সুরেশচন্দ্রের গৃহে দেবসেবা ছিল ৷ পিতার ধর্মানুরাগ ও পরহিতাকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি সদগুণ সুরেশের মধ্যেও শৈশবকাল হইতে সংক্রমিত ছিল ৷ তাঁহাদের স্বগ্রামে বালিকাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতে এবং আরও নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁহার পিতা পল্লীর মধ্যে একজন অগ্রণী পুরুষ ছিলেন ৷ ইঁহারা কিছুকাল কলিকাতায় এবং পরে ঢাকায় বসবাস করেন ৷
সুরেশচন্দ্র শৈশব হইতেই তীক্ষ্ণধী ছিলেন, কিন্তু বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট পাঠ্যবিষয়ের প্রতি আদৌ তিনি মনোযোগী ছিলেন না ৷ খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং বালকোচিত চপলতা ও দুরন্তপনাতেই তাঁহার দিন কাটিয়া যাইত ৷ গাছে চড়া, সাঁতার কাটা, ফুটবল খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, ইত্যাদিতে তাঁহার বন্ধুদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বপ্রথম ৷ একবার ফুটবল খেলার শেষে, বাড়ি ফিরিবার পথে একটি বিষাক্ত সাপ দেখিয়া, অন্যান্য বালকেরা যখন ভয়ে চীৎকার করিতেছিল, সুরেশ তখন পরম আহ্লাদে জীবন্ত সাপটিকে লেজে ধরিয়া ঘুরাইতে ঘুরাইতে মৃতপ্রায় করিয়া দূরে বাগানের মধ্যে ছুঁড়িয়া দিয়াছিলেন ৷ অভয় ও বিনয় এবং পৌরুষ ও মাধুর্য তাঁহার মধ্যে সমভাবেই প্রকাশিত ছিল ৷
বৃদ্ধ পিতাকে সুরেশ ধর্মগ্রন্থাদি পাঠ করিয়া শুনাইতেন ৷ বালকের কণ্ঠও ছিল মিষ্ট ৷ তাই পিতাকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভজন গাহিয়া শোনানোও তাঁহার একটি নিত্যকর্তব্য ছিল ৷ পিতাকে শোনাইবার জন্য ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ উপদেশ’ তাঁহাকে পড়িতেই হইত ৷ উহাতে শ্রীরামকৃষ্ণ-উদাহৃত ‘সূর্যোদয়ের আগে তোলা মাখন’ কথাটি বালক সুরেশের মনে গভীর রেখাঙ্কন করিয়াছিল ৷ রোজই পিতার কাছে বসিয়া, শ্রীরামকৃষ্ণ-প্রসঙ্গ পড়িতে পড়িতে বালকের মনে জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি পরিচ্ছন্ন ধারণা দানা বাঁধিতে থাকে ৷ এই কালে স্বামী নিত্যানন্দ নামে স্বামীজীর একজন সন্ন্যাসী শিষ্যের সংস্পর্শেও বালক সুরেশের মনে জগতের অনিত্যতাবোধ আনয়ন করিতে অনেকখানি সহায়ক হইয়াছিল ৷ একটি স্বপ্ন-দর্শনের স্মৃতিও নাকি তাঁহাকে এইকালে খুব ত্যাগের পথে প্রেরণা দিয়াছিল ৷
- যাহা হউক, বালক সুরেশ একদিন সংসার ত্যাগের জন্য পিতার নিকট অনুমতি চাহিলেন ৷ বৃদ্ধ পিতা তো ইহা শুনিয়াই সুরেশকে প্রথমে খুব তিরস্কার করিলেন, পরে অনেক করিয়া বুঝাইয়া সংসারে ফিরাইবার জন্য বারবার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু ফল কিছুই হয় নাই ৷ ১৯০০ খ্রীস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের কোন সময়ে এক গভীর রাত্রিতে সুরেশ সকলের অজ্ঞাতসারে, গৃহত্যাগ করিয়া চলিয়া যান ৷ সুরেশ খুঁজিয়া খুঁজিয়া অবশেষে বেলুড় মঠেই আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিলেন ৷
( চলবে )
((সংগৃহীত)) PUBLISHED BY SHRUTI ADHYA KUNDU MARKETING OFFICER OF SYCN.