ২০২২; বাংলা তারিখ :১৬ মাঘ ১৪২৮। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী চতুর্দশী শুরু হবে আজ সন্ধ্যা ৫.৩০ থেকে, থাকবে ৩১ জানুয়ারি দুপুর ২.১৯পর্যন্ত।

 

*রটন্তী* শব্দটি এসেছে “রটনা” শব্দ থেকে। রটনা শব্দের অর্থ প্রচার হওয়া। আজকের দিনে দেবী কালিকার মহিমা চতুর্দিকে রটে যায়। অর্থাৎ মায়ের কৃপাশিষ চতুর্দিকে বর্ষিত হয়- তাই এই তিথি রটন্তী তিথি নামে কথিত । মুক্তকেশী মায়ের মহিমা এই তিথিতেই সর্ব স্তরে রটিত হয়ে পড়ে ।

আজ *দেবী ছিন্নমস্তার* ও আবির্ভাব তিথি। ছিন্নমস্তা দেবী দশমহাবিদ্যার একজন। দেবী সতী পূর্বে পিতার গৃহে যেতে গিয়ে ভগবান শিবের কাছে তীব্র বাধা পেয়ে দশমহাবিদ্যা রূপ ধরেছিলেন। ছিন্নমস্তা সেই মহাবিদ্যাদের একজন। এই দেবী নিজ মুণ্ড নিজ হস্তে ছিন্ন করেছেন। বাম হস্তে দেবী নিজেই নিজের মুণ্ড ধারণ করেছেন। ছিন্ন স্কন্ধ দিয়ে তিনটি রক্তধারা দেবীর মুখে ও দেবীর সহচরী ডাকিনী ও বর্ণিনীর মুখে পতিত হচ্ছে। বলা হয় দেবীর দুই সহচরী দেবীর কাছে আহার প্রার্থনা করলে দেবী এই রূপে এসে সহচরীদের ক্ষুধা নিবৃত্তি করেছেন। ভয়ংকরী দেবীর এই রূপ ব্রহ্মচর্যের প্রতীক রূপে পূজিতা হয়।

 

আবার আজ *মা বগলার* ও আবির্ভাব তিথি । মা বগলামুখী শত্রুনাশিনী দেবী রূপে পূজিতা হন। ভগবান বিষ্ণু প্রলয়ঝড়কে স্তম্ভন করে বিশ্ব রক্ষার নিমিত্ত হরিদ্রা সরোবরে এই দেবীর ধ্যান করেন। এই দেবী দ্বিভুজা আবার চতুর্ভুজা রূপা । ইনি শত্রুর জিহ্বা আকর্ষণ করে গদা বা মুগুর দ্বারা শত্রুকে দমন করেন।

 

কালী মুক্তকেশী । মায়ের কেশরাশি আলুলায়িত, সেই কেশরাশিতে কোনো বিন্যাস নেই । দেবী নির্বিকারা বিগলিত-চিকুরা । অন্যদিকে এই মুক্তকেশ মায়াপাশের প্রতীক । তিনি নিজে মায়ার অতীতা হয়েও জীবকে মায়াপাশে বদ্ধ করেন । শ্রীশ্রীচণ্ডীর শুরুতে মহর্ষি মেধা এই কথাই বুঝিয়েছেন রাজা সুরথ ও সমাধি বৈশ্যকে। মুক্তকেশী মায়ের এই মায়াপাশে পণ্ডিতদেরও বুদ্ধি ভ্রমিত হয় । আবার তিনি প্রসন্না হলে মুক্তি প্রদান করেন । মুক্তকেশী, এলোকেশী মায়ের কাছে প্রার্থনা জানিয়ে সাধক রামপ্রসাদ সেন তাই গান রচনা করেছেন- “মুক্ত কর মা মুক্তকেশী/ ভবে যন্ত্রনা পাই দিবানিশি।”

মুক্তকেশী মা প্রসন্না হয়ে জীবকে মুক্তি প্রদান করেন। এই প্রসঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণদেব, কেশবচন্দ্রকে বলেছিলেন- “ বন্ধন আর মুক্তি দুয়ের কর্তাই তিনি । তাঁর মায়াতে সংসারী জীব কামিনী কাঞ্চনে বদ্ধ, আবার তাঁর দয়া হলেই মুক্ত, তিনি ‘ভববন্ধনের বন্ধনকারিণী তারিণী’… তিনি লীলাময়ী। এ সংসার তাঁর লীলা, তিনি ইচ্ছাময়ী, আনন্দময়ী।”🌺🙏🏻🌺🙏🏻🌺🙏🏻

সংগৃহীত

[1/30, 8:54 PM] +91 94334 54935: *আজ রটন্তী কালীপুজো!*

দক্ষিণেশ্বরে রটন্তী কালীপুজোর মাহাত্ম্য অনেক, জানুন .অজানা গল্প!**

[ কিছু কিছু পুরনো কাহিনী, পুরনো খবর, পুরনো লেখা—- কখনো পুরনো হয় না। সেরকম একটি অতিপুরনো- চিরনতুন- কাহিনী সম্বলিত পুরনো খবর এখানে পরিবেশিত হল।]

 

 

সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা:

ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ

Last Updated: 09 Feb 2021 02:24 PM (IST)

 

*কথিত আছে* , শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বলেছিলেন, ‘‘রটন্তী কালীপুজোর ভোরে দেখলাম দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ দেবতারা নেমে এসেছেন স্নান করতে।

 

 

দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে সারাবছরে তিনটে কালীপুজো খুব বড় করে পালন করা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালী পুজো। কার্তিক মাসে দীপান্বিতা কালীপুজো। আর তৃতীয়টি মাঘ মাসে রটন্তী কালীপুজো। সারা বছরের প্রতিটি অমাবস্যায় বিভিন্ন কালীপুজো হলেও একমাত্র এই রটন্তী কালী পুজো হয় চতুর্দশী তিথিতে। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে রটন্তী কালীপুজো খুব ধুমধাম করে পালন করা হয়। মন্দিরে যেমন পুজো হয় তেমনি দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার ঘাটে বহু পুণ্যার্থী এইদিন স্নান করতে আসেন।

 

কথিত আছে, শ্রীরামকৃষ্ণদেব একবার বলেছিলেন, ‘‘রটন্তী কালীপুজোর ভোরে দেখলাম দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গায় স্বর্গ দেবতারা নেমে এসেছেন স্নান করতে।’’ সেই কারণে আজও বহু মানুষ দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার তীরে রটন্তীর ভোরে পুণ্যস্নান করতে আসেন। সমস্ত কালীপুজো অমাবস্যা তিথিতে হলেও রটন্তী কালীপুজো চতুর্দশী তিথিতে হওয়ার পিছনে একটা পৌরাণিক গল্প রয়েছে। ‘রটন্তী’ শব্দের মধ্যে রয়েছে ‘রটে’ যাওয়া কথাটি। রটে যাওয়া অর্থাৎ মুখে মুখে প্রচারিত হওয়া। কিন্তু কি রটেছিল সেটা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে রাধা কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনীতে।

 

 

কথিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি যখন বেজে ওঠে শ্রীরাধা আর সংসারে মন দিতে পারেন না। সংসার-লোকলাজ সবকিছু ত্যাগ করে তিনি ছুটে যান শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীরাধার শাশুড়ি এবং ননদ জটিলা এবং কুটিলা তাঁরা এই ঘটনার সাক্ষী থেকেছেন বহুবার কিন্তু কখনই শ্রীরাধার স্বামী আয়ান ঘোষ কে তা বিশ্বাস করাতে পারেননি। মাঘ মাসের ঠান্ডা তার ওপর কৃষ্ণাচতুর্দশী হওয়ায় রাতটি ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। এমন সময়ে কৃষ্ণের বাঁশি বেজে ওঠে আর সেই বাঁশির আওয়াজ শুনে শ্রীরাধিকা বাড়ি ছাড়েন। হাতেনাতে ধরার জন্য তাঁর পিছু নেন জটিলা- কুটিলা। তাঁরা কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে শ্রীরাধার মিলিত হওয়ার দৃশ্য চাক্ষুষ করে দ্রুত বাড়ি ফিরে আয়ানঘোষ কে টানতে টানতে নিয়ে যান কুঞ্জবনে। উদ্দেশ্য আয়ানকে বিশ্বাস করাতেই হবে শ্রীরাধিকার এই গোপন প্রেমের কাহিনী। আয়ান ঘোষ ছিলেন শক্তির উপাসক, কালীর পূজারী। এদিকে শ্রীরাধিকা ভয় পেয়েছেন কী করবেন তিনি। এবার শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে আশ্বস্ত করলেন। আয়ান ঘোষ কুঞ্জবনে পৌঁছে দেখলেন তাঁর আরাধ্যা মা কালী গাছের তলায় বসে রয়েছেন আর নিজের কোলে তাঁর পা টি রেখে সেবা করছেন শ্রীরাধিকা। দেখে আপ্লুত হলেন আয়ান। তাঁর সাক্ষাৎ কালী দর্শন হল।

 

 

তিনি স্বচক্ষে দেখলেন যে কালীর সাধনা তিনি এতদিন ধরে করে এসেছেন, কী অনায়াসে শ্রীরাধিকা তাঁর পদসেবা করছেন। আর এই বার্তা আয়ান ঘোষ এবার ছড়িয়ে দিলেন দিকে দিকে। এই কথাটাই রটে গেল যে তিনি কালীর দর্শন পেয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণও এর মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন কৃষ্ণ এবং কালী অভেদ।

মাঘ মাসের কৃষ্ণ চতুর্দশী তিথিতে কালীর দর্শন পাওয়ায় ওইদিন বিশেষভাবে কালীপুজোর প্রচলন হল। আর তার নাম হল রটন্তী কালীপুজো। শাক্তদের এই বিশেষ দিন শ্রীকৃষ্ণের জীবনের সঙ্গে জুড়ে যাওয়ায় বৈষ্ণবদের কাছেও এটি একটি বিশেষ দিন। আবার এই চতুর্দশী তিথিটি জুড়ে রয়েছে মহাদেবের সঙ্গে। তাই শৈবদের কাছেও এটি একটি বিশেষ দিন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরেও একইসঙ্গে পুজো হবে মা ভবতারিণী, রাধাকৃষ্ণ এবং মহাদেবের।

সংগৃহিত

Published by Shruti Adhya Kundu marketing officer of SYCN.

 

আদিশক্তি

ধূমাবতী —

ধূমাবতী দশমহাবিদ্যার সপ্তম মহাবিদ্যা। শাস্ত্রে অক্ষয় তৃতীয়ার রাত্রিকে দারুণরাত্রি বলা হয় এবং মহাবিদ্যা ধূমাবতীর আবির্ভাবতিথি রূপে গণ্য করা হয়।

মা ধূমাবতী কেতুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী। নিষ্ঠাপূর্বক সাধনায় তিনি বিপুল সুফলদায়িনী। মা ধূমাবতীর কৃপালাভ করতে পারলে সাধক সফলতার শিখরে পৌঁছে যায়।

দশমহাবিদ‍্যা দেবীদের মধ্যে সপ্তমরূপ হলো মা ধূমাবতী। আদ‍্যাশক্তির এই রূপের নেপথ্যেও আছে হরগৌরীর দাম্পত‍্যকলহ।

মহাদেব আপনভোলা। তিনি সংসারযাপন করেন অথচ সংসারের কর্মে তার অন‍্যমনস্কতা প্রকট। সংসারের কোনো খেয়াল তার নেই। সে অনন্ত ধ‍্যানে মগ্ন। এদিকে কৈলাসের রন্ধনশালায় যে খাদ‍্যসংকট দেখা দিয়েছে, তা তার দৃষ্টিগোচর হয়নি। মহাদেবের এই নিয়ে কিছুমাত্র ভাবনাও নেই কারণ তিনি জানেন পার্বতী যে অন্নপূর্ণা, তার হেঁশেল শূণ্য হতে পারেনা। কিন্তু পার্বতী যে মহামায়াও, তা তিনি বিস্মৃত হয়েছেন।

পার্বতী সে বিস্মৃতির প্রতিকার চাইলেন মনে মনে। মহাদেবী বারংবার মহাদেব কে খাদ‍্য আনয়নের অনুরোধ জানান। বারংবার স্বামীকে তার ক্ষুধাগ্নি নির্বাপনের জন্য বলতে লাগলেন। কিন্তু মহেশ্বর তার অনুরোধ কে আমল দিলেননা। তিনি অবিরত থাকলেন তার ধ‍্যানে।

এতো অনুরোধের পরেও স্বামী তার কথায় কর্ণপাত না করায় দেবী ক্রোধান্বিতা হয়ে উঠলেন। দেবীর শরীরের আকৃতি বর্ধিত হতে থাকলো এবং একসময় তা গগনচুম্বী হলো। অতঃপর দেবী ধ‍্যানমগ্ন মহাদেবকে তার বৃহৎ অলক্তচর্চিত অঞ্জলিপুটে ধারণ করলেন এবং স্বয়ং মহাদেবকে ভক্ষণ করলেন।

তৎক্ষণাৎ পার্বতীর বদ্ধবেণী উন্মুক্ত হয়ে তিনি হলেন আলুলায়িতকুন্তলা। পরনের রক্তবস্ত্র বদলে গেল সাদাকাপড়ে। আভরণের জাজ্জ্বল‍্যতা রূপান্তরিত হলো মলিনতায়। পরমতেজস্বী মহাদেবকে ভক্ষণ করার জন্য দেবীর গাত্র থেকে নির্গত হতে থাকলো ধূমরাশি। দেবী হয়ে উঠলেন ধূম্রবর্ণা ধূমাবতী। দেবীর ছায়া সমগ্র চরাচরে এসে পরলো। চতুর্দিক অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেল।

বিশ্বচরাচর কম্পিত হয়ে উঠলো এই কান্ডে। ব্রহ্মাণ্ড স্থির হয়ে গেল। মহাকালের অস্তিত্ব নেই, তাই কাল অর্থাৎ সময় রোহিত হয়ে গেল।

এমতাবস্থায় ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু এলেন দেবীর পাদদেশে এবং করুণ মিনতি জ্ঞাপন করতে থাকলেন, যাতে তিনি পূনরায় পূনর্রূপে প্রত‍্যাবর্তন করেন। ত্রিদেব এবং মহামায়া কালচক্রের ঊর্ধ্বে অবস্থান করেন। সময় স্থবির হয়ে গেলেও এনারা তার অধীনস্থ নন।

সময়ের তিনটি পর্যায় — অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সময় থমকে গেলে এই তিনটি পর্যায়ের চলনশক্তি লোপ পায়। আবার মহাদেব এবং মহাদেবীর মিলন ছাড়া ঐ চলনশক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করাও অসম্ভব। তাই নিজকর্মে অনুতপ্ত ধূমাবতী ধ‍্যানমগ্না হলেন।

মহাদেবকে ভক্ষণ করা যতোটা প্রাঞ্জল ছিল, তাকে জঠরমুক্ত করা তার কাছে ততোটা প্রাঞ্জল নয়। দেবী ধ‍্যানযোগে মহাদেবেরই স্মরণাপন্ন হলেন। মহাদেবের কাছে ধ‍্যানযোগে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন দেবী।

ধূমাবতীর জহরস্থিত মহাদেব, ধূমাবতীর অনুতাপ কে লঘু করলেন এবং বোঝালেন, তিনি কখনও মহাদেবের পূর্ণধ্বংস করতে পারবেন না। দেবী তার অস্তিত্ব কে কেবল অস্বীকার করেছে মাত্র, তাই তিনি বিধবা, তবে মহাদেব তার মধ্যেই নিহিত আছেন। জন্ম মৃত্যু একটা ভ্রম মাত্র। মহাকাল এবং মহাকালী এই ভ্রমের ঊর্ধ্বে। মহাকাল ও মহাকালী পরস্পরের পরিপূরক। তিনি শিবের ধ্বংস করেননি, পরন্তু শিবের নবজন্ম দিচ্ছেন দেবী।

এরূপ স্তোকবাক‍্যে শান্ত হয়ে দেবী তার জঠরের সকল শক্তি কে ঊর্ধগামী করলেন। সেই ঊর্ধগামী স্রোতে আবির্ভূত হলেন দেবাদিদেব মহাদেব।

ভগবান শঙ্কর দেবী পার্বতীকে বললেন —
তোমার সুন্দর চেহারাখানা ধোঁয়ায় ঢেকে যাওয়ায় তোমাকে ধূমাবতী বা ধূম্রা বলে ডাকা হবে।

ধূমাবতী দীর্ঘকায়া। লম্বিত কুচদ্বয়শোভিতা। ভীষণ দন্তরাশিযুক্ত মুখমণ্ডল ভয়াবহ। ধুম্রবর্ণা কুটিলনয়না সর্বদা ক্ষুধাতুরা শীর্ণকায়া দেবী ধুম্রাচ্ছন্ন মলিনবসন পরিহিতা অবস্থায় শূর্পহস্তে কাকধ্বজ রথে আসীনা।

দশমহাবিদ্যার মধ্যে একমাত্র তিনিই ভৈরবরহিতা। স্বয়ংসম্পূর্ণা। মা ধূমাবতী মহাশক্তি একলা এবং তিনি স্বয়ং নিয়ন্ত্রিতা। তার কোনও স্বামী বা প্ৰভু নেই। এইজন্য তাকে বিধবাররূপে কল্পনা করা হয়।

দুর্গাসপ্তশতী অনুসারে ইনিই সেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে —
“যে আমাকে যুদ্ধে পরাস্ত করে আমার গর্ব চূৰ্ণ করবে, সেই আমার পতি হবে। সেই প্রতিজ্ঞা কেউ ভাঙ্গতে পারেনি, তাই তিনি কুমারী। ধন বা পতি না থাকাতে অথবা নিজের স্বামী মহাদেবকে গিলে ফেলায় ইনি বিধবা ।

নারদপাঞ্চরাত্র অনুযায়ী ইনি নিজ শরীর থেকে দেবী উগ্ৰচণ্ডিকাকে প্রকাশিত করেছিলেন যিনি শত শত শকুনের মত আওয়াজ করতেন। শিবকে গিলে ফেলার অর্থ হল তার স্বামীত্বকে অস্বীকার। অসুরদের কাঁচামাংসে তার অঙ্গভূত শৃগালেরা তৃপ্ত হল, এটাই হল এর ক্ষুধার তত্ত্ব।

ধোঁয়ারূপে ইনি বিবর্ণা, চঞ্চলা, কৃষ্ণবর্ণা, অপরিচ্ছন্ন বস্ত্রপরিহিতা, মুক্তকেশী, বিধবা, কাকধ্বজ চিহ্নিত রথারূঢ়া, হাতে কুলা, ক্ষুধাপিপাসায় ব্যাকুল মুখ, চােখ দুটি নির্মম দৃষ্টিদায়িনী।

স্বতন্ত্রতন্ত্র অনুসারে সতীদেবী যখন দক্ষযজ্ঞে যোগাগ্নিতে নিজেকে ভস্মীভূত করেছিলেন, তখন সেই অগ্নি থেকে যে ধোঁয়া বেরিয়েছিল তার থেকেই ধূমাবতী বিগ্রহ প্রকট হয়েছিলেন।

দেবীধূমাবতীর উপাসনা — বিপদনাশ, রোগমুক্তি, যুদ্ধজয়, উচাটন ও মারণাদি কর্মে সিদ্ধিলাভ এর জন্য করা হয়।

শাক্তপ্রমোদে বর্ণনা আছে যে এর উপাসকের উপর অশুভ, ক্ষতিকর ক্রিয়ার কোনও প্রভাব পড়েনা।

সব রোগ, দুঃখের অধিপতি হচ্ছেন চার দেবতা। জ্বর, উন্মাদ ও প্রদাহ হয় রূদ্রেরকোপে, মূর্চ্ছা, বিকলাঙ্গতা যমের কোপে, ধূলি (ধূসরতা-রূক্ষ- কৰ্কশতা) গ্রন্থিরোগ (গাটঁফোলা) শক্তিলোপ বা কোন অঙ্গ অবশ হয়ে যাওয়া-পক্ষাঘাত এবং শোক, কলহ, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ইত্যাদি নির্ধতির কোপের দরুন হয়।

শতপথব্রাহ্মন অনুসারে ধূমাবতী ও নির্ধতি একই। ইনি লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা, তাই জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রে জন্মান মানুষ আজীবন দুঃখভোগ করে।

তন্ত্রগ্রন্থ অনুসারে ধূমাবতী আর উগ্ৰতারা একই, ধূম্রা হওয়ার জন্য ধূমাবতী নাম।

শ্ৰীশ্ৰীচণ্ডীতে বাভ্রবী ও তামসী নামে এর ব্যাখা আছে। ইনি তুষ্ট হলে রোগ এবং শোক নাশ করেন আর কুপিত হলে সমস্ত সুখ ঐশ্বর্য এবং ঈপ্সিত বস্তু নষ্ট করে দেন। এর শরনাগতি নিলে বিপত্তিনাশ এবং সম্পত্তি প্রাপ্তি হয়।

ঋগ্বেদের রাত্রিসূক্তে একে নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুতরা’। সুতরার অর্থ সুখপূর্বক তারণের উপযুক্ত। তাঁরা বা তারিনী এর পূৰ্বরূপ বলে মনে করা হয়। এইজন্য আগমশাস্ত্ৰে অভাব, সঙ্কটনাশ করে সুখদায়িনী বিভূতিরূপে ইনি।

ধূমাবতীর স্তব বন্দনা —

ঠং ঠং ঠং ঠং মনুপ্রীতিং ঠঃ ঠঃ মন্ত্রস্বরূপিণীম্ ।

থাং থীং থূং থেং মন্ত্ররূপাং থৈং থৌং থং থঃ স্বরূপিণীম্ ।

টণ্টণ্টণ্টণ্টটণ্টাণ্রকটটমটমা নাটঘণ্টাং বহন্তী ।

স্তব অনুযায়ী দেবী ধূমাবতী নাট্যনর্ত্তনাদি ললিতকলার এক অধিষ্ঠাত্রী দেবী।

নর্ত্তকীনটনপ্রীতাং নাট্যকর্মবিবর্দ্ধিনীম্ ।

আবার স্তবমন্ত্রে
“ফেত্কারিগণসংসেব্যাং সেবে ধূমাবতীমহম্” থেকে জানা যায় দেবী ধূমাবতী ফেৎকারীগণের দ্বারা সেবিতা।

মাতৃবন্দনার আদিপর্বের সেই ধূসর অতীতেরই সংসর্গ আছে দেবী ধূমাবতীর মধ্যে।

লোলম্মুণ্ডাগ্রমালা ললহলহলহা লোললোলাগ্রবাচং চর্বন্তীচণ্ডমুণ্ডং মটমটমটিতে চর্যষন্তী পুনাতু ॥

অর্থাৎ, ধূমাবতী চণ্ডমুণ্ডের অস্থি মটমট করে চর্বণ করেন।

ধূমাবতী মাতৃকা উপাসকদের কাছে সেই বিপদহারিণী মাতৃকা; যিনি একাধারে শত্রুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সর্বদা ক্রূরকুটিলা ভীষণা আবার স্বভূমির ললিতকলার প্রধান রক্ষয়িত্রী।

মা ধূমাবতী প্রণাম মন্ত্র —

ॐ বিবর্ণা চঞ্চলা রুষ্টা দীর্ঘা চ মলিনাম্বরা ।
বিব‍র্ণাকুন্তলা রুক্ষা বিধবা বিরলদ্বিজা ॥

.

জয় মা

.

(সংগৃহীত)TAKEN  FROM WHAT’SAPP

Published by SHRUTI ADHYA KUNDU

MARKETING OFFICER OF SYCN