|| অঙ্কন কথা || পর্ব – ৩

প্রকৃতির বিভিন্ন দৃশ্য আমরা ওইখানে বসে আঁকতে পারি অথবা তার একটি ফটোগ্রাফি করে সেটা দেখে অথবা তার প্রিন্ট আউট বের করে আমরা আঁকতে পারি বিভিন্ন মিডিয়ামে যেমন- প্যাস্টেল, ওয়াটার কালার, ওয়েল ইত্যাদি।

 

প্রকৃতির কিরকম দৃশ্য আমাদের বিষয় হিসাবে নেব?

 

সেটা যে কোন ল্যান্ডস্কেপ হতে পারে যেমন গ্রামের কোন দৃশ্য, নদী-পুকুর,শহরের কোন দৃশ্য যেখানে আমরা ভূমিটাকে বেশি প্রাধান্য দেব। তাছাড়া আমরা কোন প্রাকৃতিক দৃশ্য হিসাবেও বিষয় নিতে পারি যেমন – কোন চায়ের দোকান, মাছের বাজার, সবজি বাজার ইত্যাদি বিভিন্ন দৃশ্য আমরা নিতে পারি।

 

প্রকৃতিতে বসে ল্যান্ডস্কেপ আঁকতে গেলে আমরা কিভাবে বুঝব যে আমাদের কতটা জিনিস আমাদের আঁকতে হবে?

 

কোন জায়গায় বসে প্রকৃতিকে আঁকতে গেলে আমরা বেশিরভাগ পেন্সিল স্কেচ, ওয়াটার কালার, পেন ইত্যাদি মিডিয়াম ব্যবহার করে থাকি যাতে সেটা খুব তাড়াতাড়ি আঁকা যায়। তাই বলে এই নয় যে অন্য মিডিয়ামেও আমরা আঁকতে পারবো না, সকল মিডিয়ামে প্রকৃতিতে বসে আঁকা সম্ভব। যখন আমার একটা ল্যান্ডস্কেপ করতে বসবো তখন আমরা কতটা আঁকবো বুঝে উঠতে পারিনা, তখন আমারা একটা জিনিস ব্যবহার করতে পারি। একটা ছোট আয়তক্ষেত্র কাগজ তার মাঝখানটা আয়তক্ষেত্র অনুযায়ী কেটে নিয়ে একটা ফ্রেমের মতো বানিয়ে নিতে পারি যাতে তার মধ্য দিয়ে দেখা যায় এবং যখন আমরা কোন ল্যান্ডস্কেপ আঁকতে বসবো তখন আমরা ওই ফ্রেমের মত কাগজটি বাঁ চোখের কাছে নিয়ে আসলে আমরা একটি ল্যান্ডস্কেপের মাপ পেয়ে যাব যে আমাকে কতটা বাদ দিতে হবে বা কতটা রাখতে হবে।

 

প্রকৃতির কোন কম্পোজিশন ওখানে বসে আঁকা সম্ভব?

 

হ্যাঁ ওখানে বসে আঁকা সম্ভব, তবে এই ক্ষেত্রে যে মিডিয়াম সবচেয়ে বেশি তাড়াতাড়ি ব্যবহার করা যায় সেটি ব্যবহার করতে হবে। কারণ যখন আমরা কোন দৃশ্যকে আঁকছি যেমন কোন  বাজারের দৃশ্য, সেখানে মানুষজন সর্বদা চলাফেরা করছে তাই সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত আঁকা যায় সেরকম মিডিয়াম ব্যবহার করতে হবে। যেমন ওয়াটার কালার, পেন্সিল স্কেচ। তবে ফটোগ্রাফি করে বাড়িতে বসে কাজ করলেও আমরা অনেকক্ষণ সময় দিয়ে সে কাজ করতে পারি বিভিন্ন মিডিয়ামে।

 

বাড়িতে বসে আমরা যেকোনো মিডিয়ামে আর কি আঁকতে পারি?

 

বাড়িতে বসে স্টিল লাইফ আঁকতে পারি। আমরা যে কোন ফুলের ফুলের টব, ফুলদানি, বিভিন্ন ধরনের ফল এবং আরো মজাদার বিভিন্ন ধরনের জিনিস আমরা একটা সুন্দর কম্পোজিশন অনুযায়ী সাজিয়ে সেটি দেখে স্টাডি করতে পারি। এবং সুন্দরভাবে রঙের সাহায্যে ফুটিয়ে তুলতে পারি।

 

তাড়াতাড়ি স্কেচ করার পদ্ধতি কি?

 

আমাদের ড্রয়িং এর স্পিড বা স্কেচ করার পদ্ধতি উন্নত করার জন্য আমরা আমাদের বাড়ির যারা যারা রয়েছেন বা বাইরে আমরা যাদের দেখতে পাচ্ছি যারা বসে আছে বা হাঁটাচলা করছে তাদের খুব শিগগিরই স্কেচ করার অভ্যাস করতে পারি। এর ফলে আমাদের হাতে ড্রয়িং খুব দ্রুত উন্নতি হবে।

 

।।ধন্যবাদ।।

[Content subject to copyright.]

Written by Bachchu Chanda (Master’s of Fine Art, Kolkata)

 

|| অঙ্কন কথা || পর্ব – ২

এই পর্ব আমাদের Intermediate চিত্রশিল্পী বা শিক্ষার্থীদের জন্য যারা প্যাস্টেল, ওয়াটার কালারের সাথে পরিচিত। আমরা যখন আঁকা শিখি, তখন আমাদের বাড়ির কাছাকাছি যে সব শিক্ষকরা আছেন তারা বিভিন্ন ড্রয়িং বই থেকে বিভিন্ন সিনারী আঁকতে দেন। আমরা সেটা থেকেই কপি করে থাকি। এটা শুরুতে ড্রয়িং শেখার জন্য ঠিক আছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রতিনিয়ত কপি করা একটা ভুল পদ্ধতি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন হয়। যে শিল্পীর বইটা থেকে আমরা কপি করছি তার সিনারী বা কম্পোজিশন, দেখার দৃষ্টিভঙ্গি, কালার, কন্সেপ্ট আলাদা। সেই শিল্পীও একটা প্রকৃতির কোন দৃশ্যকে সেখানে বসে বা তার ফটোগ্রাফী করে কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে তিনি ওই প্রকৃতি কে তার চোখে তিনি যেভাবে দেখছেন সেভাবেই একেছেন। তাই আপনি দেখবেন বিভিন্ন বই এ বিভিন্ন শিল্পীর কাজ ও ড্রয়িং ভিন্ন, অতএব ওটা ওনাদের একজনের নিজস্ব শৈলী। সেটা দেখে কপি করলে আমরা নিজে কিছু শিখতে পারব না। কারণ তিনি সেখানে তার ড্রয়িং তার কালার তিনি করে সবকিছু করে দিয়েছেন। সেটা দেখে আঁকলে আমরা তাকে কপি করছি, তার কাজের স্টাইল আমারা অভ্যাস করে ফেলেছি। ফলে আমরা আমাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলব এবং আমারা নতুন কিছু ভাবতে বা দেখতে পারবো না। ছবি আঁকা শেখার জন্য আমরা বিভিন্ন বড় বড় শিল্পীর কাজ গাইড হিসাবে দেখতে পারি। কিন্ত সেটা থেকে সবসময় হুবুহ কপি করার চেষ্টা করতে পারি না। হ্যা হয়ত কোন সময় একটু তার কাজ দেখে করতে ইচ্ছে করছে সেক্ষত্রে আপনি করতেই পারেন, তবে প্রতিনিয়ত না। সে ক্ষেত্রে আমরা যেটা করতে পারি সেটা হল আমরা কোন বাইরের দৃশ্য দেখে সেখানে বসে বা ফটোগ্রাফি করে সেটা দেখে ড্রয়িং ও কালার করতে পারি। এরফলে যে কাজটা তৈরি হবে সেটা হবে সম্পূর্ণ আমার নিজস্ব শৈলী। ফলে ধীরে ধীরে আমরা নিজেই প্রকৃতির রঙ, তার ড্রইয়িং এর সাথে পরিচিত হব। তার ফলে যেটা সৃষ্টি হবে সেটা সম্পূর্ন আপনার নিজস্ব একটা কাজ। একটা ছবি। এবং সেটা হবে অদ্বিতীয়।

Writing by Bachchu Chanda (Masters of Fine Art, kolkata)n

[Content subject to copyright.]

 

**প্রকৃতির কি কি জিনিস আমরা কিভাবে আঁকব সেটা পরবর্তী পর্বে আলোচনা করবো।

 

।। অঙ্কন কথা ।। – পর্ব -১

ছবি আঁকা মানে সর্বদা এই নয় যে একটা খুব পরিপাটি সুন্দর জিনিসই আঁকতে হবে। অনেকেই মনে করেন পেইন্টিং মনে সুন্দর দৃশ্য, সুন্দর মুখ। সেটা সবসময় নাও হতে পারে। আপনি পৃথিবীটাকে কিভাবে দেখছেন, তার ভিত্তিতেও কাজে পরিবর্তন আসতে পারে। প্রাথমিক পর্বে আমরা সকলেই সুন্দর ভাবে ড্রয়িং, ছবি শিখি বা করি। আমি শুধু আর্ট কলেজের স্টুডেন্টদের কথা বলছি না যারা এখনও স্কুল জীবনে আছেন এবং ছবি আঁকেন তাদেরও বলছি। ছবি মানে একটা শিল্প একটা সৃষ্টি। ছবির মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু প্রকাশ করতে পারি, একটা নতুন সৃষ্টি করতে পারি, যেটা হবে সবার থেকে আলাদা। তাই আমি নিজে নতুন কি সৃষ্টি করলাম সেটাই সর্বদা মাথায় রাখতে হবে। আমরা এতদিন যাবৎ যে যে বিষয় বা বস্তু এঁকেছি বা শিখেছি সেই সব অবজেক্ট এর সাথে মনের ভাব একত্রিত করে নতুন কিছু একটা সৃষ্টি করা, সেখানে বিভিন্ন শিল্পীর বিষয় ও চিন্তা ভাবনা ভিন্ন হবে। অর্থাৎ কবি বা সাহিত্যিক তাঁর জীবনের গল্প বা বাস্তবিক জীবনের প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ, আনন্দ, দুঃখ, সবকিছু তার লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন, ঠিক সেই ভাবেই ছবিতেও আমরা আমাদের ভাব প্রকাশ করতে পারি। সেক্ষেত্রে প্রতিটি শিল্পীর বিষয়, ছবির লাইন, রং, সারফেস আলাদা আলাদা হতে পারে। অর্থাৎ আমি আমার কাজের মধ্যে যেটা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি, সেটার ড্রয়িং, রং, টেক্সচার কিরকম করলে ভালো হবে সেটা আপনার বিষয় ও চিন্তাভাবনার ওপর নির্ভর করবে। এমনকি আপনার পেন্সিল ড্রয়িং, প্যাস্টেল, ওয়াটার কালার এর কাজেও নিজস্ব শৈলী আনতে পারেন, শুধুমাত্র একটু অভ্যাসের দ্বারা। আপনি বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীর কাজও দেখতে পারেন, এবং তাদের কাজের বিষয় যদি আপনার চিন্তাভাবনার সাথে মেলে, তার কাজ থেকে আপনি অনুপ্রাণিত হতে পারেন এবং আপনি নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারেন। এরপর আপনি যেটা সৃষ্টি করবেন সেটা সম্পূর্ন আপনার নিজস্ব আর তখনই সেটা একটা প্রকৃত ছবি হয়ে ওঠবে।

।।পড়ার জন্য  অসংখ্য ধন্যবাদ।।

[Content subject to copyright.]

(Writer – Bachchu Chanda)

Masters of Fine Art, Kolkata